১১ বছর পর শুক্রবার যখন রজার ফেডেরার বনাম রাফায়েল নাদাল ম্যাচটা শুরু হল, দুই তারকার বয়স যেন থেমে সেই ২০০৮ সালেই। সেই একই উদ্যম, একই উত্তেজনা। টক্কর এখনও সমানে-সমানে। শেষ পর্যন্ত ফেডেরার ফাইনালে ৭-৬, ১-৬, ৬-৩, ৬-৪ জিতে। এই নিয়ে ১২ বার। শুক্রবারের রাফা-রজার লড়াই পাঁচ সেটে গড়াল না ঠিকই কিন্তু প্রতিটা পয়েন্টের জন্য যতটা পরিশ্রম, ঘাম ঝড়ল দুই তারকার, তাতে নিঃসন্দেহে উইম্বলডনের অন্যতম সেরা ম্যাচের তকমা পেয়ে যাবে এই ম্যাচ।
প্রথম সেটে রাফা বা রজার কেউই ব্রেক পয়েন্ট নিয়ে গেম জিততে পারলেন না। সেট গড়াল টাইব্রেকারে। কখনও নাদাল দুরন্ত সার্ভিসে গেম জিতে নেন, তো পরের গেমেই ফেডেরার উইনার জিতলেন অসম্ভব জোরালো ফোরহ্যান্ডে। কখনও নাদালের ডাউন দ্য লাইন ফোরহ্যান্ডের জবাব এল ফেডেরারের মসৃণ ব্যাকহ্যান্ডে। এমনি এমনি কী আর এই ম্যাচ ঘিরে এত উত্তেজনা! স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন, ডেভিড বেকহ্যামের মতো ব্যক্তিত্ব সেই উত্তেজনার স্বাদ নিচ্ছিলেন সেন্টার কোর্টের রয়্যাল বক্সে।
ফেডেরার ৭-৬, ১-৬, ৬-৩, ৬-৪ সেটে জিতল। কী সার্ভিস, কী ব্যাকহ্যান্ড, কী আগ্রাসন! কোনটা ছেড়ে কোনটার কথা বলব। এত দিন ফেডেরারের ব্যাকহ্যান্ডকেই দুর্বলতা ধরে নিয়ে আক্রমণ করে এসেছে ওর প্রতিদ্বন্দ্বীরা। ফেডেরার তিন-চারটে ব্যাকহ্যান্ড বেস লইন থেকে মারলে, একটা ভুল জায়গায় পড়বেই ধরে নিত প্রতিপক্ষ। কিন্তু শুক্রবার ফেডেরারের দুর্বলতাই ওর অস্ত্র হয়ে উঠেছে। নিখুঁত ব্যাকহ্যান্ডে চমকে দিয়েছে নাদালকে।
প্রথম সেটে শুরু থেকেই দু’জনে খুব সতর্ক ভাবে খেলছিল। তাই সেটটা টাইব্রেকে গড়ায়। সেখানেই নাদাল প্রথমে ৩-২ এগিয়ে গিয়েছিল কিন্তু ফেডেরার সেখান থেকে টানা পাঁচটা পয়েন্ট জিতে সেট দখল করে নেয়। যদি ওই সেটটা নাদাল জিততে পারত, ম্যাচের ফল অন্য দিকে গড়ানোর তবুও একটা সম্ভাবনা ছিল।
কিন্তু ফেডেরার ওই সেটটা জেতার পরে আত্মবিশ্বাস দ্বিগুণ হয়ে যায়। তবে নাদাল মরিয়া আক্রমণ করার চেষ্টা করেছিল দ্বিতীয় সেটের গোড়াতেই ফেডেরারের সার্ভিস ভেঙে দিয়ে। ফেডেরারের কৌশল ছিল নাদাল এগিয়ে গেলেও যতটা সম্ভব কম শক্তি খরচ করা। কারণ, ফেডেরার জানত পরের দুই বা তিন সেটে নাদাল ঘুরে দাঁড়াতে সর্বস্ব উজাড় করে দেবে। তাই হয়তো দ্বিতীয় সেটে ফেডেরারকে সে ভাবে পাল্টা লড়াই করতে দেখা যায়নি।
নাদাল সমতা ফেরানোর পরে তৃতীয় সেটে ফেডেরার আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠে। নাদালের সার্ভিসে আক্রমণ করাই ছিল ফেডেরারের কৌশল। তবু নাদাল সমানে পাল্লা দিয়ে গিয়েছে। ২৩, ২৪, ২৫ শটের র্যালি হয়েছে দু’জনের। তাতেও দমানো যায়নি ফেডেরারকে। উইনার মারার ঝুঁকি নিয়ে গিয়েছে। কথায় আছে ভাগ্য সব সময় সাহসীর সঙ্গে থাকে। ফেডেরারের সঙ্গে যেন সেটাই হল।
চতুর্থ সেটের গোড়াতে ফের নাদালের সার্ভিস ভেঙে দেয় ফেডেরার। তখনই বোঝা যাচ্ছিল ম্যাচ নাদালের হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। তবে ফেডেরারের প্রতিপক্ষের নামটা যে রাফায়েল নাদাল সেটা চতুর্থ সেটে বুঝিয়ে দিয়েছে বিশ্বের দু’নম্বর। চারটে ম্যাচ পয়েন্ট বাঁচিয়ে। ওই জায়গায় অন্য কোনও প্রতিপক্ষ থাকলে হয়তো ভেঙে পড়ত। নাদাল যদি চতুর্থ সেটে ৫-৫ ফলও করে ফেলতে পারত ম্যাচটা অন্য দিকে যেতে পারত। কিন্তু এ যেন কুড়ি বছর আগের অপ্রতিরোধ্য ফেডেরার। আট বারের চ্যাম্পিয়নের সাম্রাজ্য।
ফাইনালে ফেডেরার আর জকোভিচের জেতার সম্ভাবনা ৫০-৫০। জকোভিচ প্রায় ছ’বছরের জুনিয়র। কিন্তু যে নাদালকে এই ভাবে হারাতে পারে, সে জকোভিচকেও যে হারাবে না, কে বলতে পারে! আরও দু’তিন বছর খেলে যাবে ফেডেরার। আর এই ফর্মে থাকলে রেকর্ড ন’নম্বর উইম্বলডন ট্রফি আর একুশ নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যামও জেতা আশ্চর্যের নয় চিরতরুণ রজারের!