মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সময় ছিল সরকার গঠনের। এই সময়ের মধ্যেই সরকার গঠনের দাবি জানাতে হত এনসিপিকে। কিন্তু ঘণ্টা দুয়েক বাকি থাকতেই মহারাষ্ট্রে জারি হয়ে যায় রাষ্ট্রপতি শাসন। সব পক্ষকে সুযোগ না দিয়ে সাত তাড়াতাড়ি এই সিদ্ধান্তের জন্য এবার কেন্দ্রীয় সরকারকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে বিরোধীরা। তাঁদের মতে, কোনও নিয়ম-নীতি না মেনে সরাসরি ভারতীয় গণতন্ত্রের উপর আঘাত হেনেছে মোদী সরকার। আবার, রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে শিবসেনা। উদ্ধব ঠাকরের অভিযোগ, সরকার গঠনের জন্য বিজেপিকে তিন দিন সময় দিলেও তাঁদের মাত্র ২৪ ঘণ্টা দেওয়া হয়।
আসলে কারও খেয়ালখুশিতে বা রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে ৩৫৬ ধারার অপব্যবহার করা যায় না। চাইলেই কোনও রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করা যায় না। সংবিধান প্রণেতারা এই সব অনাচারের সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই এই ধারাটি তৈরি করেছিলেন। যাতে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন কোনও দল তার অন্যায় সুযোগ নিতে পারে। এই কথা স্পষ্ট বলা আছে ১৯৯৪ সালে এস আর বোম্মাই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায়ে।
এমনকী এও বলে দেওয়া আছে যে, ভারতের মতো এক বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কেন্দ্রে এবং রাজ্যে একই দল ক্ষমতায় না–ই থাকতে পারে। এবং দুটি দলের মধ্যে সুসম্পর্কও না থাকতে পারে। কাজেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যাতে সংবিধানের এই ধারার অপব্যবহার না হয়, সেটা নিশ্চিত করা আছে গোড়া থেকেই। নয় সদস্যের এক সাংবিধানিক বেঞ্চ এই রায় দিয়েছিল। ৩৫৬ ধারা জারি এবং রাষ্ট্রপতির শাসন সম্পর্কে যে কোনও বিতর্ক, বিবাদে যে রায় এখনও ‘শেষ কথা’ হিসেবে বিবেচিত।
ওই রায়ে বলা হয়েছে, উদ্দেশ্যমূলক ভাবে এই ধারা প্রয়োগ করা যায় না। বরং আদালতে পেশ করা প্রাসঙ্গিক প্রমাণ খতিয়ে দেখে ন্যায়সঙ্গত সাংবিধানিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এবং এই তথ্য–প্রমাণ রাজ্যপালের পেশ করা রিপোর্ট থেকেও যেমন নেওয়া যায়, তেমন অন্যান্য সূত্রেও সংগ্রহ করা যায়। বলা হয়েছে, একমাত্র সেই তথ্য–প্রমাণ সামনে থাকলে, তার ভিত্তিতেই রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে রাষ্ট্রপতি সবদিক বিচার করে সন্তুষ্ট হয়েই সিদ্ধান্ত নিলে সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনও তর্ক তোলা যাবে না।
রাষ্ট্রপতির এই সন্তুষ্টির বিষয়টিরও বিশদ ব্যাখ্যা দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের ওই সাংবিধানিক বেঞ্চ যে, রাষ্ট্রপতিকে ‘সন্তুষ্ট’ হতে হবে, সত্যিই ৩৫৬ ধারার প্রয়োগের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কাজেই তাঁর সামনে ঠিক সেরকম তথ্যই পেশ করতে হবে, যা একজন যুক্তিনির্ভর, বিচক্ষণ মানুষকে সেই সিদ্ধান্ত নিতে আশ্বস্ত করে। কিন্তু এটা কখনও ব্যক্তি মানুষের সন্তুষ্টির প্রশ্ন নয়। কাজেই রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত প্রশ্নাতীত হলেও, যে যুক্তিতে এবং যে সমস্ত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তার সারবত্তা বা যৌক্তিকতা নিয়ে আইনি প্রশ্ন অবশ্যই তোলা যেতে পারে।
কোন কোন পরিস্থিতিতে একটি রাজ্যে ৩৫৬ ধারা জারি করা যায়, তাও আলোচিত হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের ওই রায়ে। তার মধ্যে অন্যতম, যখন রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠের সরকার নেই। তিনটি ক্ষেত্রে তেমনটা হতে পারে। যখন কোনও দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় না, অর্থাৎ ত্রিশঙ্কু বিধানসভা হয়। অথবা যখন একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দলটি সরকার গড়তে ব্যর্থ হয় এবং রাজ্যপাল কোনও দ্বিতীয় দলকে পান না, যারা একক গরিষ্ঠ দলটির সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার গড়তে পারে। অথবা, ক্ষমতাসীন দল ইস্তফা দেয় এবং অন্য কোনও দল বা জোট সরকার গড়তে পারে না বা চায় না। অর্থাৎ এক্ষেত্রে বিরোধীদের অভিযোগ যে ভ্রান্ত নয়, তা বলাই বাহুল্য।