সন্ত্রাস প্রসঙ্গে পরোক্ষে পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দিলেও কাশ্মীরে জঙ্গী হামলার ঘটনায় ৫ বাঙালি শ্রমিকের মৃত্যু নিয়ে একটি শব্দও খরচ করলেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যে কারণে প্রশ্ন উঠছে মুখে বড় বড় বুলি আউড়ালেও উপত্যকায় সন্ত্রাস কি চোখেই পড়ছে না মোদীর?
বৃহস্পতিবার জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ নিয়ে অনেক কথা বললেও জঙ্গী হামলায় নিহত ৫ বাঙালি শ্রমিককে নিয়ে তাঁর ভাষণে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি মোদী। তার বদলে শাসকের চিরাচরিত ব্যবহৃত শব্দবন্ধ ‘উন্নয়নের জোয়ার’ বইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘জম্মু-কাশ্মীর বিচ্ছিন্নতাবাদ ও সন্ত্রাসবাদ থেকে ধীরে ধীরে শান্তির পথে ফিরবে।’ অথচ, গত ১৫ দিনে জঙ্গী হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৩ জন। এঁদের মধ্যে ৬ জন ভিন রাজ্যের ট্রাকচালক, ৬ জন ভিন রাজ্যের শ্রমিক এবং একজন আপেল ব্যবসায়ী।
আবার পরোক্ষে পাকিস্তানকে বিঁধে মোদী বলেছেন, ‘যারা আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে পারবে না, তারা ঘুরপথে আমাদের ঐক্য ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। কিন্তু সফল হবে না তারা। চেষ্টা করলে মুখের মতো জবাব দেওয়া হবে।’ তবে সন্ত্রাসমুক্ত কাশ্মীরের স্বপ্ন দেখার কথা বললেও জম্মু কাশ্মীরের কেন্দ্রশাসিত হওয়ার প্রাক্কালেই যে জঙ্গীরা নির্বিচারে সাধারণ দরিদ্র ভারতবাসীকে টার্গেট করে হত্যালীলা চালাচ্ছে, সেই প্রসঙ্গে কোনও উচ্চবাচ্যই করেননি তিনি।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার দক্ষিণ কাশ্মীরের কুলগামের কাতরাসু গ্রামে ঘর থেকে টেনে বের করে এনে বাঙালি শ্রমিকদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় জঙ্গীরা। এর আগে পরপর খুন করা হয়েছে ভিন রাজ্যের ট্রাকচালকদের। পাঞ্জাবের এক ব্যবসায়ী এবং রাজস্থানের এক ঠিকাশ্রমিককেও খুন করা হয়েছে। ভিন রাজ্য থেকে আসা কর্মীদের ওপর জঙ্গী আক্রমণের ঘটনা গত দশ বছরে অনেক কমে এসেছিল। তবে ৫ আগস্ট সংসদে ৩৭০ ধারা বিলোপের পর এখন আবার এই ধরনের আক্রমণ শুরু হয়েছে।
মুর্শিদাবাদের নিহতদের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, বেশ কিছুদিন ধরেই তাঁদের কাশ্মীর ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। তাও তাঁদের নিরাপত্তা দেওয়া গেল না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে বিপুল সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন এবং জম্মু-কাশ্মীরের পুলিশ কী করছিল? মোদীর ভাষণে এ সবেরও কোনও উল্লেখ নেই! বিরোধী শিবিরের অভিযোগ, সবটাই উপত্যকায় ‘জোর করে শান্তি ফেরানোর’ তাগিদ।