বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে মোদী সরকারের বাজেটে যেমন তেমন কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি। ঠিক তেমনই চাহিদার মানোন্নয়নেও কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে পারেনি কেন্দ্র। আর এই দুই কারণেই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে ভারতের শিল্প সংস্থাগুলোকে। চাপের মুখে কেন্দ্র এখন পদক্ষেপ করার কথা ঘোষণা করলেও একের পর এক পরিসংখ্যান ক্রমাগত চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে যাচ্ছে কমে যাওয়া তো অনেক দূরের কথা, দিনকে দিন যেন আরও জাঁকিয়ে বসছে অর্থনীতির ‘অসুখ’। সোমবারও ছিল তেমনই এক বাস্তব উপলব্ধির দিন।
এবার খোদ সরকারি পরিসংখ্যান জানাল, আগস্টের মতো সেপ্টেম্বরেও আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় সরসরি কমে গিয়েছে শিল্পোৎপাদন। তবে আগস্টের ১.৪ শতাংশের (সংশোধিত) থেকে সেই সঙ্কোচনের হার এবার আরও অনেক বেশি, ৪.৩ শতাংশ। আট বছরে সবচেয়ে খারাপ। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অর্থনীতির স্বাস্থ্য ভাল হওয়ার লক্ষণই নেই কোথাও। একই সঙ্গে তাদের প্রশ্ন, এখনও কী সরকার দাবি করে যাবে অর্থনীতি সঙ্কটে পড়েইনি?
প্রসঙ্গত, পরিসংখ্যান বলছে, উদ্বেগ আরও বাড়াচ্ছে শিল্পোৎপাদন সূচকের আওতায় থাকা প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্র। যেখানে লগ্নীতে খরা প্রকট করে ফের সঙ্কুচিত হয়েছে কল-কারখানায় উৎপাদন (ম্যানুফ্যাকচারিং)। বিশেষজ্ঞ সংস্থা ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ অ্যাপ্লায়েড ইকনমিক রিসার্চ (এনসিএইআর) তাদের সমীক্ষা রিপোর্টে জানিয়েছে, এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকের তুলনায় জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে দেশে বিভিন্ন শিল্প ও ব্যবসায়িক সংস্থাগুলির অর্থনীতি নিয়ে আশা-ভরসা অনেক কমে গিয়েছে।
এনসিএইআর-এর বিজনেস কনফিডেন্স ইনডেক্স (বিসিআই) – অর্থনীতি ও ব্যবসার ভবিষ্যত নিয়ে শিল্প ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলির আত্মবিশ্বাস মাপার সূচক – জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে ১৫.৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১০৩.১ পয়েন্টে। গত বছর ওই ত্রৈমাসিকের তুলনায় সূচকটি কমেছে ২২.৫ শতাংশ! এর প্রেক্ষিতে রিপোর্টে মন্তব্য করা হয়েছে, ‘এই সূচক কমে যাওয়ার অর্থ গোটা অর্থনীতি জুড়েই সব ধরনের শিল্পক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস কমছে।’
আগামী ছ’মাসে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না বলে মনে করছেন সমীক্ষায় ৫৩.৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান। জুন মাসে ওই সংখ্যা ছিল ৪১.১ শতাংশ! নতুন বিনিয়োগ করার জন্য ছ’মাস আগের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির তুলনায় এখন অবস্থা আরও খারাপ বলে মনে করেন ৬৭.৫ শতাংশ উত্তরদাতা। শিল্প মহল থেকে অর্থনীতিবিদদের অনেকে বলেছেন, শিল্পোৎপাদন যে আগস্টের পরে সেপ্টেম্বরেও ঝিমিয়ে থাকবে সেটা প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু তা বলে এতখানি!
আটটি প্রধান পরিকাঠামো ক্ষেত্রে উৎপাদনের হালও যেখানে একই রকম খারাপ। অগস্টে ০.৫ শতাংশ সঙ্কুচিত হওয়ার পরে সেপ্টেম্বরে সেখানে সঙ্কোচনের হার বেড়ে হয়েছে ৫.২ শতাংশ। তার উপর সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন সংস্থা মুডিজও জানিয়েছে, এ দেশে বৃদ্ধির হার অতীতের থেকেও কমে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে অর্থনীতির ঝিমুনি।
উল্লেখ্য, চাহিদা কমার জেরে অর্থনীতি ঝিমিয়ে বহু দিন। ছ’বছরের তলানিতে বৃদ্ধি। কেন্দ্র এই সঙ্কটকে অর্থনীতির ওঠানামার নিয়মের চক্র হিসেবে ব্যাখ্যা দিলেও, মূল্যায়ন সংস্থা ইন্ডিয়া রেটিংসের মুখ্য অর্থনীতিবিদ দেবেন্দ্র কুমার পন্থ বলেন, ‘কাঠামোগত ভাবে শ্লথ বৃদ্ধির মুখোমুখি হয়েছে অর্থনীতি। যার শিকড় গেঁথে সাধারণ মানুষের পারিবারিক সঞ্চয় কমে যাওয়া ও তলানি ছোঁয়া কৃষি উৎপাদনে।’