বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে মোদী সরকারের বাজেটে যেমন তেমন কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি, তেমন চাহিদার মানোন্নয়নেও কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে পারেনি কেন্দ্র। আর এই দুই কারণেই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে ভারতের শিল্প সংস্থাগুলোকে। গাড়ি শিল্প থেকে বিস্কুট- সর্বত্রই বাজারে চাহিদা বাড়ন্ত। বিক্রি না হওয়ায় বন্ধ করতে হচ্ছে উৎপাদন। তলানিতে বৃদ্ধির হার। আর এসবের ফলেই অর্থনীতি দ্রুত গতিতে তলানিতে ঠেকছে। তবে শুধু অর্থনৈতিক মন্দাই নয়, সেইসঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরে নিষেধাজ্ঞা এবং এনআরসি ইস্যুতেও এবার মোদী সরকারের কড়া সমালোচনা করল আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ‘দি ইকনমিস্ট’ পত্রিকা। অর্থনীতির খারাপ অবস্থা নিয়েই পত্রিকাটি সমালোচনা করেছে সবচেয়ে বেশি। তাদের আশঙ্কা, ভারতের অর্থনীতির দুরবস্থা সহজে কাটার নয়।
পত্রিকায় ভারতের অর্থনীতি সম্পর্কে এক স্পেশ্যাল রিপোর্টের শুরুতে বলা হয়েছে, জম্মু-কাশ্মীরে দমন পীড়ন চলছে। অসমে লক্ষ লক্ষ গরিব মানুষের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাঁদের অনেকেই মুসলিম। ভারতের আমলাতন্ত্র একপ্রকার ‘এথেনিক ক্লিনজিং’ চালাচ্ছে। এইসব ঘটনা আন্তর্জাতিক মহল ভালো চোখে দেখেনি। অনেকেরই বিবেক দংশন হয়েছে। কিন্তু এর পরেও পাশ্চাত্যের অনেক ব্যবসায়ী ভারতের প্রধানমন্ত্রীর হয়ে কথা বলতেন। তাঁদের ধারণা হয়েছিল, নরেন্দ্র মোদীর শাসন গণতন্ত্রের পক্ষে খারাপ কিন্তু অর্থনীতির পক্ষে ভালো। কারণ মোদী যে দর্শন নিয়ে চলেন তা বাণিজ্যের সহায়ক। কিন্তু আমাদের স্পেশ্যাল রিপোর্টে পালটা যুক্তি দেখিয়ে বলা হয়েছে, এই যুক্তি ধোপে টেকে না। ভারতের অর্থনীতি অযোগ্য হাতে পড়েছে। তার হাল খারাপ।
ভারতের অর্থনীতির হাল কতদূর খারাপ তা তথ্য দিয়ে দেখিয়েছে দি ইকনমিস্ট। স্পেশ্যাল রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত বছরের মাঝামাঝি অর্থনীতির বিকাশের হার ছিল আট শতাংশ। কিন্তু চলতি বছরের গত ত্রৈমাসিকে তা নেমে হয়েছে পাঁচ শতাংশ। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতিতেও অবশ্য মন্দা চলছে। কিন্তু ভারতের বিপুল কর্মীবাহিনীকে যদি কাজ দিতে হয়, অর্থনীতির বিকাশ আরও দ্রুতগতিতে হতে হবে। ভারতের অর্থনীতির সংকট শীঘ্র কাটবে বলে মনে হচ্ছে না। বরং আশঙ্কা হচ্ছে, এই অবস্থা দীর্ঘদিন চলবে। ব্যাঙ্কের সংকট ও অনাদায়ী ঋণ সম্পর্কেও ইকনমিস্ট পত্রিকায় মন্তব্য করা হয়েছে। স্পেশ্যাল রিপোর্টে আছে, কয়েকটি ব্যাঙ্ক ও ঋণদাতা সংস্থা সংকটে পড়েছে। তাদের অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ ২০ হাজার কোটি ডলার। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ব্যবসায় টাকার যোগান কমেছে ৮৮ শতাংশ।
বাজারে চাহিদা কমা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। স্পেশ্যাল রিপোর্টে আছে, গাড়ি ও মোটরবাইকের বিক্রি কমেছে ২০ শতাংশের বেশি। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির মোট আর্থিক ঘাটতি দেশের মোট জাতীয় উৎপাদনের প্রায় নয় শতাংশ। রাজস্ব আদায়ও কমেছে অপ্রত্যাশিতভাবে। এই অবস্থায় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার সম্ভাবনা আছে কমই। আর সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনা করে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে তিনি যখন ক্ষমতায় এলেন, তখন অর্থনীতিতে বহু সমস্যা ছিল। কিন্তু সরকার তার সমাধানে বিশেষ চেষ্টা করেনি। সাম্প্রতিক মন্দার সময়েও সরকারের সেই নিষ্ক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে। মন্দার মোকাবিলা করার মতো দক্ষতা তাদের নেই। এমনকী প্রশাসনের কর্তারা পরস্পরবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলেন বলেও মন্তব্য করেছে ইকনমিস্ট।