একদিকে যখন দেশ জুড়ে তথ্যসুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবিতে সরব হচ্ছেন মানুষ, তখন পেছনের দরজা দিয়ে দেশের সকল সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর ওপরে নজরদারি চালানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে মোদী সরকার। হ্যাঁ, জানা গেছে, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, স্কাইপ, ভাইবার-এর মতো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের মেসেজ আদান প্রদানে নজরদারি চালাতে আইন প্রণয়নের পথে কেন্দ্রীয় সরকার৷আজ অধিবেশনেও এই বিতর্ককে আরও উস্কে দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী কিষণ রেড্ডি। যা শুনে চিন্তার ভাঁজ নেটিজেনদের কপালে।
হোয়াটসঅ্যাপে আড়িপাতা নিয়ে আজ সংসদে বিরোধী আক্রমণের মুখে পড়ে ট্রেজারি বেঞ্চ। তবে এই প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী কিষণ রেড্ডি যা জানালেন, তা আরও আশঙ্কার বলে মনে করছে তথ্যাভিজ্ঞ মহলের একাংশ। হোয়াটসঅ্যাপকে ব্যবহার করে সরকার কি নজরদারি চালাচ্ছে?’ মঙ্গলবার এই ছিল এমডিএমকে সাংসদ এ গণেশমূর্তির প্রশ্ন। জবাবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিষণ রেড্ডি জানান, ‘তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৬৯ ধারা অনুযায়ী, যে কোনও নাগরিকের উপর নজরদারির অধিকার রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের।’
দিন কয়েক আগেই ইংল্যান্ডের সমীক্ষা সংস্থা কম্প্রিটেকের এক সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছিল, নাগরিকদের ওপর নজরদারি চালানোয় বিশ্বে তৃতীয় ভারত। তবে এবার আর দেশ নয়, বিদেশের মাটিতে বসেও ভারতের হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের ওপর আড়ি পাতার চেষ্টা হয়েছিল। খোদ হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষই এ কথা স্বীকার করে নিয়েছে। ২০টি দেশের প্রায় ১৪০০ ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্টে এমন ‘স্পাইওয়্যার’ ঢোকানোর চেষ্টা করেছিল ইজরায়েলের একটি সংস্থা। বিশেষ করে টার্গেট ছিল ভারতীয় সাংবাদিক, কূটনীতিক, পদস্থ সরকারি কর্তা ও মানবাধিকার সংগঠনের পদাধিকারীরা।
বিষয়টি সামনে আসার পর বিরোধী দলগুলি এ ব্যাপারে মোদী সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে বিরোধীরা। ফোনে আড়িপাতার অভিযোগে করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এবং এনসিপি নেতা প্রফুল্ল প্যাটেল। এই বিষয়ে মামলায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানায় সুপ্রিম কোর্টও।
শীর্ষ আদালতের তরফে বারবার গোপনীয়তার অধিকারকে সুরক্ষা দেওয়ার পরেও কেন কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এই ভাবে হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবারের মত সোশ্যাল সাইটে নজরদারি চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে? কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রকের এক উচ্চপদস্থ কর্তার দাবি, ‘পুরো বিষয়টির সঙ্গে দেশের নিরাপত্তা জড়িত রয়েছে৷ কেন্দ্রীয় সংস্থা অকারণে কারও ব্যক্তিগত মেসেজ পড়তে যাবে না, যদি না তার মধ্যে দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব সংক্রান্ত কোনও বিপজ্জনক মেসেজ না থাকে৷’ কিন্তু প্রশ্ন উঠছে সরকার সব মেসেজ না পড়লে কীভাবে বুঝবে কোনটি বিপজ্জনক আর কোনটি নয়? ফলে স্বাভাবিকভাবেই সরকারের এই প্রচেষ্টাকে ‘মারাত্মক’ আখ্যা দিচ্ছেন নেটিজেনরা। তাঁদের প্রায় সকলেরই বক্তব্য, সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকারের প্রশংসার সঙ্গে সমালোচনাও থাকে। সুস্থ গণতন্ত্রের জন্য এমনটাই কাম্য।