দিন কয়েক আগেই ইংল্যান্ডের সমীক্ষা সংস্থা কম্প্রিটেকের এক সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছিল, নাগরিকদের ওপর নজরদারি চালানোয় বিশ্বে তৃতীয় ভারত। আর তার পর পরই সামনে এল, ভারতের হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের ওপর আড়ি পাতার ঘটনার কথা। খোদ হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষই স্বীকার করে নিয়েছে এই হোয়াটসঅ্যাপ কেলেঙ্কারি কথা! যার টার্গেট ছিল মূলত মোদী বিরোধী নেতা, সাংবাদিক, কূটনীতিক, মানবাধিকার সংগঠনের পদাধিকারীরা। তবে এই মুহূর্তে তার চেয়েও বড় খবর, ভারতে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের একাংশের উপর যে আড়ি পাতার চেষ্টা হচ্ছে, সে বিষয়ে গত মে মাসেই মোদী সরকারকে সতর্ক করা হয়েছিল। শুক্রবার এক বিবৃতিতে এমনটাই দাবি করেছে হোয়াটসঅ্যাপ।
প্রসঙ্গত, গত জুলাই মাসেই ভারতে এসেছিলেন ফেসবুকের (হোয়াটসঅ্যাপ তাদেরই মালিকানাধীন) সিনিয়র এগজিকিউটিভ উইল ক্যাথচার্ট। দু’মাস পরে আসেন আরও এক উচ্চপদস্থ অফিসার নিক ক্লেগ। সরকারি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কয়েক প্রস্থ কথাও হয় তাঁদের। সেই বৈঠকের কথা মনে করিয়েই বৃহস্পতিবার সরকারের তরফে অভিযোগ তোলা হয়, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তাদের আগে জানাননি যে, ‘পেগাসাস’ স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে ইজরায়েলিসংস্থা ব্যবহারকারীর তথ্য হতানোরচেষ্টা করছে। আর তারপরই শুক্রবার মোদী সরকারের এই অভিযোগকে নস্যাৎ করে হোয়াটসঅ্যাপ জানিয়েছে, মে মাসেই ভারত সরকারকে এই বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল।
শুক্রবার সংস্থার মুখপাত্র বলেন, ‘একজন ব্যবহারকারীর নিরাপত্তাই আমাদের কাছে অগ্রাধিকার পায়। আমরা মে মাসেই এই সমস্যা মিটিয়ে ফেলেছিলাম। ভারত-সহ বেশ কয়েকটি দেশের সরকারি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও দেওয়া হয় সে কথা।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ভারত সরকারের সঙ্গে একমত। সমস্যা জটিল। তবে একত্রে কাজ করে আমরা ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে পারি।’ হোয়াটসঅ্যাপের দাবি, এ বছরের ২৯ এপ্রিল থেকে ১০ মে পর্যন্ত ১২ দিনে সেলফোনে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেন এমন অন্তত ১ হাজার ৪০০ জন ওই নজরদারির শিকার হয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছেন বেশ কয়েক জন সাংবাদিক, দলিত আন্দোলনের নেতা, মানবাধিকার কর্মী ও রাজনৈতিক নেতা।
হোয়াটসঅ্যাপের এই বিবৃতির পরেই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে, সরকার যদি জানতই, কেন তাঁরা আগে কিছু জানায়নি? কেন নাগরিক সমাজের একাংশের ব্যক্তিগত তথ্যে নজরদারি চালাতে দেওয়া হল? এরই মধ্যে মোদী সরকারের মাথাব্যথা আরও খানিকটা বাড়িয়ে দিয়ে ইজরায়েলি সংস্থা এনএসও-ও জানিয়েছে, তারা স্পাইওয়্যারটি বিভিন্ন সরকারি সংস্থাকে বিক্রি করেছিল। এর ফলে স্বাভাবিক ভাবেই এ প্রশ্নও উঠছে যে, কাদের হয়ে কাজ করছিল ইজরায়েলি সংস্থাটি? এই সব প্রশ্নের উত্তর পেতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের আর্জি জানিয়ে ইতিমধ্যেই সোচ্চার হয়েছে কংগ্রেস-সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলি। সবমিলিয়ে ইইউ সাংসদদের কাশ্মীর সফরের মতো এই হোয়াটসঅ্যাপ কেলেঙ্কারি নিয়েও বেজায় বিপাকে পড়েছে মোদী সরকার।