বরাবরই বেফাঁস মন্তব্য করে বিতর্ক বাধানো ও লোক হাসানোয় ওস্তাদ গেরুয়া শিবিরের নেতা-মন্ত্রীরা। তা সে বিজেপি সাংসদ সাধ্বী প্রজ্ঞাই হোক বা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্ক। তবে এবার বেফাঁস মন্তব্য করে বিতর্ক বাধালেন স্বয়ং লোকসভার স্পিকারই! ব্রাহ্মণেরা সমাজে শ্রেষ্ঠ! – এবার এমনই মন্তব্য করতে শোনা গেল স্পিকার ওম বিড়লাকে। স্বাভাবিকভাবেই এ নিয়ে তৈরি হয়েছে জোর বিতর্ক। নিরপেক্ষতার শপথ নিয়ে যিনি সাংবিধানিক পদে বসেছেন, তিনি কীভাবে একটি বর্ণের শ্রেষ্ঠত্বের প্রশ্নে সওয়াল করতে পারেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অবিলম্বে ওমকে স্পিকারের পদ থেকে সরানোর দাবিও উঠেছে। যদিও অনেকের আশঙ্কা, সঙ্ঘ পরিবার ও বিজেপির সুরে কথা বললে এখন সাত খুন মাফ হয়ে যায়। ওমও ছাড় পেয়ে যেতে পারেন। কারণ বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের কাছে তাদের আদর্শই শেষ। সংবিধান মূল্যহীন।
প্রসঙ্গত, রাজস্থানের কোটায় অখিল ভারতীয় ব্রাহ্মণ মহাসভায় যোগ দিয়েছিলেন ওম। সেখানে গত রবিবার তিনি বলেন, ‘ত্যাগ ও তপস্যার কারণে ব্রাহ্মণেরা বরাবরই সমাজে উচ্চ স্থানে আসীন। তাঁরা সমাজে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করে এসেছেন।’ লোকসভা পরিচালনার ভার যাঁর কাঁধে, তাঁর এমন মন্তব্য থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত। ওম যে ভাবে জাতিভেদ প্রথা ও ব্রাহ্মণদের শ্রেষ্ঠত্বকে তুলে ধরেছেন তা আদৌও মানতে রাজি নন ইতিহাসবিদ গৌতম ভদ্র। তাঁর মতে, ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম হলেই কেউ ব্রাহ্মণের গুণের অধিকারী হন না। তিনি বলেন, ‘ব্রাহ্মণ বলতে কিছু সদাচারকে বোঝায়। ব্রাহ্মণের গুণ থাকলে যে কেউ ব্রাহ্মণ হতে পারেন। ধর্মপদে বলা হয়েছে, মন্ত্র দিয়ে ব্রাহ্মণ হয় না। গুণ থাকতে হয়। এক জন চণ্ডালও সদগুণ থালে ব্রাহ্মণ হতে পারেন।’
এই সূত্রে গৌতম বাবু স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ‘বৌদ্ধ দার্শনিকদের মতে ব্রাহ্মণদের মতো অত্যাচারী আর কেউ নেই। তাছাড়া ব্রাহ্মণ্যবাদ জাতিভেদ প্রথাকে তুলে ধরে। বিজেপি ব্রাহ্মণ্যবাদের সমর্থক। ব্রাহ্মণের মূল ক্ষমতা ছিল যজ্ঞের অধিকার। তাই বুদ্ধদেব যজ্ঞের বিরোধী ছিলেন।’ আবার, স্পিকারের ওই বক্তব্যের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিস (পিইউসিএল)-এর রাজস্থান শাখার সভাপতি কবিতা শ্রীবাস্তব। তাঁর দাবি, স্পিকারকে ওই মন্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। কবিতা বলেন, ‘একটি বর্ণ বা জাতকে অন্যদের চেয়ে ভাল বলা বা একটি জাতের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা ভারতীয় সংবিধানের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। এটা এক দিকে অন্য বর্ণকে খাটো করে দেখায় তথা জাতিভেদ প্রথাকে আরও উৎসাহিত করে।’