এক মানবিক চিত্র। নিজে সাঁতার না-জেনেও অন্য এক ডুবন্ত শিশুকে উদ্ধার করতে তৎপর হল এক স্কুল পড়ুয়া। এই ঘটনায় সাড়া পড়ে গেছে এলাকা জুড়ে। সোমবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে কাকদ্বীপের রাজনগর এলাকায়। উদ্ধারকারী সোমনাথ মাইতি স্থানীয় রাজনগর শ্রীনাথ বাণী বিদ্যাপীঠের অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া।
উদ্ধারের পর অসুস্থ শিশুকে নিয়ে সাইকেলে সোমনাথ এবং তার বন্ধুরা প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে পৌঁছয়। সময়োচিত তৎপরতায় প্রাণরক্ষা হয় বছর তিনেকের শিশুটির। আপাতত সে বিপদমুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তবে সোমনাথের এই প্ৰচেষ্টা ও মানবিকতা দেখে খুশির হাওয়া সর্বত্র।
স্থানীয় সূত্রের খবর, স্কুল ছুটির পর সাইকেলে বাড়ি ফিরছিল বছর চোদ্দর সোমনাথ। হঠাৎ সে দেখতে পায়, একটি শিশু রাস্তার অদূরে পুকুরের জলে হাবুডুবু খাচ্ছে। কিন্তু আশেপাশে কেউ নেই। সোমনাথও সাঁতার জানত না। প্রথমে তাই জলে নামতে ভয় পাচ্ছিল। কিন্তু চিৎকার করেও কেউ আসছে না দেখে নিজেই ঝাঁপিয়ে পড়ে পুকুরে। কিছুক্ষণের চেষ্টায় জল থেকে উদ্ধার করে ওই শিশুটিকে। সেই সময় সোমনাথের কয়েকজন সহপাঠী ওই রাস্তা দিয়ে সাইকেলে বাড়ি ফিরছিল। সোমনাথকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে তারাও। শিশুটি তখন নেতিয়ে পড়েছে। সেই পরিস্থিতিতে সাইকেলে করে শিশুটিকে কাকদ্বীপ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য রওনা হয় তার। যাওয়ার পথেই পরিচিত কয়েকজনকে ঘটনাটি জানায়।
সোমনাথের মা রত্না মাইতি বলেন, ‘এতদিন ছেলের নামে শুধুই অভিযোগ আসত বাড়িতে। সেই ছেলের কাজে আজ গর্ব হচ্ছে।’ সোমনাথ এদিন বলে, ‘আমি সাঁতার কাটতে পারি না। কিন্তু চোখের সামনে শিশুটি ডুবে যাচ্ছে দেখে আমি চুপ করে থাকতে পারিনি। অন্যদের সাঁতার কাটার কথা মনে করে পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে দু’হাতের ঝাপটা দিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি।’
স্কুল কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার তাকে সংবর্ধনা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। স্কুলের শিক্ষক সৌম্যকান্তি জানা বলেন, ‘নিজের জীবনের তোয়াক্কা না-করেই শিশুটিকে বাঁচানোর জন্য জলে ঝাঁপ দিয়ে সোমনাথ বড় মনের পরিচয় দিয়েছে। ওকে কুর্নিশ জানাই। আমরা এই সাহসী ছাত্রকে সংবর্ধিত করব।’