এই দুনিয়ায় প্রত্যেকেই বাঁচার জন্য, নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে চলেছে। ঠিক যেমনটি প্রতিনিয়ত করে চলেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্ক অনার্সের ছাত্রী রাখি পোদ্দার। লড়াই করছেন তাঁর মা প্রতিমা পোদ্দারও, যিনি পেশায় মিনিবাস ড্রাইভার।
পড়াশোনায় বেশ উজ্জ্বল রাখি খেলাধুলাতেও খুবই দক্ষ। সম্প্রতি জলন্ধরে আয়োজিত জাতীয় ইন্টার ইউনিভার্সিটি ওয়াটার স্পোর্টস টুর্নামেন্টে ডাইভিংয়ে দুটি পদক জিতে এসেছেন তিনি। কিন্তু দারিদ্র্যের জ্বালা প্রতিনিয়ত ছারখার করে দিচ্ছে দুর্দান্ত ডাইভার হওয়ার স্বপ্ন দুচোখে বয়ে বেড়ানো রাখিকে। রাখির বাড়ি হাওড়ার নিমতায়। মা প্রতিমা পোদ্দার পেশায় মিনিবাস ড্রাইভার। বাবা বাসের কন্ডাক্টর। পরিবারে অভাব অনটন লেগেই আছে। কিন্তু মেয়েকে স্বনামধন্য ক্রীড়াবিদ বানানোর অদম্য ইচ্ছায় অনটনকে হারানোর লক্ষ্যে লড়াই করে যাচ্ছেন প্রতিমা।
সেই কারণেই প্রতিমা স্বামীর পাশে দাঁড়িয়ে কখনও চালিয়েছেন অ্যাম্বুলেন্স, কখনও বা ট্যাক্সি। আর এখন প্রতিমা মিনিবাস চালক। গোটা ভারতে আর কজন নারী বাস ড্রাইভিং করেন, তা হাতে গুনে বলে দেওয়া সম্ভব। তবু একটা ‘পুরুষ সুলভ’ কাজই অবলীলায় করে যাচ্ছেন প্রতিমা। সংসারের পাশাপাশি তুলে নিয়েছেন মিনিবাসের স্টিয়ারিংও। এর সবই মেয়ের ভবিষ্যতের দিকে চেয়ে।
এত গেল মায়ের লড়াইয়ের গল্প। মেয়ে রাখির গল্পও কম আকর্ষণীয় নয়। পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে খেলাধুলাতেও ছোট থেকেই প্রবল আকর্ষণ তাঁর। একসময় জিমন্যাস্টিক করতেন। এখন ডাইভিং। প্রতিদিন সকালে নিমতা থেকে হেঁদুয়ায় এসে ডাইভিংয়ের প্রশিক্ষণ নেন। সেখান থেকেই তারপর চলে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। যাদবপুরের ক্লাস যখন শেষ হয়, তখন রাখির শরীর একেবারেই অবসন্ন। ক্লান্ত শরীরকেই টেনে নিয়ে ভিড় ট্রেন চেপে ফিরে যান নিমতার বাড়িতে। এটাই রোজনামচা রাখি ও তাঁর মা প্রতিমার। না রাখি কিন্তু পোদ্দার দম্পতির একমাত্র সন্তান নয়। এখন রাখির লক্ষ্য একটি চাকরি পাওয়া।
এদিন রাখি বলছিলেন, ‘আমার একটা চাকরির খুব দরকার। কিন্তু রেলে আর নাকি ডাইভার নেয় না। অনেকে নাকি চাকরি পেয়ে খেলা ছেড়ে দিচ্ছে। কিন্তু আমি চাকরিটা পেলে বাবা-মা একটু বিশ্রাম পাবে। আমিও নিশ্চিন্তে খেলায় মন দিতে পারব। কিন্তু কেউ চাকরি দিচ্ছে না’। তবে চাকরি না পেলেও, হাল ছাড়তে রাজি নন রাখি।