প্রথম মোদী সরকারের আমল বারবারই কেন্দ্রীয় বঞ্চনার শিকার হয়েছে এ রাজ্য। সেই ধারা বজায় রয়েছে মোদী সরকারের দ্বিতীয় ইনিংসেও। তাদের পেশ করা প্রথম বাজেটে বাংলার জন্য কোনও বিশেষ প্রকল্পের ঘোষণা তো হয়ইনি, বরং রাজ্যের বেশ কিছু চলতি প্রকল্পে বরাদ্দ শুন্য করে দেওয়া হয়েছে। এমনকী দিন দুয়েক আগেই জানা গিয়েছিল যে, অনুমোদনের পরেও রাজ্যকে নদী সংস্কার ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে প্রয়োজনীয় অর্থ দিচ্ছে না কেন্দ্র। আর এবার সামনে এল রাজ্যের চালু গ্রামীণ পানীয় জল প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রের কাছে প্রাপ্য ৮০০ কোটি টাকা।
হ্যাঁ, চলতি আর্থিক বছরের প্রথম পাঁচ মাস কেটে গিয়েছে। তবু একটি পয়সাও রাজ্যের ভাঁড়ারে পাঠায়নি কেন্দ্র। ফলে প্রকল্প চালু রাখতে টাকার জোগান নিয়ে এখন চিন্তায় রাজ্য। প্রসঙ্গত, রাজ্যে এই মুহূর্তে ৫১৩টি ছোট-বড় প্রকল্প চালু রয়েছে। এর মধ্যে ৫০০টি জাতীয় গ্রামীণ পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্পের। সবই ছোট মাপের। যা থেকে উপকৃত হবেন এক বা একাধিক পঞ্চায়েত এলাকার মানুষ। কেন্দ্র ২০০৯ সালের ১ এপ্রিল থেকে গ্রামাঞ্চলে বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ নিশ্চিত করতে এই প্রকল্প গ্রহণ করে। এর ৫০ শতাংশ অর্থ কেন্দ্র দেয়। বাকি টাকা রাজ্য সরকারকে দিতে হয়।
এই মুহূর্তে রাজ্যে এই কর্মসূচীর মাধ্যমে ৫০০টি প্রকল্পের অনুমোদন রয়েছে। যার অধিকাংশের রূপায়ণের কাজ চলছে বা চালু হওয়ার মুখে। গোড়ায় ভোটের জন্য নাহয় টাকা আসতে দেরি হয়েছে। কিন্তু নতুন সরকার গঠন হওয়ার পরেও কেন্দ্র চলতি আর্থিক বছরে এখনও টাকা দেয়নি। রাজ্য আর্থিক টানাপোড়নের মধ্যেও নিজস্ব অংশের টাকা খরচ করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, ‘ভোটের জন্য জানুয়ারি থেকেই কেন্দ্র কোনও অর্থ বরাদ্দ করেনি। ভোটের পরেও পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি। রাজ্য সরকার গ্রামীণ মানুষের কথা মাথায় রেখে সাধ্যমতো নিজের অংশের টাকা দিয়ে প্রকল্পগুলি রূপায়ণ করে চলেছে। আর্সেনিক ও ফ্লোরাইড আক্রান্ত গ্রামের জন্য জাতীয় মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে কেন্দ্র। এই প্রকল্পে রাজ্যে ৬০৫ কোটি টাকার ২৪টি অনুমোদনও আটকে রেখেছ নয়াদিল্লী।’
জানা গেছে, রাজ্য সরকার অবশ্য নিজস্ব উদ্যোগেই হাওড়া, হুগলি, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ ও পশ্চিম মেদিনীপুরে ৯টি বড় পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। যা থেকে উপকৃত হবেন ৪৯ লক্ষ ৬০ হাজার মানুষ। তবে রাজ্যের বক্তব্য, জাতীয় গ্রামীণ পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় যে সব পাইপলাইনের কাজ চলছে বা যে প্রকল্পগুলি অনুমোদন পেয়ে গিয়েছে কিন্তু কাজ শুরু হয়নি, তার ভবিষ্যৎ কী হবে? কারণ এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাড়িতে নয়, এলাকায় পাইপলাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহ করা হয়। বাড়ি বাড়ি এই জল পৌঁছে দিতে হলে খরচ অনেকটাই বাড়বে।