এনআরসিতে মানুষকে অধিকার দেবে না। কিন্তু ভোটে জেতার জন্য টাকা সাপ্লাই করবে। এটা আসলে বিজেপির ‘খুড়োর কল’। সোমবার কোচবিহার থেকে ঠিক এই ভাষাতেই এনআরসি ও প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব বিল নিয়ে কেন্দ্রের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবারও এ নিয়ে কেন্দ্রকে বিঁধে তিনি বললেন, ‘আসলে এ সবই ফাঁদ। প্রথমে ৬ বছরের জন্য নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হবে। সমস্ত সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত। তারপর দয়া হলে মিলবে নাগরিকত্ব।’
প্রসঙ্গত, এনআরসি এই রাজ্যে নৈব নৈব চ। গত কয়েক মাস ধরে বারবার এহেন প্রত্যয়ী সঙ্কল্পের কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে এবার গেরুয়া শিবিরের জন্য মমতার আরেক হুঙ্কার, এই বাংলায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলও তিনি লাগু করতে দেবেন না। তাঁর কথায়, এনআরসির ভয়াবহতা আর ভিটেমাটি উচ্ছেদ হওয়ার সম্ভাবনা আসামে স্পষ্ট হয়েছে হিন্দুদের কাছেও। সন্ত্রস্ত হিন্দুদের ক্ষোভ বাড়ছে। সেই ক্ষোভকে বিপথে চালিত করতে এখন নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সংসদের চলতি শীতকালীন অধিবেশনে পাশ করানোর মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে কেন্দ্র।
এনআরসি নিয়ে তাঁর অবস্থান যেমন স্পষ্ট, তেমনই নাগরিকত্ব সংশোধনী নিয়ে নিজের মনোভাব মঙ্গলবার সাফ করে দিয়েছেন মমতা। জানিয়েছেন, কোনও অবস্থাতেই এ রাজ্যে ওই বিল কার্যকর করতে দেবেন না। গতকাল দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এনআরসি হবে না, নাগরিকত্ব সংশোধনীও হবে না। কেন ভয় পাচ্ছেন? হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, রাজবংশী, কামতাপুরি সহ বাংলায় যাঁরা থাকেন, তাঁরা সবাই নাগরিক। কোনও ভেদাভেদ এখানে চলবে না। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যই বাংলার সম্পদ।’
সেইসঙ্গে নাম না করে গেরুয়া শিবিরকে মুখ্যমন্ত্রীর কটাক্ষ, কেউ কেউ নাগরিকত্ব সংশোধনীর নামে কোথাও সংখ্যালঘু বা রাজবংশীদের ভয় দেখাচ্ছে, কোথাও ভয় দেখাচ্ছে তফসিলি জাতির লোকজন ও হিন্দু উদ্বাস্তুদের। যদি হিন্দু উদ্বাস্তুদের ওপর এতই দরদ, তবে কেন আসামে নাগরিক তালিকা বাদ গেল এক লক্ষ হিন্দিভাষীর নাম আর কেনই বা এনআরসিতে ঠাঁই হল না এক লক্ষ গোর্খা ভাই-বোনের। মতারর সাফ কথা, আসলে এসবই ফাঁদ। প্রথমে ৬ বছরের জন্য নাগরিকত্ব কেড়ে সমস্ত সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হবে। তারপর দয়া হলে মিলবে নাগরিকত্ব। এখানে করতেই দেব না নাগরিকত্ব সংশোধনী।
গঙ্গরামপুরের সভা সেরে মালদায় পৌঁছেই ফের বিকেল পাঁচটা নাগাদ রথবাড়ি মোড়ের দুর্গাকিঙ্কর অডিটোরিয়ামে এই জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে পর্যালোচনা বৈঠকে বসেন মমতা। মালদার বিভিন্ন প্রান্তে ‘ঝাড়খণ্ড দিশম পার্টি’র পতাকা নিয়ে যখন-তখন পথ অবরোধ চলতে থাকার ক্রমবর্ধমান ঘটনায় ক্ষোভ ব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, গত তিন বছর ধরে লাগাতার এসব চলছে। একটা বিশেষ পার্টির মদতে ঝাড়খণ্ডের অর্থ আর মুষ্টিমেয় লোকজনের মাধ্যমে মালদায় অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। আদিবাসী ভাই-বোনকে নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে।
এরপরই রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র এবং নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুরজিৎ কর পুরকায়স্থকে তাঁর নির্দেশ, সিআইডি, এসটিএফ এবং এনফোর্সমেন্টকে কাজে লাগান। কারা এসবের নেপথ্যে রয়েছে আর কারাই বা বাইরে থেকে মদত দিচ্ছে, খুঁজে বের করতেই হবে।