রাজনীতির ময়দানে কে কখন বন্ধু বা কে কখন শত্রু হয়ে যায় সেই অঙ্ক বড়ই কঠিন। আর তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হল শিবসেনা। মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন করতে না পারলেও সোমবার শিবসেনার বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ, এনসিপি-কংগ্রেসের কাছে সমর্থনের আবেদন দেখে অনেকে অবাক হয়েছেন। তবে অবাক হওয়ার খুব কিছু নেই, রাজনৈতিক এবং আদর্শগত বিরোধিতাকে দূরে সরিয়ে রেখে শুধু কংগ্রেস বা এনসিপিকে সমর্থন নয়, মুসলিম লিগের সঙ্গে পর্যন্ত জোট করেছে তাঁরা।
১৯৬৬ সালে শিবসেনা গঠন করেছিলেন বাল ঠাকরে। বিজেপির সঙ্গে প্রায় ২৫ বছর জোট ছিল তাদের। পাশাপাশি, প্রকাশ্যে এবং গোপনে কংগ্রেসের সঙ্গে শিবসেনার সম্পর্কের বয়সও পাঁচ দশকের বেশি। শিবসেনার প্রথম জনসভায় উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের কংগ্রেস শীর্ষ নেতা রামরাও আদিক। খ্যাতনামা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ সুহাল পালশিকর একটি সাময়িকীতে এব্যাপারে লিখেছেন।
‘দ্য কাজিনস ঠাকরে- উদ্ধব অ্যান্ড রাজ অ্যান্ড ইন দ্য শ্যাডো অব দেয়ার সেনা’ বইটির লেখক ধবল কুলকার্নিও জানিয়েছেন, ছয় ও সাতের দশকে শহরে শ্রমিক ইউনিয়নগুলিতে বামেদের প্রভাব কমাতে শিবসেনাকে ব্যবহার করত কংগ্রেস। ১৯৭১ সালে কংগ্রেস (ও)-এর সঙ্গে জোট করে লোকসভা ভোটে ৩ কেন্দ্রে প্রার্থী দিয়ে পরাজিত হয় তারা। ১৯৭৭ সালে জরুরি অবস্থাকে সমর্থন জানিয়ে সেবছরের লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থীও দেয়নি বালাসাহেবের দল। ওই বছরই মেয়র নির্বাচনে কংগ্রেসের মুরলি দেওরাকে সমর্থনও দেয় তারা।
১৯৭৮ সালে জনতা পার্টির সঙ্গে জোটের চেষ্টা ব্যর্থ হলে ইন্দিরা কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলায় তারা। সেবার ইন্দিরাবিরোধী হওয়ায় বিধানসভা ভোটে শিবসেনার সমস্ত প্রার্থীই হেরে যায়। ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পর কংগ্রেস-সেনার এই সম্পর্ক ভেঙে যায়। এরপর থেকেই ঘোরতর হিন্দুত্বের দিকে সরে যান থ্যাকারে। কিন্তু, তারপরেও এনডিএ-তে থাকার সময়ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী প্রতিভা পাটিল এবং প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থন দিয়েছিল শিবসেনা।
১৯৭০ সালে মুম্বইয়ের মেয়র নির্বাচনের সময় মুসলিম লিগের সঙ্গেও জোট করেছিল হিন্দুত্ববাদী শিবসেনা। সেবার দক্ষিণ মুম্বইয়ে মুসলিম লিগ নেতা জি এম বানটওয়ালার সঙ্গে একই মঞ্চে হাজির হয়েছিলেন স্বয়ং বালাসাহেব। একইভাবে ১৯৬৮ সালে মধু দন্ডবতের প্রজা সোশ্যালিস্ট পার্টির সঙ্গেও হাত মিলিয়েছিল শিবসেনা।