দ্বিতীয় বারের জন্য মোদী সরকার ক্ষমতায় ফিরতেই বেসরকারিকরণের পথে হাঁটছে রেল! ইতিমধ্যেই নয়াদিল্লী-লখনউ তেজস এক্সপ্রেসের হাত ধরে প্রথম ট্রেন বেসরকারিকরণ করেছে মোদী সরকার। সারা দেশে রেলের ১৪টি ছাপাখানার মধ্যে গত বছর ন’টি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পরে বাকি পাঁচটি বড় ছাপাখানা (মুম্বই, হাওড়া, দিল্লী, চেন্নাই ও সেকেন্দ্রাবাদ)-ও বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল। এবার পূর্ব রেলের ব্যান্ডেল–কাটোয়া রেলপথের চারটি পূর্ণাঙ্গ স্টেশনকে ঠিকাদারের হাতে তুলে দেওয়ার মত তুঘলকি সিদ্ধান্ত নিল রেল। প্রতিবাদে মুখর হলেন যাত্রীরা।
পূর্বস্থলীর ভাণ্ডারটিকুরি ও লক্ষ্মীপুর এবং কালনার বাঘনাপাড়া ও কালীনগর স্টেশন, এই ৪ স্টেশন ঠিকাদারকে দেওয়ার ঘোষণা করেছে রেল। প্রতিবাদে হাওড়া–কাটোয়া সুবার্বান প্যাসেঞ্জারস অ্যাসোসিয়েশনের ডাকে রবিবার লক্ষ্মীপুর স্টেশনের সভায় সব মানুষ হাজির হন। মহিলাদেরও হাজিরা ছিল চোখে পড়ার মতো। পূর্বস্থলীর লক্ষ্মীপুর স্টেশনের প্রতিবাদ সভায় এলাকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও হাজির ছিলেন। পূর্বস্থলী ২ নং পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি তৃণমূল নেতা তপন চট্টোপাধ্যায়ও হাজির ছিলেন এই প্রতিবাদ সভায়। তপনবাবু বলেন, ‘বিজেপি সরকার একটার পর একটা মানুষ মারার নীতি নিচ্ছে। রেল স্টেশনকে ঠিকাদারদের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত রুখতে হবে যে কোনও মূল্যেই। আমি বা আমার দল যাত্রী সংগঠনের আন্দোলনের পাশে থাকব। যাত্রী পরিষেবা ব্যাহত করার কোনও সিদ্ধান্ত বরদাস্ত করা যাবে না।’
সংগঠনের পক্ষে দেবাশিস বসু, অশোক চৌধুরিরা বলেন, ‘রেল সারা দেশে সাড়ে ৩ লক্ষ কর্মী ছাটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই চারটি স্টেশনকে ঠিকাদারের হাতে তুলে দিলে যাত্রী পরিষেবা লাটে উঠবে।’ এই রেলপথের ঠিকাদারের অধীনে থাকা নান্দাই ও সাহেবতলা হল্ট স্টেশনের উদাহরণ টেনে তাঁরা বলেন, ‘ওই স্টেশনগুলিতে ঠিকঠাক টিকিট মেলে না। পানীয় জল, আলো, শৌচাগারের বেহাল দশা। স্টেশনজুড়ে আগাছা।’
সংগঠনের তরফে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এই ৪ পূর্ণাঙ্গ স্টেশনকে ঠিকাদারদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রতিবাদে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হবে। অন্তত ১০ হাজার স্বাক্ষর–সংবলিত প্রতিবাদপত্র নিয়ে হাওড়ায় গিয়ে পূর্ব রেলের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি তোলা হবে। বছর চারেক আগে এই ব্যান্ডেল–কাটোয়া রেলপথের ডুমুরদহ স্টেশনটিকে ঠিকাদারের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় রেল। কিন্তু যাত্রিসাধারণের লাগাতার আন্দোলনে শেষমেশ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়। এবারও সেই জেদ নিয়ে মাঠে নেমেছে হাওড়া–কাটোয়া সুবার্বান প্যাসেঞ্জারস অ্যাসোসিয়েশন। সেই সঙ্গে প্রত্যেক যাত্রী যাতে টিকিট কেটে ট্রেনে চাপেন, সেই প্রচারও করা হচ্ছে।