চিত্রসাংবাদিকদের প্রেস ক্লাব, কলকাতার সাধারণ সদস্যপদ ও ভোটাধিকার প্রদানের সমস্যার সমাধানের একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ক্লাবের ৭৫ বছরের বার্ষিক সাধারণ সভায় দেখা গেল বহু প্রবীণ ও নবীন সাংবাদিক এব্যাপারে আমাদের দাবির সঙ্গে সহমত। সভায় অনেকেই চিত্রসাংবাদিকদের বঞ্চনার ব্যাপারে সরব হয়েছেন। যে কোন দাবি বা অধিকারের ব্যাপারে বিরোধিতা আসাটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। আমাদের এই দাবি নিয়েও অনেকের আপত্তি থাকতেই পারে। কিন্তু তা কখনোই যেন ব্যাক্তিগত আক্রোশ বা ঝগড়ায় পরিণত না হয়।
৭৫ বছরে ক্লাব যে সাবালক হয়েছে তার একটা বড় প্রমাণ গতকালের সাধারন সভাতেই দেখা গেছে। একজন সদস্য চিত্রসাংবাদিকদের সম্পর্কে কুৎসিত মন্তব্য করতেই সমবেত বহু প্রবীণ ও নবীন সাংবাদিক একসঙ্গে তার প্রতিবাদ করলেন। সবচাইতে বেশি সরব হলেন মহিলা সদস্যরা। ক্লাবের নব নির্বাচিত সদস্যরাও মনে করেন আলাপ, আলোচনা, মতবিনিময়ের মাধ্যমে যেকোন সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। বিশেষকরে ক্লাবের পুনরায় নির্বাচিত সভাপতি স্নেহাশিস এবং সম্পাদক কিংশুক আমাদের সমস্যাটির সমাধানে সচেষ্ট হবেন বলে জানিয়েছেন। সব চিত্রসাংবাদিকদের তরফে আমাদের অনুরোধ বিবেচনার আশ্বাস দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
গতকাল ক্লাবের ভোটের দিন রাজ্যের চিত্রসাংবাদিকরা নিজেদের মধ্যে সংহতির এক নজির সৃষ্টি করলেন। সকাল থেকে তারা জড়ো হয়েছিলেন ক্লাবের গেটে। একটা ছোট লিফলেটের মাধ্যমে নিজেদের কথা তুলে ধরছিলেন ভোট দিতে আসা সাংবাদিকদের কাছে। দিনভোর থেকে থেকে মুষলধারে বৃষ্টিও তাদের সরাতে পারেনি। নিজেদের অধিকারের দাবিতে শহরের প্রবীণ ও নবীন চিত্রসাংবাদিকদের সঙ্গে গতকাল ক্লাবের গেটে উপস্থিত হয়েছিলেন রাজ্যের বিভিন্ন জেলার চিত্রসাংবাদিক। অনেকদিন পরে চিত্রসাংবাদিকদের যৌথভাবে নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য এমনভাবে সচেষ্ট হতে দেখা গেল।
দিনের শেষে ক্লাবের সভাপতি স্নেহাশিস ও কিংশুক আমাদের যেভাবে ক্লাবের ভিতরে ডেকে নিয়ে গেলেন তা আমাদের খুব ভালো লেগেছে। আমাদের মনে পড়েছে অফিসে কিংবা অফিসের বাইরে যেকোন অ্যাসাইনমেন্টে গিয়ে আমরা তো এভাবে একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করি। পেশাদারি প্রতিযোগিতা থাকে, মতান্তর থাকে কিন্তু তা কখনোই মনান্তরে পরিণত হয়না। ক্লাবেই বা তা হবে কেন? আমরা জানি যারা দায়িত্বে থাকেন তাদের অনেক সীমাবদ্ধতাও থাকে। তাই তাদেরকে একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় দিতে হয়। আমাদের বিশ্বাস কিংশুক ও স্নেহাশিস আমাদের ব্যাপারে নিশ্চয়ই কোন ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা মনে করি, ক্লাবের নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরাও আমাদের দাবিগুলির প্রতি সহানুভূতিশীল হবেন। আমরা আশা রাখি, হয়তো পরের বৈঠকেই চিত্রসাংবাদিকদের সাধারণ সদস্যপদ ও ভোটাধিকারের ব্যাপারে কোন ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হবে।
গতকালের সাধারণ সভা আমাদের কাছেও একটা শিক্ষা। এক, আমরা চিত্রসাংবাদিকরা উপলব্ধি করলাম নিজেদের সংহতির শক্তি। দুই, আমরা বুঝতে পারলাম ক্লাবের প্রবীণ ও নবীন সদস্যদের একটা বড় অংশ আমাদের দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল। তিন, অশান্তি ও কুৎসা নয় গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা চালালে একটা ইতিবাচক সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর সম্ভাবনা তৈরি হয়।
আমাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ধন্যবাদ শব্দটা যথেষ্ট নয়। আশা করি বাংলার চিত্রসাংবাদিকরা ভবিষ্যতে আপনাদের সবাইকে পাশে পাবেন।
আমরা অন্ধকারে আলোর রেখা দেখতে পেলাম।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত