তাঁর ঘর ছিল গোটা পৃথিবীই। তবু নদিয়ার সঙ্গে তাঁর সখ্য সেই ছাত্রজীবন থেকে। সুভাষচন্দ্র থেকে নেতাজী হয়ে ওঠার প্রতিটি পর্বের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নদিয়ার জেলাসদর রাজার শহর কৃষ্ণনগর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জ। মাঠ-ঘাট থেকে গঙ্গা-জলঙ্গি নদী। পলাশির প্রান্তর থেকে অঞ্জনার তীর। চৈতন্যধাম নবদ্বীপ অথবা অদ্বৈত ভূমি শান্তিপুর হয়ে বাগআঁচড়া কিংবা মহেশগঞ্জ জুড়ে ছিল তার অবাধ বিচরণ। সময়টা ১৯১৩ থেকে ১৯৩৮। ওই সাড়ে তিন দশকে বারে বারে নদিয়ায় এসেছেন সুভাষচন্দ্র। স্বাধীনতার যুদ্ধে নিজেকে প্রস্তুত করার প্রাথমিক পর্বে সুভাষচন্দ্রের জীবনে নদিয়ার প্রভাব অকল্পনীয়।
সময়টা ১৯১৩ সালে মে মাস।
ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দিয়ে সুভাষচন্দ্র তাঁর বন্ধু হেমন্তকুমার সরকারের নিমন্ত্রণে কৃষ্ণনগর এসেছেন। সম্ভবত সেই প্রথম তাঁর কৃষ্ণনগর আসা। উঠেছেন বন্ধুর বাড়িতেই। ইতিহাসের নদিয়া এবং নবাবি মুর্শিদাবাদের প্রসিদ্ধ স্থানগুলি দেখতে প্রায়ই বেড়িয়ে পড়তেন সুভাষচন্দ্র। সঙ্গে হেমন্তকুমার ছাড়াও থাকতেন সুরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, যুগলকিশোর আঢ্য, গুরুদাস গুপ্ত প্রমুখ। নদিয়ার পলাশি কিংবা মুর্শিদাবাদের নবাবি আমলের বিভিন্ন ইতিহাসখ্যাত জায়গাগুলির প্রতি আশ্চর্য রকমের টান ছিল সুভাষচন্দ্রের।
একদিন নৌকা করে ফিরছেন মুর্শিদাবাদ থেকে। তখন বেশ রাত হয়েছে। বৈশাখি জ্যোৎস্নার রাত। বন্ধুরা সুভাষচন্দ্রকে গান গাইতে বললেন। গান সুভাষচন্দ্র নিজেও ভালই গাইতেন। চাঁদের আলোয় ভেসে যাওয়া গঙ্গার বুকে সুভাষচন্দ্র ভরাট উদাত্ত কণ্ঠে গেয়ে উঠেছিলেন,
“দূরে হের চন্দ্র কিরণে উদ্ভাসিত গঙ্গা।
ধায় মত্ত হরষে সাগরে পদপদ পরশে।
কূলে কূলে করি পরিবেশন মঙ্গলময়ী বরষা, শ্যামধরণী সরসা।”
কান্তকবি রজনীকান্ত সেনের এ গান ছিল সুভাষচন্দ্রের বড় প্রিয়।
অন্য এক দিন সদলবলে নবদ্বীপ এসেছেন সুভাষচন্দ্র। চৈতন্যদেবের স্মৃতি বিজড়িত নবদ্বীপ থেকে নৌকায় ফিরতি পথে স্রোতের উজানে আসতে হয়। জলঙ্গি দিয়ে নৌকা করে ফেরার সময় সকলের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে গুন টানলেন সুভাষচন্দ্র।
ম্যাট্রিক পরীক্ষার পর হেমন্ত সরকার কৃষ্ণনগরে শ্রমজীবীদের জন্য নৈশ বিদ্যালয় স্থাপনে উদ্যোগী হন। মূলত বন্ধুকে এই কাজে সহায়তা করতেই সুদূর কলকাতা থেকে কৃষ্ণনগরে আসতেন সুভাষচন্দ্র। নিয়ম করে ওই নৈশ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। সঙ্গে আসতেন শৈলেন ঘোষ। যিনি পরে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকায় বসে ভারতীয় বিপ্লবীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার কাজ করবেন।
কৃষ্ণনগরে সুভাষের নিয়মিত যাতায়াতের ফলে হেমন্ত সরকার ও তাঁর বন্ধুদের মধ্যে দারুণ উৎসাহের সৃষ্টি করল। কৃষ্ণনগরের অঞ্জনা নদী তখনও মরেনি। অঞ্জনার ধারে তাঁরা সমবেত হতেন। সেখানে সমকালীন রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হত। থাকত ধর্মের আলোচনাও। কলকাতা থেকে সুভাষচন্দ্র এক এক বার এক এক জনকে নিয়ে যেতেন সেই আলোচনা সভায়। কখনও সুরেশচন্দ্র তো হেমচন্দ্র দত্তগুপ্ত, কখনও আবার হেমচন্দ্র সরকার। এই রকম সময়ে সুভাষচন্দ্র কৃষ্ণনগরের জলঙ্গি নদীতে সাঁতার শিখেছিলেন। এক দিন হেমন্ত সরকার সুভাষচন্দ্র কে কথায় কথায় জানান, তাঁর পৈত্রিক বাসস্থান বাগআঁচড়া গ্রামে আলিপুর বোমার মামলার আসামি নিরাপদ রায় থাকেন। তিনি তখন দশ বছর দ্বীপান্তর-দণ্ড ভোগ করে গ্রামে বাস করছেন। বাগআঁচড়া ছিল নিরাপদ রায়েরও পৈত্রিক বাসস্থান। সুভাষচন্দ্র চললেন, আলিপুর বোমা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত মানুষটিকে দেখতে। সেই বিপ্লবী সাধক সুভাষচন্দ্রের পরিচয় পেয়ে প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করেছিলেন। সুভাষের মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন, তিনি যেন বড় হয়ে দেশের কাজ করেন আর কখনও যেন গ্রামকে না ভুলে যান।
এক বার বড়দিনের ছুটিতে সন্ন্যাসী জীবনযাপন করার জন্য সুভাষচন্দ্র এবং তাঁর কয়েক জন ঘনিষ্ঠ বন্ধু গেলেন শান্তিপুর। সেখানে গঙ্গার ধারে জনৈক ভরত পোদ্দারের খালি বাড়িতে শুরু করলেন সন্ন্যাস জীবনের যাবতীয় কৃচ্ছ্বতার অনুশীলন। ইন্দ্রদাস বাবাজী নামে এক তরুণ সন্ন্যাসী সেই সময়ে নদিয়ায় আসেন। সুভাষচন্দ্র এবং হেমন্ত সরকার তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।
প্রথম জীবনে এই হেমন্ত সরকার ছিলেন সুভাষের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ১৯১২ সালে কটকে হেমন্তর সঙ্গে সুভাষের আলাপ হয়েছিল। সুভাষের সহপাঠী সমবয়সী হেমন্ত পরবর্তী কালে সহকর্মী ও সহযোদ্ধা ছিলেন নেতাজির। তৎকালীন বাংলা রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ জ্যোতিষ্ক হেমন্ত ছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের ডান হাত এবং স্বরাজ্য দলের চিফ হুইপ। তিনি নদিয়া কংগ্রেসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাও বটে।
হেমন্ত সরকার তাঁর ‘সুভাষের সঙ্গে বারো বছর’ বইতে লিখছেন, “কিছু দিন পরেই সুভাষ এল কেষ্টনগরে আমার কাছে। আমাদের বাড়িতে প্রথমে তার স্থান হল না। তাই সুভাষকে নিয়ে নিকাড়ি পাড়ায় ডা: দামোদর চক্রবর্তীর এক বাড়িতে গিয়ে উঠলাম। ওই বাড়িটা তখন ছিল একটা মেস বাড়ি। নানা রকম অনিয়মে সুভাষের শরীর তখন ভেঙে পড়েছিল। কৃষ্ণনগরে সে টাইফয়েডে আক্রান্ত হল। মেস থেকে আমাদের বাড়িতে এনে ওঠালাম।”
ওই বইয়ে হেমন্ত সরকার লিখেছেন যে কলকাতায় কলেজ স্ট্রিটের এক মেসে তিনি, সুভাষচন্দ্র এবং অন্য বন্ধুরা প্রায়ই যেতেন। সেখানেই তাঁরা বিপ্লবী বাঘাযতীনের সংস্পর্শে আসার সুযোগ পেয়ে ছিলেন।
ইতিমধ্যে সুভাষচন্দ্র ক্রমশ ব্যস্ত হয়ে পড়তে থাকেন দেশব্যাপী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে। স্বাভাবিক ভাবেই কমে যায় আগের মতো নদিয়ায় যাতায়াতের সুযোগ। তবু নদিয়ার প্রতি তাঁর ছিল আন্তরিক টান। সেটা বোঝা যায়, চরম ব্যস্ততার মুহূর্তেও যে কোনও কর্মসূচিতে তিনি নদিয়াতে আসবেনই।
সেটা সম্ভবত ১৯২৯ সাল।
সুভাষচন্দ্র কৃষ্ণনগরে এক বিশেষ ছাত্র-যুব সভায় বক্তৃতা করেন। জায়গাটি ছিল ছুতোরপাড়া। সে সময়ে ওইখানেই ছিল কৃষ্ণনগর অ্যাথলেটিক ক্লাব এবং বিপ্লবী সংগঠন ‘রেড সার্ট ভলান্টিয়ার্স’দের কুচকাওয়াজের মাঠ। ছিল সাধনা লাইব্রেরির কিশোর বিভাগ। সুভাষচন্দ্রের সেই বিশেষ সভায় সকলের প্রবেশ অধিকার ছিল না। যাতে অবাঞ্ছিত লোক ঢুকে না পড়ে, তার জন্য সভামণ্ডপটি পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল রেড সার্ট ভলান্টিয়ার্সদের।
সুভাষচন্দ্রকে ১৯৩০ সালের ২ নভেম্বর, কৃষ্ণনগর পুরসভার পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। প্রদান করা হয় মানপত্র। এর বছরখানেক পর সুভাষচন্দ্র ফের কৃষ্ণনগরে আসেন।
নদিয়াতে সুভাষচন্দ্র শেষবার আসেন ১৯৩৮ সালে। তখন তিনি সকলের ‘নেতাজী’। নবদ্বীপের গঙ্গার পূর্বপাড়ে মহেশগঞ্জে বিমানে করে নামেন। মহেশগঞ্জের পালচৌধুরীদের মাঠে তাঁর বিমান নামলে একদল স্বেচ্ছাসেবক তাঁকে সামরিক কায়দায় অভিবাদন জানান। এঁরা ছিলেন নদিয়ার সুভাষ অনুগামী স্বেচ্ছাসেবক। এখান থেকে তিনি নবদ্বীপের প্রাণকেন্দ্র পোড়ামাতলায় এক বিরাট জনসভায় বক্তৃতা করেন। শহর নবদ্বীপ যেন ওই জনসভায় ভেঙে পড়েছিল।
প্রকাশ্য রাজনৈতিক ভাবধারার এক নায়ক ছিলেন সুভাষচন্দ্র। আর কৃষ্ণনগর তথা নদিয়া ছিল সুভাষচন্দ্রের তারুণ্যের লীলাভূমি।
মুর্শিদাবাদে ছড়িয়ে আছে ইতিহাসের নানা নিদর্শন। ইতিহাস সমৃদ্ধ নবাবদের রাজত্বকাল বাদ দিলেও রয়েছে বহু ঐতিহাসিক ঘটনা আর নানা ব্যক্তিত্ব। মুর্শিদাবাদের লালগোলা তেমনই একটি জায়গা। লালগোলার রথবাজার পেরিয়ে এমএন একাডেমি স্কুলের আগে মনসা মন্দিরের বাঁ দিকে একটি হলুদ রঙের জীর্ণ মন্দিরের ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা আজ আমাদের অনেকেরই মনে নেই। ইতিহাস সচেতন মানুষ অবশ্য এই বাড়ির গুরুত্ব জানেন। লালগোলার মহারাজা যোগেন্দ্রনারায়ণ রায় তাঁর পৌত্র ধীরেন্দ্রনারায়ণ রায়ের জন্য এক জন গৃহশিক্ষকের খোঁজ করছিলেন। তলব করা হল তাঁকে। তিনি তখন মুর্শিদাবাদের অরঙ্গাবাদের নিমতিতায় একটি স্কুলের শিক্ষকতা করছেন।
যেখানে স্বয়ং রাজা তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছেন, না গিয়ে আর উপায় কী! সেই ডাকে সাড়ে দিয়ে চলে আসেন লালগোলা। কিছু দিন ধীরেন্দ্রনারায়ণ রায়কে পড়ানোর পরে রাজা তাঁকে লালগোলার এমএন একাডেমিতে শিক্ষকতার কাজে নিযুক্ত হতে বলেন। আর তখন থেকেই পাকাপাকি ভাবে তিনি থাকতে শুরু করেন এই বাড়িতে। সেই বিখ্যাত মানুষটি আর কেউ নন, যোগী বরদাচরণ মজুমদার।
বরদাচরণেবার ডাকে সাড়া দিয়ে কে না এসেছেন এই বাড়িতে! কাজী নজরুল ইসলাম থেকে শুরু করে তবলা শিল্পী ওস্তাদ আতা হোসেন, সঙ্গীত শিল্পী কাদের বক্সের পদধূলিতে ধন্য হয়েছিল লালগোলার এই বাড়ি। ঋষি অরবিন্দের সঙ্গে ছিল তাঁর আত্মিক যোগ। চিঠিপত্রের আদান প্রদান চলত তাঁদের মধ্যে। কিন্তু কখনও সরাসরি দেখা করেননি তিনি। তবে এ বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল ঋষি অরবিন্দের ভাই বারীন ঘোষের।
বাংলার আকাশে বাতাসে তখন ধ্বনিত হচ্ছে স্বাধীনতার জয়গান। দেশমাতৃকার সেবায় নিয়োজিত প্রাণ বাংলার যুবা-বৃদ্ধ অনেকেই। আর তাঁদের নেতৃত্বে রয়েছেন বাংলা তথা ভারতবর্ষের বীর সন্তান সুভাষচন্দ্র বসু।
সুভাষচন্দ্রের কলেজ জীবনের বন্ধু ছিলেন দিলীপকুমার রায়। তিনি ছিলেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের পুত্র। এছাড়া তিনি নিজেও একজন সুরসাধক ছিলেন। তিনিও বহু বার বরদাচরণের সঙ্গে দেখা করে গিয়েছেন এই বাড়িতে।
সেই সময় ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এক চরম সন্ধিক্ষণ। সুভাষচন্দ্র বসু কংগ্রেসের সভাপতি পদত্যাগ করেছেন তখন। মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে চালিত সমস্ত কংগ্রেস-শক্তি সুভাষচন্দ্রের বিরুদ্ধে। নতুন কর্মপন্থা নির্বাচনে সুভাষচন্দ্রের তখন ব্যস্ততার সীমা নেই।
সেই সময়ে এক দিন গ্রীষ্মের ছুটিতে লালগোলা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মহাশয় কলকাতায় বেড়াতে আসেন। সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে দেখা করতে তিনি অতিশয় আগ্রহী। সমস্ত জরুরি কাজ ফেলে সুভাষচন্দ্র সে দিন সকাল আটটার সময় বরদাবাবুর কাছে উপস্থিত হন।
তারিখটা ছিল ১৯৩৯ সালের ১২ জুন। বাংলা ২৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৩৪৬ সাল।
আজ থেকে প্রায় আশি বছর আগের এক দিন।
সুভাষচন্দ্রকে সঙ্গে করে বরদাচরণ একটি ঘরে প্রবেশ করেন। বরদাচরণ তখন কলকাতায় মোহিনীমোহন রোডের একটি বাড়িতে ছিলেন। ঘরে ঢুকে বরদাচরণ নির্দেশ দেন, তিনি ঘর না খোলা পর্যন্ত কেউ যেন দরজায় ধাক্কা না দেয়। টানা আড়াই ঘণ্টা ভেতরে চলে আলোচনা। আর আলোচনার পরে যখন তিনি বাইরে আসেন তখন দেখা যায় সুভাষচন্দ্রের চোখ মুখ লাল। যেন ঘোরের মধ্যে রয়েছেন।
সুভাষকে তাঁর গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। তিনি একটিও বাক্যালাপ না করে নিঃশব্দে গাড়িতে গিয়ে বসেন। গাড়িতে ওঠার আগে দেখা যায় তাঁর পদক্ষেপও যেন স্বাভাবিক নয়।
পরের দিন সন্ধ্যায় সুভাষচন্দ্র ফের দেখা করতে যান বরদাচরণের সঙ্গে। সেদিন প্রায় সোয়া দু’ঘন্টা কাটিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর সঙ্গে। পরের দিন অবশ্য আসার কথা ছিল না সুভাষের। কী কারণে তিনি এসেছিলেন এবং এতক্ষণ সময় কাটিয়ে গিয়েছেন তা খোলসা করে কিছু বলেননি যোগী মহাশয়। ফলে বিস্তারিত কিছুই জানা যায় না।
আশ্চর্যের ব্যাপার হল, পরের দিনও বিশেষ কাজে সুভাষচন্দ্রের কলকাতার বাইরে যাওয়ার কথা ছিল। উপস্থিত তাঁর কাছের লোকেরা বরদাচরণকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেছিলেন,
‘‘সব কিছু খুলে বলা সম্ভব নয়। অতীত জীবনটাই সুভাষবাবুর কাছে খুলে ধরেছিলাম। যে কথা তিনি ছাড়া আর কেউ জানেন না এমন কথাও তাঁর সামনে তুলে ধরেছিলাম।’’
বরদাচরণ ও সুভাষচন্দ্রের মধ্যে এমন কিছু কথাবার্তা হয়েছিল যা চিরকাল কেউ জানতে পারেন নি। সুভাষচন্দ্রের সে দিনের আসা নিয়ে জানতে চাইলে বরদাচরণ শুধুমাত্র বলেছিলেন,
‘‘আজ তাঁকে যোগের বিশেষ প্রক্রিয়া বলে দিলাম। ধ্যানে বসিয়েছিলাম, অনেকক্ষণ ধ্যানস্থ ছিলেন!’’
কী এমন বিশেষ আলোচনা হয়েছিল সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে, আমরা পুরোপুরি জানি না। সুভাষচন্দ্রের এই জন্মমাসে দাঁড়িয়ে আমাদের তা জানার বিশেষ আগ্রহ থাকলেও আজ তা জানার বিশেষ সুযোগ নেই। কিন্তু আমরা অনুমান করতে পারি যে, এমন কোনও কথা হয়েছিল যার জন্য সুভাষচন্দ্রের চোখ-মুখ সে দিন রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছিল। স্বাধীনতার লড়াইয়ে নিজের জীবনের সবকিছু উৎসর্গ করে দেওয়া সুভাষ সে দিন হয়তো এমন একজন গুরুর খোঁজেই ছিলেন। তিনি পেয়েছিলেন কি এমন কিছু মন্ত্র যা তাঁকে পুরোপুরি বাকস্তব্ধ করে দিয়েছিল?
১৯৩৯ সালে সুভাষচন্দ্রের দেখা হয়েছিল যোগী মহাশয়ের সাথে। আর তার পরেই ১৯৪১ সালের ২৬ জানুয়ারি সুভাষচন্দ্রের অন্তর্ধানের খবর ছড়িয়ে পড়েছিল বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়।
১৯৩৪ থেকে ১৯৪২ পর্যন্ত এমিলিয়েকে মোট ১৬২ খানা চিঠি লিখেছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। রোম থেকে পাঠানো এক চিঠিতে যদিও তিনি দাবী করেছিলেন,
“চিঠিপত্র লেখায় আমি বেশ অনিয়মিত, তবে মানুষ হিসেবে আশা করি আমি খুব খারাপ নই।”
তবু এমিলিয়ের সাথে যোগাযোগ রক্ষায় তিনি যে নিরসল ছিলেন, তা চিঠির সংখ্যা দেখে বুঝে নিতে কারও অসুবিধা হওয়ার নয়।
স্বাধীনতা সংগ্রামী সুভাষচন্দ্র বড় রাজনীতিক হলেও ব্যক্তি সুভাষ কম বড় মানবিক নন। তার প্রমাণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তাঁর লেখা চিঠিপত্রের ছত্রে ছত্রে। কত জায়গা থেকেই না তিনি এমিলিয়েকে চিঠি লিখেছিলেন, কখনও জেলখানা থেকে, কখনও বা বন্দিগৃহ থেকে, কখনও আবার চূড়ান্ত রাজনৈতিক অগ্নিকুণ্ডের মধ্য থেকেই। এ সব চিঠিপত্র সুভাষচন্দ্রের মানবিক মুখ। কঠিন সময়েও কাছের মানুষদের কখনও তিনি বিস্মৃত হননি।
শুধু এমিলিয়েই নন, যাঁরাই সুভাষচন্দ্রের কাছে এসেছেন, তাঁরাই তাঁর আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়েছেন, তা সে কাছের মানুষই হোক বা দূরের।
কলকাতায় এলগিন রোডের বাড়িতে এ রকমই এক অপরিচিত যুবক সুনীল ঘোষ মৌলিকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল সুভাষচন্দ্রের। মুর্শিদাবাদের পাঁচথুপির ছেলে সুনীল তখন কলকাতার স্কটিশচার্চ কলেজের ছাত্র ছিলেন। ছাত্রাবস্থাতেই রাজনীতিতে তাঁর হাতেখড়ি হয়। উনিশ-কুড়ি বছর বয়সের মধ্যেই তিনি কংগ্রেস প্রাদেশিক কমিটির সদস্য হন। সেই সূত্রে তৈরি হয় শরৎ বসু-র সঙ্গে যোগাযোগ। তাঁরই অনুরোধে সুভাষচন্দ্র বসু মেদিনীপুরের কান্দি সাব-ডিভিশনের পাঁচথুপি গ্রামে এসেছিলেন।
কংগ্রেসের দলীয় কাজে সে বার তিনি মুর্শিদাবাদে। এটা ১৯২৯ সালের কথা। কাজ হয়ে গেলে পাঁচথুপিতে সুনীল ঘোষ মৌলিকের বাড়ি যান। দূরের মানুষকে কাছের করে নিয়েছিলেন এক বিকেলেই। প্রত্যক্ষ যোগাযোগ বেশী না হলেও উভয়েই শীঘ্রই পত্র-সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। সেখানেও সুভাষের মানবিক রূপ স্পষ্ট। যখনই সুনীলবাবু চিঠি দিয়েছেন, প্রত্যুত্তর দিয়েছেন সুভাষচন্দ্র। জানতে চেয়েছেন মুর্শিদাবাদের খবরাখবর। নিয়েছেন গ্রামের সংবাদ। দূরের বন্ধু বলে অবহেলা করেননি কখনও। এতটাই আন্তরিক।
এই সুনীল ঘোষ মৌলিক যখন বিবাহ করলেন, সুভাষচন্দ্র তাঁকে এক চিঠি পাঠিয়েছিলেন। সেখানে বৈবাহিক সম্পর্ক যে তাঁর কাছে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ, তা জানলে অবাক হতে হয়। যদিও ব্যক্তি-জীবন, পারিবারিক জীবন তাঁর কাছে মূল্যহীন ঠেকে যদি না তা দেশকল্যাণে লাগে।
ব্যাজাস্টাইন থেকে ১৯৩৬-এর ১৭ই মার্চের সেই চিঠিতে সুনীল ঘোষের উদ্দেশ্যে সুভাষচন্দ্র বসু লিখেছিলেন,
“কুরহ্যাং,
ব্যাজাস্টাইন,অস্ট্রিয়া।
প্রীতিভাজেনেষু,
১৭/৩/৩৬
তোমার ২২শে জানুয়ারির চিঠি যথাসময়ে পেয়েছিলাম, কিন্তু নানা দেশে ঘুরছিলাম বলে সময় মত উত্তর দিতে পারি নাই। এখন এত বিলম্ব হয়ে গেছে যে ভাবছিলাম আর লিখে কি হবে। শেষে লেখাই স্থির করলাম।
এত দিনে তোমার শুভ বিবাহ হয়ে গেছে। এরূপ ঘটনা মানুষের জীবনে এক বারই হয় এবং এই ঘটনার উপর ভবিষ্যতের ভালোমন্দ অনেক কিছু নির্ভর করে। তাই আমি প্রার্থণা করি তোমার বিবাহিত জীবন সুখময় হউক এবং দেশের ও দশের হিতার্থে তোমাদের জীবন ব্যয়িত হোক। ব্যক্তিগত বা পরিবারগত সুখের মূল্য আমার কাছে মোটেই নাই যদি ব্যক্তি এবং পরিবারবর্গের জীবন দেশের কল্যাণে নিয়োজিত না হয়, তাই আমি বিশেষ করিয়া প্রার্থণা করি যেন তোমাদের জীবন দেশের ও দশের কল্যাণে ব্যয়িত হয়। তারমধ্যেই শ্রেষ্ঠ সুখ আনন্দের আস্বাদ নিশ্চয় পাবে।
তোমার সঙ্গে কবে আবার দেখা হবে জানি না— তাই খুব দূর থেকে এই শুভ ইচ্ছা তোমার কাছে পাঠাচ্ছি। আমার ভালোবাসা জানবে।
ইতি
শুভার্থী
শ্রীসুভাষচন্দ্র বসু।”
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মরণীয় দিনগুলির মধ্যে ১৪ এপ্রিল ১৯৪৪ এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। পঁচাত্তর বছর আগে এই দিনে আজাদ হিন্দ ফৌজের কর্নেল সৌকত মালিক ইম্ফল থেকে অল্প দূরে ময়রাং-এ ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। মিলিটারি ইতিহাসের বইতে দেখা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মণিপুরের বিষেনপুর ময়রাং সেক্টরে প্রবল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়েছিল। এলাকার নিখতুখং গ্রামে হাড়গোড়ের পাহাড় জমে গিয়েছিল। ফলে নাকি ভূতের উপদ্রবও হয়েছিল। গ্রামবাসীরা শান্তিস্বস্ত্যয়ন করেছিলেন। এক ইংরেজ জেনারেল লিখে গিয়েছেন যে ঘোরতর যুদ্ধের মধ্যে তিনি হঠাৎ দেখেন গ্রামের এক কুটিরের দরজায় ভারী সুন্দর রাধাকৃষ্ণের ছবি আঁকা রয়েছে। জেনারেল সাহেবের মনে শান্তির প্রলেপ পড়েছিল।
ইম্ফল অভিযানের মিলিটারি নাম ছিল ‘অপারেশন-ইউ’। ১৪ এপ্রিল ১৯৪৪ সালে, সৌকত মালিকের ইউনিট বাহাদুর গ্রুপের আজাদি সৈনিকরা আনন্দে আত্মহারা ছিলেন। তাঁদের যুদ্ধে সাথি জাপানের ‘ফিফটিনথ আর্মি’র সেনারাও ছিলেন উৎফুল্ল। তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন যে আর দু’চার দিনের মধ্যেই মণিপুরের ইম্ফল শহরের পতন হবে। তখন ইম্ফল শহর ছিল ইংরেজদের বড় ঘাঁটি। চার দিক থেকে অবরোধ করা হয়েছিল এই শহর, ব্রিটিশদের পালাবার কোনও পথ ছিল না।
কোহিমার দিক থেকে অবরোধ করেছিলেন শাহনওয়াজ খানের নেতৃত্বে ‘সুভাষ ব্রিগেড’। বিষেনপুর ময়রাং সেক্টরে ছিল সৌকত মালিকের বাহাদুর গ্রুপ। প্যালেল-টামু পার্বত্য পথে পৌঁছে গিয়েছিলেন আইএনএ’র ফার্স্ট ডিভিশনের কমান্ডার মহম্মদ জমান কিয়ানি। সে দিক থেকে কর্নেল এনায়েত কিয়ানি গান্ধী ব্রিগেড নিয়ে মাঝে মাঝেই প্যালেল আক্রমণ করছিলেন। এক বার তিনি প্যালেল বিমানবন্দর দখলও করে ফেলেন।
জাপানি সৈন্যবাহিনীর জেনারেল ফুজিয়ারা’র বক্তব্যে মায়ানমারের মেমিয়োতে এক মিলিটারি বৈঠকের কথা জানা যায়। বৈঠকে নেতাজি বলেছিলেন, ইম্ফল অবরুদ্ধ না করে অন্তত একটা দিক খুলে রাখা হোক, ইংরেজরা যাতে পলায়ন করতে পারে। কিন্তু জাপানি জেনারেল মুতাগুচির ইচ্ছা ছিল, সমগ্র ব্রিটিশ বাহিনী-সহ ইম্ফল তিনি দখল করবেন।
পরবর্তী কালে সকলে স্বীকার করেছেন, এই ভুল সিদ্ধান্তের জন্য ইম্ফল অভিযান ব্যর্থ হয়, এবং মিলিটারি ইতিহাসে তা ‘ইম্ফল ফিয়াস্কো’ নামে পরিচিত হয়।
বিষেনপুরে একটি ছোট পাহাড়ে আজও একটি ক্ষুদ্র পাথর বসানো আছে, তাতে খোদাই করা: ‘আইএনএ-র অজানা সৈনিকদের স্মরণে।’
সৌকত মালিক আদতে পঞ্জাবের বাহাওয়ালপুরের মানুষ ছিলেন। তিনি ছিলেন এক বর্ণময় চরিত্র। তাঁর সম্পর্কে নানা কাহিনি প্রচলিত। তাঁর বক্তব্যে নেতাজি ও অন্যান্যদের নিয়ে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া যায়।
ময়রাং দখলের পর সৌকত রেঙ্গুনে এলে নেতাজি একটি বড় সংবর্ধনার আয়োজন করেছিলেন। সেখানে জাপানের ও বর্মার পদস্থ অফিসাররাও নিমন্ত্রিত ছিলেন। পানাহারের পরে সৌকত কিঞ্চিৎ মত্ত হয়ে পড়েন। মাঝে মাঝেই ‘নেতাজি’ বলে চেঁচিয়ে উঠছিলেন। এক বার তো এমন করলেন যে নেতাজি তাঁর দিকে ফিরে তাকালেন। তার পর অন্য দিকে ফিরে বা ম’র সঙ্গে আলাপ করতে লাগলেন। হবিব-উর রহমান এসে তাড়াতাড়ি সৌকতকে সরিয়ে নিয়ে গেলেন।
পর দিন খুব ভোরবেলায় সৌকত নেতাজির বাসগৃহে হাজির হলেন। এডিসি শামসের সিংহকে বলে নেতাজির সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। কোমর থেকে রিভলবার খুলে নেতাজির সামনে টেবিলে রাখলেন ও বললেন,
‘‘কাল আমি যা ব্যবহার করেছি তা আইএনএ অফিসারের উপযুক্ত নয়। আমি আর এ প্রাণ রাখব না। আত্মহত্যা করা মহাপাপ। কিন্তু আপনার হাতে শাস্তি পেলে আমি বেহেশত যাব।’’
নেতাজি শান্ত ভাবে চেয়ে বললেন, ‘‘সৌকত, তোমার কী প্রয়োজন জানো? একটু বিশ্রাম। তোমার ওপর দিয়ে অনেক ঝড় গিয়েছে, বিশ্রাম নাও। সব ঠিক হয়ে যাবে।’’
এরপরে নেতাজি তাঁকে ব্যাঙ্ককে ছুটি কাটাতে পাঠিয়েছিলেন, খরচ করার জন্য কিছু অর্থও দিয়েছিলেন।
ইম্ফলের যুদ্ধে সৌকত মালিক বীরযোদ্ধা হিসেবে এক উজ্জ্বল নাম। তেমনই এক হাসিখুশি, মিশুকে মানুষ হিসেবে সহযোদ্ধাদের কাছে তিনি ছিলেন জনপ্রিয়। মণিপুর রণাঙ্গনে বীরত্বের জন্য নেতাজি সৌকত মালিককে ‘সর্দার-এ-জঙ্গ’ উপাধি প্রদান করেন।
যুদ্ধের সময় মনিপুরে থাকা আজাদ হিন্দ ফৌজের যোদ্ধাদের বক্তব্যে জানা যায়, নেতাজি যুদ্ধের মধ্যে সীমান্ত পার হয়ে চূড়াচাঁদপুরে প্রবেশ করেছিলেন। সেখানকার সাইকট গ্রামের রাজা অর্থাৎ জনজাতি প্রধান, যাঁর নাম ছিল ‘কলবেল’, তিনি সাক্ষাৎ করেছিলেন নেতাজির সাথে। ব্যবস্থা করেছিলেন নেতাজি ও তাঁর সাথে থাকা আজাদ হিন্দ ফৌজের বীর যোদ্ধাদের অতিথি সৎকারের। সম্প্রতি একটি বাংলা দৈনিকে তাঁর সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর বক্তব্য থেকে জানা যায় যে, চূড়াচাঁদপুরে আজাদি সৈনিকদের একটি ছাউনি ছিল। সেটা পরিদর্শন করতে নেতাজি এসেছিলেন। ওই স্থানে একটি পাহাড়ি এলাকায় একটি মস্ত ছাতিম গাছ আজও বর্তমান। সেই গাছের তলায় নেতাজি বসেছিলেন। ছাউনি থেকে বিশাল সেনার দল পাহাড়ের ঢালুতে বসেছিল। সে রাতে খুব চাঁদের আলো। রাজা কলবেল সৈনিকদের জন্য চায়ের ব্যবস্থা করেছিলেন, নেতাজিকে দিয়েছিলেন এক গ্লাস দুধ। নেতাজি বলেছিলেন,
‘‘আমার সৈনিকেরা যা খায়, আমিও শুধু তা-ই খেয়ে থাকি।’’
তবুও মাননীয় অতিথির প্রতি জনজাতি প্রথা মেনে তিনি সেই দুধ গ্রহণ করেছিলেন। নেতাজি বলেছিলেন, ‘‘তোমরা আমাদের সৈনিকদের খাদ্যসামগ্রী দিয়ে অনেক সাহায্য করেছ, দেশ স্বাধীন হলে আমরা সে কথা মনে রাখব।’’
এক টুকরো কাগজে কিছু লিখে নেতাজি, ‘কলবেল’ এর হাতে দিয়েছিলেন। ইংরেজরা ফিরে এসে এলাকা দখল করলে রাজা কলবেল একটি তোরঙ্গের মধ্যে সেই কাগজ রেখে মাটির তলায় লুকিয়ে রাখেন। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, তোরঙ্গে জল ঢুকে সব কাগজপত্র নষ্ট হয়ে যায়।
শাহনওয়াজ খান বলেছেন, নিষেধ না মেনে নেতাজি যুদ্ধের মধ্যে সীমান্তবর্তী অঞ্চল পরিদর্শন করতেন, মাঝে মাঝে ভারতে ঢুকেও পড়তেন।
নাগাল্যান্ডেও এ বিষয়ে জনশ্রুতি আছে। গবেষকের পক্ষে ক্রসচেকিং না করে তথ্য গ্রহণ করা সম্ভব নয়।
নেতাজি আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে গিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু পেছনে ফেলে গেছেন তার আন্তরিকতা, মানবিকতা আর দেশ কল্যাণের মহান আদর্শ। আজ হিংসা-দ্বেষ দীর্ণ সমাজে তাই তাঁর দৃষ্টান্ত বিশেষভাবে অনুসরণযোগ্য।
(তথ্যসূত্র:
১- সুভাষের সঙ্গে বারো বছর, হেমন্তকুমার সরকার।
২- যোগীবর বরদাচরণ, অমরনাথ রায়, সদর প্রকাশনী (২০১৮)।
৩- আমাদের সুভাষচন্দ্র, পবিত্র সরকার, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ (২০১৫)।
৪- শ্রীসুভাষচন্দ্র বসু সমগ্র রচনাবলী (প্রথম থেকে দশম খন্ড), আনন্দ পাবলিশার্স (২০১৫)।
৫- বিতর্কের বিন্যাসে সুভাষচন্দ্র, পিনাকী ভাদুড়ী, পুনশ্চ (২০১০)।
৬- মুর্শিদাবাদে সুভাষচন্দ্র, পুলকেন্দু সিংহ, শিল্পনগর প্রকাশনী (২০১২)।
৭- নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অপ্রকাশিত পত্রাবলি, আবুল আহসান চৌধুরী, শোভা প্রকাশ।
৮- দেশনায়ক সুভাষচন্দ্র, নিমাইসাধন বসু, আনন্দ পাবলিশার্স।
৯- সুভাষচন্দ্র, নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ।
১০- আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৪শে জানুয়ারি ২০১৯ সালে প্রকাশিত দুটি প্রবন্ধ।
১১- আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৩শে জানুয়ারি ২০১৯ সাল।
১২- আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৪ই এপ্রিল ২০১৯ সাল।)
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত