মাসখানেক আগেই উপনির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করে দিয়েছে কমিশন। আর তারপরে বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করেই খড়গপুরে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে পুরোদস্তুর নির্বাচনী প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। কংগ্রেস ও বামসমর্থিত প্রার্থীর নামও ঘোষণা হয়ে গেছে। কিন্তু এই আসনে দলের তরফে প্রার্থীর নাম ঘোষণা হতেই বিজেপির অন্দরে শুরু হয়ে গিয়েছিল জোর গোষ্ঠীকোন্দল। তবে এবার সেই কোন্দল এতটাই প্রবল রূপ নিল যে শেষমেশ আর নিশ্চিন্ত থাকতে দিল না খড়গপুর।
লোকসভা ভোটে খড়গপুর বিধানসভা কেন্দ্র তাদের ‘লিড’ দিয়েছিল ৪৫ হাজারেরও বেশি ভোটে। এই খড়গপুর থেকে সাড়ে তিন বছর আগে জিতেই দিলীপ ঘোষ বিধায়ক হন। তিনি হারিয়েছিলেন ওই কেন্দ্র থেকে ১০ বার জেতা, ‘চাচা’ জ্ঞানসিং সোহনপালকে। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের খাস তালুক এই খড়গপুরে উপ-নির্বাচন বিজেপির কাছে ‘প্রেস্টিজ ফাইট’! কিন্তু রোজ যে ভাবে দলের বিক্ষুব্ধরা কলকাতায় এসে উপ-নির্বাচনের দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নালিশ ঠুকছেন, তাতে বিজেপি নেতৃত্বের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ ক্রমশ চওড়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ৩ বিধানসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা হওয়ার পরেই কলকাতায় ছুটে এসেছিলেন খড়গপুরের বেশ কয়েকটি মণ্ডলের নেতা। প্রার্থী যে তাঁদের মনের মতো হয়নি, সে কথা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তাঁরা জানিয়ে গিয়েছিলেন দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে। শুধু তাই নয়, প্রার্থীর নাম ঘোষণা হওয়ার এতদিন পরেও কেন্দ্রীয় স্তরের বহু নেতাকে ফোন করে খড়গপুরের দলীয় প্রার্থী প্রেমচাঁদ ঝাকে নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করছেন বিজেপির জেলা স্তরের বহু নেতা।
কোনও ভোটে প্রার্থীকে নিয়ে দক্ষিণপন্থী দলের অন্দরে ক্ষোভ-বিক্ষোভ নতুন কিছু নয়। কিন্তু খড়গপুর বিধানসভা উপ-নির্বাচনের প্রার্থীকে নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ যে ভাবে রণং দেহি হয়ে আছেন, তা যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দলীয় সূত্রের খবর, অন্য যে দু’টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপ-নির্বাচন হচ্ছে, সেখানকার সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দিল্লীতে একাধিক নাম পাঠানো হয়েছিল। অথচ খড়গপুরের ক্ষেত্রে শুধু প্রেমচাঁদ ঝায়ের নামই দিল্লীতে পাঠিয়েছিলেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ। অন্য কারও নামই তিনি গ্রাহ্য করেননি।
রাজ্য বিজেপির এক শীর্ষনেতার কথায়, ‘প্রেমচাঁদ ছাড়াও টিকিটের দাবিদার ছিলেন আরও পাঁচ জন। কিন্তু দিলীপদা আর কারও নাম পাঠাতে রাজি হননি। প্রেমচাঁদের সঙ্গে আরও দু’-এক জনের নাম পাঠিয়ে দিলে পরিস্থিতি অন্য রকম হতে পারত।’ খোদ দিলীপ ঘোষ অবশ্য বলছেন, ‘সবাই জানে, খড়্গপুরে বিজেপির টিকিটে যে লড়বে, সে-ই বিধায়ক হবে। তাই অনেকেই লড়তে চেয়েছিলেন। এখন কোনও সমস্যা নেই। সব মিটে গিয়েছে। নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে সব ঠিক করে নেওয়া হয়েছে। খড়্গপুরে আমাদের প্রেস্টিজ থাকবে।’ তবে, খড়গপুরে অন্যান্য দলের প্রার্থীরা যখন কোমর বেধে প্রচারে নেমেছেন, বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব যে তখন দলের মধ্যেই প্রার্থীর জন্য সমর্থন আদায়ে ব্যস্ত, তা চোখ এড়াচ্ছে না কারও।