বেলা ১২টা ৪৫ মিনিট থেকেই কাউন্টডাউন শুরু হয়েছিল। বেলা সোয়া ১টা নাগাদ উল্লাস করে উঠলেন ইসরোর মহাকাশবিজ্ঞানীরা। কারণ ঠিক সেই সময়েই চাঁদের পঞ্চম কক্ষপথে চন্দ্রযান ২ থেকে আলাদা হয়ে গেল ল্যান্ডার ‘বিক্রম।’ ইসরো জানিয়েছে, গতি কমিয়ে এর পর ধীরে ধীরে চাঁদের আরও কাছাকাছি পৌঁছবে সে। চন্দ্রপৃষ্ঠের ১০০ কিলোমিটার উপর থেকে চাঁদকে পাক খাবে চার দিন। তারপর সফট ল্যান্ডিং হবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে।
শ্রীহরিকোটার সতীশ ধবন মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্রের দ্বিতীয় লঞ্চপ্যাডকে গুডবাই জানিয়েছিল ২২ জুলাই। এক মাসের মাথায় ২০ আগস্ট পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের মায়া কাটিয়ে ‘বাহুবলী’ ঢুকে গিয়েছিল লুনার অরবিট অর্থাৎ চাঁদের কক্ষপথে। একটার পর একটা কক্ষপথের বেড়াজাল কাটিয়ে ভারতের চন্দ্রাভিযান আজ, সোমবার সাফল্যের প্রথম সিঁড়িতে পা রাখল। ৪৩ দিনের মাথায় আজই ল্যান্ডার ‘বিক্রম’কে নিজের থেকে আলাদা করল চন্দ্রযান ২। পেটের ভিতর রোভার ‘প্রজ্ঞান’কে পুরে সে এবার এগিয়ে চলেছে চাঁদের আরও কাছাকাছি।
আজ, ২ সেপ্টেম্বর বেলা ১২টা ৪৫ মিনিট থেকে ১টা ৪৫ মিনিটের মধ্যে চন্দ্রযান থেকে আলাদা হলো ল্যান্ডার বিক্রম। সফট ল্যান্ডিংয়ের জন্য ছক সাজানো শুরু করে দিয়েছে সে। ৩ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে এবং ৪ সেপ্টেম্বর ভোররাত ৩টে থেকে ৪টের মধ্যে দু’দফায় বিক্রমের পথ বদল করা হবে। কক্ষপথ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার এটি বিশেষ প্রক্রিয়া। এর পর শুরু হবে চাঁদকে ঘিরে পরিক্রমা। ৬ সেপ্টেম্বর রাত ১টা ৫৫মিনিটে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে (৭০ ডিগ্রি অক্ষাংশ) পালকের মতো নেমে যাবে ল্যান্ডার ‘বিক্রম’।
৭ সেপ্টেম্বর ভোর সাড়ে ৫টা থেকে সাড়ে ৬টার মধ্যে ল্যান্ডার ‘বিক্রম’ থেকে বেরিয়ে যাবে রোভার ‘প্রজ্ঞান’। চাঁদের মাটিতে ঘুরে ঘুরে সে কাজ শুরু করবে।
চাঁদের কক্ষপথ পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ৩ লক্ষ ৮২ হাজার কিলোমিটার দূরে। ইসরোর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, নামার আগে আরও চার দিন চাঁদকে প্রদক্ষিণ করবে ল্যান্ডার। তারপর ধীরেসুস্থে নামবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে (৭০ ডিগ্রি অক্ষাংশ) । ইজেক্ট করবে ২৭ কেজি ওজনের ৬ চাকার রোভার ‘প্রজ্ঞান’কে। চাঁদের মাটিতে ঘুরে ঘুরে ছবি ও তথ্য পাঠাবে সে।
চাঁদের এক পক্ষকাল সময় অর্থাৎ ১৪ দিন ধরে কাজ করতে পারবে ‘বিক্রম।’ রোভারও সচল থাকবে ১৪ দিন ধরে। প্রতি বারে ১৫০-২০০ মিটার অবধি গুটি গুটি পায়ে এগোতে থাকবে সে। পরীক্ষামূলক ভাবে চাঁদের মাটি, তার রাসায়নিক উপাদানের কাটাছেঁড়া করতে পারবে। প্রতি ১৫-২০ মিনিট অন্তর অরবিটারের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্য গ্রাউন্ড স্টেশনে পাঠাবে রোভার।