কলকাতা লিগের মিনি ডার্বিতে প্রতিপক্ষ মহমেডান স্পোর্টিং। কিন্তু মোহন বাগান কোচ কিবু ভিকুনার মন পড়ে থাকবে বারাসত স্টেডিয়ামে। এই ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে লিগ খেতাবের দাবিদার পিয়ারলেস ও ভবানীপুর ক্লাব। বুধবার সকালে সল্টলেক স্টেডিয়ামের ট্রেনিং গ্রাউন্ডে প্র্যাকটিস করার পর মোহন বাগানের স্প্যানিশ কোচ পরিষ্কার বলে দিলেন, ‘লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দৌড়ে পিয়ারলেসই এগিয়ে।’ পরক্ষণেই বললেন, ‘আমাদের ফোকাস মহমেডান ম্যাচে।’ লিগে এমন টানটান উত্তেজনা অতীতে খুব বেশিবার দেখা যায়নি। যেখানে লিগ টেবলে প্রথম ছ’টি দলেরই খেতাব জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। উল্লেখ্য, মোহন বাগান আট ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট পেয়ে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। তবে আজ ম্যাচে চারজন বিদেশি ফুটবলার বাছাই নিয়ে চিন্তায় ভিকুনা।
বিশ্বকর্মা পুজোর সকালে যখন শহর জুড়ে শারোদৎসবের আবাহন, তখন মিনি ডার্বির দুই ‘কারিগরের’-র মুখে একই সঙ্গে আলো এবং আঁধারির খেলা। মোহনবাগান এবং মহমেডানে কোচের হাতে রয়েছে রং-বেরঙের ‘ঘুড়ি’। সেই ঘুড়ির কারও নাম জোসেবা বেইতিয়া, কারও নাম মুদে মুসা। আজ বৃহস্পতিবার যুবভারতীর রিজার্ভ বেঞ্চে বসে সেই স্বদেশ এবং বিদেশি ‘ঘুড়ি’ উড়িয়ে লিগ খেতাবের আকাশে একে অন্যকে ‘ভোকাট্টা’ করে দিতে চাইছেন দুই দলের দুই হেডমাস্টার।
‘‘মহমেডানের মাঝমাঠের মুদে মুসা, দশ নম্বর (কোসি) এবং ২২ নম্বর (ছাংতে) খুব ভাল। সেটা মাথায় রাখছি।’’ বলার সময় কিবুর কপালে চিন্তার ভাঁজ। যোগ করেন, ‘‘কলকাতা লিগ আনপ্রেডিক্টেবল। যে কোনও দল যে কাউকে হারিয়ে দিচ্ছে। অবনমনে থাকা এরিয়ান আমাদের হারিয়ে দেবে ভাবিইনি। মনে হচ্ছিল লিগটা শেষ হয়ে গেল। ইস্টবেঙ্গল ড্র করায় আবার সুযোগ এসেছে। ছেলেদের বলেছি কোনও দিকে না তাকিয়ে বাকি তিন ম্যাচ জেতো।’’
বুধবার সকালে প্র্যাকটিসের পর ক্লাব সভাপতি গীতানাথ গাঙ্গুলি কোচ ও ফুটবলারদের উৎসাহিত করলেন। কোচের হাতে তুলে দিলেন মিষ্টির প্যাকেট। মোহন বাগান সভাপতি ভিকুনার কাছে জয়ের আব্দার করেন। তাতে হেসে সায় দিলেন স্প্যানিশ কোচ। মহমেডান স্পোর্টিং এবার লিগে আটটি ম্যাচ খেলে একটিতে হেরেছে। প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভাঙতে মোহন বাগান কোচ উইং প্লে’র উপর জোর দিচ্ছেন। যেখানে সবুজ-মেরুন স্কোয়াডে নয়া সংযোজন স্প্যানিশ উইং হাফ জুলেন ওলাইজোলা। এদিন তাঁকে দ্বিতীয় দলে রেখে নিজেদের মধ্যে প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলালেন মোহন বাগান কোচ। তাঁকে খেলাবেন কিনা তা নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন তিনি। প্রথম একাদশে বিদেশি ফুটবলার হিসেবে ভিকুনার প্রথম পছন্দ ড্যানিয়েল সাইরাস, অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হোসেবা বেইতিয়া। বৃহস্পতিবার মোহন বাগানের ফর্মেশন কী হবে তা নির্ভর করছে সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার ফ্রান গঞ্জালেজ, না স্ট্রাইকার সালভা চামোরো শুরু করবেন তার উপর। তবে দেবজিৎ, চুলোভা, ড্যানিয়েল সাইরাস, কিমকিমা, গুরজিন্দর, শেখ সাহিল, নংডাম্বা নাওরেম, বেইতিয়া প্রথম একাদশে নিশ্চিত। রেনবোর বিরুদ্ধে জয়সূচক গোল করার পর শ্যামনগরের শুভকে নিয়ে সবুজ-মেরুনে শিবিরে আলোচনা চলছে। তবে শুভকে আগলে রাখছেন মোহন বাগান কোচ। তরুণ ফুটবলারটি এদিন বাড়তি আত্মবিশ্বাস নিয়ে প্র্যাকটিস করলেন। বুধবার প্র্যাকটিসে রাইট ব্যাক চুলোভাকে দিয়ে বারবার ওভারল্যাপ করিয়েছেন কিবু ভিকুনা। মিষ্ট ভাষী স্প্যানিশ অ্যাটাকার জুলেন খেলার জন্য তৈরি। বললেন, ‘বেইতিয়া আমার বন্ধু। ওর সঙ্গে রিয়াল সোসিদাদের যুব দলে খেলেছি। আমি বৃহস্পতিবারের ম্যাচ খেলতে তৈরি। তবে কলকাতায় বেশ গরম। যেটা বেশ অস্বস্তিকর।’
ফুটবলার জীবনে বহু ডার্বি খেলেছেন মহমেডানের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর দীপেন্দু। কিন্তু জীবনে প্রথম বার কোনও বড় ম্যাচে আজ রিজার্ভ বেঞ্চে থাকবেন তিনি। দীপেন্দুও আশা এবং আশঙ্কায় দুলছেন, ‘‘ফুটবলার জীবনের চেয়েও বেশি চাপ মনে হচ্ছে। তখন শুধু গোল করার কথা ভাবতাম। এখন লাটাই আমার হাতে। কীভাবে এগারো জনকে ব্যবহার করব, বিপক্ষকে টেক্কা দেব সেটা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। আলেসান্দ্রোর চেয়েও কিবু বেশি অভিজ্ঞ। মাঝমাঠটা ভাল তৈরি করেছে।’’ দীপেন্দু অবশ্য ঠিক করে ফেলেছেন শুরু থেকে নামাবেন না আর্থার কোসিকে। নিজের সেরা অস্ত্রকে পরের দিকে ব্যবহার করার কথা ভাবছেন তিনি। শুরুতে জন চিডিকে নামিয়ে প্রতিপক্ষকে ধোঁয়াশায় রাখতে চান। লিগ খেতাবের লড়াইতে বেঁচে থাকতে যে ম্যাচটা জিততেই হবে দু’পক্ষকে। সেই রসায়নেই একটা ধুন্ধুমার ম্যাচ দেখার আশা করা যেতেই পারে।