সবসময় কোনো না কোনো কিছু নিয়ে চর্চায় থাকেন তিনি। কখনও মাঠে তাঁর আগ্রাসী মনোভাবের জন্য আবার কখনও তাঁর ব্যাটে রান না আসার জন্য, কিংবা যখন তাঁর ব্যাটে রানের ফুলঝুরি ঝরে তখনও চর্চায় থাকেন তিনি। ওয়ানডেতে সেঞ্চুরির আছে, সেখানে টেস্টে ২০১৯ সালে একটিও শতক ছিল না। ফলে ক্রমশ যেন চাপ বাড়ছিল বিরাট কোহলির উপর। তার ওপর রোহিতের ওয়ানডে, এমনকি ভাইজ্যাগ টেস্টেও তাঁকে ছাপিয়ে যাওয়া, অ্যাসেজে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী স্টিভ স্মিথের অনন্য পারফরম্যান্স, ক্যাপ্টেন্সি বিতর্ক, চাপ ক্রমশ পাহাড় প্রমাণ হচ্ছিল বিরাটের জন্য। অবশেষে পুনেতে সেই চাপের পাহাড় ডিঙলেন এই সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। দুরন্ত রাবাডা, চাপ সৃষ্টিকরা আনরিখ বা ফিল্যান্ডারদের সামলে ২৬ তম টেস্ট শতক হাঁকালেন বিরাট কোহলি।
রোহিত ওপেনার হিসেবে প্রথম টেস্টে জোড়া শতক হাঁকালেও, ভাইজ্যাকে সেইভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি কিং কোহলি। ফলে কিছুটা চাপেই ছিলেন তিনি। তবে দ্বিতীয় টেস্টে রোহিত ফ্লপ হতেই জ্বলে উঠল তাঁর ব্যাট। গতকাল ধৈর্যশীল ১০৫ বলে ৬৩ রান করে অপরাজিত থাকার পর দ্বিতীয় দিনও বেশ সাবধানী ব্যাটিং করছিলেন কিং কোহলি। তিন অঙ্কের রানে পৌঁছনোর জন্য যে কতটা মরিয়া ছিলেন তিনি, তা তাঁর ব্যাটিং দেখলেই বোঝা যাচ্ছিল। অবশ্য দুইবার স্লিপে প্রায় ক্যাচ দিয়েই দিয়েছিলেন তিনি। ফলে আরও বেশি সাবধানী হয়ে যান। এমনকি শর্ট রানের ক্ষেত্রেও বেশ সাবধানী ছিলেন তিনি। অযথা ঝুঁকি একেবারেই নৈব নৈব চ। অবশেষে ফিল্যান্ডারকে স্ট্রেট ড্রাইভে চার মেরে ১৭৪ বলে শতরান পূর্ণ করেন তিনি। চতুর্থ দ্রুততম (১৩৮ ইনিংস) ব্যাটসম্যান হিসেবে ২৬টি টেস্ট সেঞ্চুরি করেলেন তিনি। অন্যদিকে, হাফ সেঞ্চুরি করেছেন অজিঙ্কা রাহানেও।
প্রসঙ্গত, গতকাল টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন কোহলি। এটা আবার ক্যাপ্টেন হিসেবে তাঁর ৫০তম টেস্ট। পুনের এমসিএ স্টেডিয়ামের পিচ ভাইজ্যাকের মতো পাটা না হয়ে বেশ সতেজই ছিল। পিচে বেশ ঘাস থাকায় বল সকালের দিকে যথেষ্ট ক্যারি করছিল। পেসারদের জন্য বেশ আদর্শ সকালের উইকেটে শুরু থেকেই দুই ভারতীয় ওপেনার রোহিত শর্মা ও মায়াঙ্ক অগ্রওয়ালকে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেন রাবাডা, ফিল্যান্ডার ও আনরিখ। বল ফলে শুরুর বেশ কিছুক্ষণ কিছুটা নড়বড়ে লাগছিল দুই ব্যাটসম্যানকেই।
গত ম্যাচে দুই ইনিংসেই শতরান হাঁকানো রোহিত (১৪) এদিন সেট হওয়ার আগেই কট বিহাইন্ড হন। তাঁকে ফেরান রাবাডা। এরপর দ্বিতীয় উইকেটে ভারতের হয়ে প্রত্যাঘাত করেন মায়াঙ্ক ও পূজারা। দুজনে মিলে ১২৮ রানের পার্টনারশিপ গড়ে তোলেন। কিন্তু হাফ সেঞ্চুরির পর প্রথম স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন পূজারা (৫৮)।
পূজারা আউট হয়ে গেলেও অন্যপ্রান্তে একেবারে জগদ্দল পাথরের মতো থিতু হয়ে যান মায়াঙ্ক। প্রথম থেকে একেবারে রাহুল দ্রাবিড়ের মতো রক সলিড ডিফেন্স করলেও, সেঞ্চুরি করেন একেবারে বীরেন্দ্র সেহবাগ স্টাইলে। ৮৭ থেকে ৯৯ রানে পৌঁছান কেশব মহারাজকে পরপর দুই বলে ছয় মেরে। এরপর সেঞ্চুরিও করেন চার মেরে। যদিও সেঞ্চুরি করার পর বেশিক্ষণ আর ক্রিজে থাকেন নি মায়াঙ্ক। সেই রাবাডার বলেই ডু’প্লেসিকে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলয়নে ফেরেন মায়াঙ্ক। এরপর অজিঙ্কা রাহানেকে নিয়ে দিনের শেষ পর্যন্ত ক্রিজে টিকে থাকেন ভিকে। প্রথম দিন ২৭৩/৩ রান করেছিল ভারত। দ্বিতীয় দিনে ব্যাট করতে নেমে এই বছরের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করে ফেললেন কিং কোহলি। সমালোচকদের মুখ যেন এইভাবেই বন্ধ করে দিলেন তিনি।