বহুদিন যাবৎ উৎকণ্ঠা দানা বাঁধছিল আসাম জুড়ে। অবশেষে দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে শনিবার সকাল দশটায় প্রকাশিত হয়েছে আসামের জাতীয় নাগরিকপঞ্জী বা এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা। যা থেকে বাদ গিয়েছে ১৯ লক্ষ ৬ হাজার ৬৫৭ জনের নাম। আপাতত এঁদের প্রত্যেকেরই ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে। উল্টোদিকে, নাগরিকপঞ্জীতে যাঁদের নাম রয়েছে, দীর্ঘ টালবাহানার পর তাঁদের জীবনে অন্তত স্বস্তি ফিরেছিল। কিন্তু ফের তাঁদের রাতের ঘুম উড়তে পারে। কারণ নাগরিকপঞ্জী পুনর্যাচাইয়ের জন্য এবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছে আসাম সরকার। ফলে প্রয়োজনে ফের ডাকা হতে পারে এনআরসি তালিকাভুক্তদেরও।
প্রসঙ্গত, নাগরিকপঞ্জীর চূড়ান্ত তালিকা তৈরির পদ্ধতি নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ কোথাও বাদ পড়েছেন ভূমিপুত্ররাই, তো কোথাও প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ফকরুদ্দিন আলি আহমেদের আত্মীয়-পরিজনরা। যার ফলে প্রশ্ন উঠছে, তাহলে টানা ৬ বছর ধরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কো-অর্ডিনেটর প্রতীক হাজেলার নেতৃত্বে কাজ কি দায়সারা ভাবেই হয়েছে? উত্তর যদিও অধরা। তবে নাগরিকপঞ্জীর তালিকা তৈরির পদ্ধতিতে যে কোনও পক্ষই বিশেষ খুশি নয়, তা আর গোপন নেই। যেমন বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন আসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈও।
তিনি বলেন, ‘যে হিন্দু বাঙালিরা ভোট দিয়ে ওদের এনেছিল, তাদের বেশিরভাগেরই নাম নেই। হিন্দিভাষী, গোর্খা, মুসলিম অনেকেরই নাম নেই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এই নাম বাদ যাওয়ার তালিকার অধিকাংশই হিন্দু বাঙালি। ওরা হিন্দুর নামে ভোট দিয়েছিল, আর ওদেরই সবচেয়ে খারাপ করল বিজেপি। এখানে হিন্দু বাঙালিরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।’ ফলে এনআরসি তালিকা প্রকাশের পর গোটা বিষয়টাই যে বিজেপির কাছে বুমেরাং হয়ে গেছে তা বলাই বাহুল্য। আর সেই কারণেই এবার তা পুনর্যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
জানা গেছে, আসাম-বাংলাদেশ লাগোয়া সীমান্তবর্তী জেলা যেমন ধুবড়ি, বড়পেটা, দক্ষিণ শালমারা, কাছার, কমিরগঞ্জ এবং হাইলাকান্দির ২০ শতাংশ রি-ভেরিফিকেশনের দাবি জানানো হবে। বাকি জেলাগুলির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ পুনর্যাচাইয়ের দাবি তোলা হয়েছে। এই মর্মে অল আসাম স্টুডেন্ট ইউনিয়ন, এপিডব্লিউ-সহ অন্যান্য সংগঠনগুলিকে জোটবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। গোটা প্রক্রিয়ায় ভীষণই অসন্তুষ্ট তিনি। তাঁর উদ্যোগে এই দাবি জোরাল হয়ে ওঠায় আরও একবার বিপাকে পড়তে পারেন নাগরিকপঞ্জীর তালিকাভুক্তরা। কারণ পুনর্যাচাইয়ের প্রক্রিয়ায় দরকার পড়লে তাঁদেরও ডাকা হতে পারে বলেই খবর। ফলে আবারও আসামজুড়ে পরিবেশ থমথমে।