২০০৬ সালের বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে সপ্তম বামফ্রন্ট সরকার শপথ নেওয়ার দিনই মহাকরণে তাঁর পাশে বসে হুগলির সিঙ্গুরে এক লাখ টাকার ছোট গাড়ির প্রকল্প হবে বলে ঘোষণা করেছিলেন টাটা গোষ্ঠীর তৎকালীন চেয়ারম্যান রতন টাটা। তারপরই সিপিএম সরকার জোর করে জমি অধিগ্রহণ শুরু করলে অনিচ্ছুক কৃষকের জমি রক্ষার দাবিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তীব্র আন্দোলন হয়। যার ফলে গোটা দেশে আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে এই ছোট গাড়ির প্রকল্প। বিরোধীদের লাগাতার আন্দোলনের জেরে শেষ পর্যন্ত ২০০৮ সালের পুজোর মুখে কলকাতায় রতন টাটা ঘোষণা করেন, সিঙ্গুর প্রকল্প তাঁরা বাতিল করছেন, ন্যানো গাড়ির উৎপাদন হবে গুজরাতের সানন্দে।
তারপর গঙ্গা, নর্মদা দিয়ে বহু জল গড়িয়ে গেছে। প্রায় এক যুগ বাদে ২০১৯ সালে আরও একটা পুজোর মরশুমে প্রকাশ্যে এল এক ভয়াবহ তথ্য। সাম্প্রতিক সময়ে যখন নজিরবিহীন মন্দায় ভুগছে দেশের গাড়ি শিল্প, তখন রতন টাটার স্বপ্নের ন্যানো প্রজেক্টের অবস্থা আরও করুণ। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর, বছরের প্রথম ৯ মাসে একটিও ন্যানো গাড়ি উৎপাদন করেনি টাটা মোটরস। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ১ টি ন্যানো গাড়ি বিক্রি হয়েছে। সেটিও আবার ফেব্রুয়ারি মাসে। গত ৮ ই অক্টোবর এই খবর প্রকাশিত হয়েছে টাইমস অফ ইন্ডিয়া’তে।
সূত্রের খবর, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গুজরাতের সানন্দে মোট ২৯৭ ইউনিট ন্যানো উৎপাদন করেছিল টাটা মোটরস। আর সেই সময়ে বাজারে বিক্রি হয় ২৯৯ টি ন্যানো গাড়ি। সেখান থেকে চলতি বছরে ন্যানোর উৎপাদন এবং বিক্রি, দুটোই প্রায় বন্ধের মুখে। আগামী দিনে তারা আর ন্যানো তৈরি করবে কিনা, সে ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কোনও ঘোষণা করেনি টাটা মোটরস। সংস্থার এক আধিকারিক জানান, আগামী জানুয়ারি মাস থেকে দেশে নতুন সেফটি নর্মস চালু হবে। তাছাড়া বিএস ৬ এমিশন বিধি চালু হবে। সেক্ষেত্রে ন্যানো গাড়ি এই মাপকাঠি পূরণ করতে সক্ষম নাও হতে পারে। ফলে সূত্র বলছে, ২০২০ সালে এই মডেলটি বাজার থেকে তুলে নিতে চলেছে টাটা মোটরস।