রাশ আলগা হচ্ছে মোদী সরকারের। কেন্দ্রীয় সরকারের দুই মন্ত্রকই লেগে গেল একে অপরের সঙ্গে । এমনকি তা গড়াল আদালত পর্যন্ত। একজনের সিদ্ধান্ত বাতিল করার আর্জি জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে আরেকজন। দ্বন্দ্বটা লেগেছে অর্থ মন্ত্রকের অধীনস্থ আয়কর দফতর ও বাণিজ্য মন্ত্রকের আরওসি (রেজিস্ট্রার অফ কোম্পানিজ) এবং সেবি (সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া)-র মধ্যে।
এক সরকারের দুই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক, তাদের মধ্যে লড়াই! কী নিয়ে? প্রথম মোদী সরকারের আমলে, অরুণ জেটলি অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন একাধিক বেআইনি বা ভুয়ো সংস্থার রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হয়। এইসব সংস্থার মাধ্যমে কালো টাকা বাজারে ঘোরানো হয়, সাদা করা হয় সেই টাকা। এমনটাই দাবি ছিল সরকারের। বেআইনি আর্থিক লেনদেন ও কালো টাকার বিরুদ্ধে সরকারের জিহাদের এইটাও ছিল অন্যতম একটি পদক্ষেপ। কখনও সেবি, কখনও আরওসি- র মাধ্যমে ভুয়ো সংস্থার রেজিস্ট্রেশন বাতিলের এই প্রক্রিয়া চালানো হয়।
সমস্যার শুরু এরপর থেকেই। আয়কর দফতরের হিসেবে এই সব সংস্থা যখন বর্তমান ছিল, তখন প্রচুর কর বকেয়া রয়ে গিয়েছে। এখন সেইসব বকেয়া কর আদায় করতে হবে। তাই যে সংস্থাগুলি কর দেয়নি, অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। কিংবা আয়কর দফতর যে ওই সংস্থাগুলির কাছে কর চেয়েও পায়নি, সেইটা খাতায় কলমে উল্লেখ রাখতে হবে। এইটাই নিয়ম। এবার সেই নিয়ম পালন করতে গিয়েই বিপত্তি বেঁধেছে। আয়কর আদায় করতে গিয়ে গোয়েন্দারা বোঝেন যে বাতিলের তালিকায় চলে গেছে এরকম প্রচুর সংস্থা। এদিকে, সরকারি নিয়ম তো পালন করতেই হবে! উপায়?
এরপরই আয়কর দফতরের কর্তারা ঠিক করেন কালো তালিকাভুক্ত বেশ কিছু সংস্থা, যাদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল হয়ে গিয়েছে, তাদেরকে ফের সচল করতে ন্যাশনাল কোম্পানি ল’ ট্রাইব্যুনালের দ্বারস্থ হবেন। সেইমতো আর্জিও জমা পড়েছে ট্রাইব্যুনালের কাছে। এখন দুই মন্ত্রকের এই ‘ দ্বৈরথ’কে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা সমন্বয়ের অভাব বলেই মনে করছেন। কারণ একাধিক বাণিজ্যিক সংস্থার রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে দেওয়ার পর, আবার সেইগুলিকে সচল করার দাবি জানিয়ে আদালতের কাছে যাওয়ার ঘটনা ‘অত্যন্ত বিরল’ বলেই মনে করছেন তারা।
আয়কর কর্তাদের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল, শুনানির জন্য আদালতের সমন ঠিকঠাক সংস্থা বা তার কর্মকর্তাদের ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া। কারণ শুনানি না হলে মামলার নিষ্পত্তি হবে না। অথচ এই সমস্ত সংস্থার ‘বৈশিষ্ট্য’-এর মধ্যে এটাও অন্যতম যে, এদের কার্যকলাপের মতো এদের কর্মকর্তাদের ঠিকানাও অনেক সময়েই ভুয়ো হয়। আপাতত তাই শুনানি শুরু করতেই কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে আয়কর দফতরের তাবড় গোয়েন্দাদের।