এবারের বিশ্বকাপ একদম শেষের দিকে। বেজে গেছে বিদায়বেলার ঘন্টা। ভারত ও অস্ট্রেলিয়াকে সেমিফাইনালে হারিয়ে দিয়ে ফাইনালে পৌঁছেছে যথাক্রমে নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড। বিশ্বক্রিকেটের অনেক তারকাই এবারে আশা থাকা সত্ত্বেও চরম ব্যর্থ হয়েছেন। আবার অনেকে এই মঞ্চ কাজে লাগিয়ে রাতারাতি হয়ে উঠেছেন তারকা।
ইংল্যান্ড ওপেনার জেসন রয়ও ঠিক তেমনই, যে এই মঞ্চকে কাজে লাগিয়ে উঠে এসেছে নিজের যোগ্যতায়। ইংরেজ বাহিনীর দুই ওপেনার জেসন রয় ও জনি বেয়ারস্টোর জুটি এখন অন্যতম চর্চিত বিষয়। ওয়ান ডে ক্রিকেটের ইতিহাসে এই ইংরেজ জুটির স্ট্রাইক রেট অতীতের সব নজির ছাপিয়ে গিয়েছে। কিন্তু বেয়ারস্টোকে ছাপিয়েও সবার নজর যে কেড়ে নিয়েছে, সে জেসন রয়। তাঁর শেষ আটটি ওয়ান ডে ইনিংসে সপ্তম হাফসেঞ্চুরি করেন (৬১ বলে ৬০)। এছাড়াও প্রত্যেকটি ম্যাচেই তাঁর অনবদ্য পারফর্ম্যান্সের জেরে সহজ হয় পেয়েছে ইংল্যান্ড।
জনি বেয়ারস্টো তাঁদের ওপেনিং জুটির অসাধারণ পারফরম্যান্সের কথা বলতে গিয়ে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন সঙ্গী রয়ের। বলেছেন, ‘‘আমাদের দু’জনের বন্ধুত্ব আজকের না। আর শুরুর দিন থেকেই আমরা পরস্পরকে শ্রদ্ধা করি।’’ ওপেনিং জুটির সাফল্য নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বেয়ারস্টো বলেছেন, ‘‘হ্যাঁ, সত্যিই হালফিলে আমাদের জুটি দারুণ সফল। পনেরো বছর বয়স থেকে আমরা একসঙ্গে খেলছি। সারে বনাম ইয়র্কশায়ারের ম্যাচ হলেই আমরা পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতাম। তখনও দেখতাম মারার বল পেলেই দারুণ সব শট নিত ও। আর এখনও সেই একই ব্যাপার। ওর সঙ্গে খেলার সময় উইকেটের উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে আমি ওর ব্যাটিং উপভোগ করি। আসলে আমরা কার্যত একই সঙ্গে বেড়ে উঠেছি। আর আমাদের একসঙ্গে খেলাটাও অনেক দিন হয়ে গেল।’’
কালকের ম্যাচেও জেসন রয় ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। ৬৫ বলে ৮৫ রান করেন তিনি ৷ তারমধ্যেই মেরেছেন ৯ টি চার ও ৫ টি ছয়। তিনি একাই যেন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জয়ের মোমেন্টাম তৈরি করে দিয়েছিলেন ৷ সকলেই যখন মনে করছেন শতরান করে তিনি ফাইনালের টিকিট যোগাড় করে দেওয়ার নায়ক হবেন ঠিক তখনই ভাগ্য দোষে বিপর্যয় ৷ যাতে উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া উত্তাল ৷ বিতর্কিত ভাবে আউট হয়ে গেলেন রয়। এবারের বিশ্বকাপে একাধিক বিতর্কিত আউটের শিকার হয়েছেন ক্রিকেটাররা আর সেমিফাইনালে জেসন রয় সেরকমই এক আউটের শিকার হলেন ৷ কামিন্সের বলে ক্যারের হাতে ধরা পড়েন তিনি ৷ কুমার ধর্মসেনা তাঁকে আউট দেন ৷ যদিও রিপ্লেতে দেখা যায় ব্যাট তো নয়ই গ্লাভসেও কোনওমতেই ছোঁয়নি ব্যাট ৷ জেসন রয় খুবই ক্ষুব্ধ ছিলেন ৷ কিন্তু কোনওভাবেই বুঝতে চাননি আম্পায়ার৷
এদিন রয়ের ব্যাটিং প্রসঙ্গে কথা উঠলে, অনেক প্রাক্তন ক্রিকেটারই তাঁকে প্রশংসায় ভরিয়ে দেন। চলতি বিশ্বকাপে ইতিমধ্যেই একটা সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন রয়। ভুল আউট না দিলে হয়তো কাল দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করে ফেলতেন তিনি। তবুও ৬৫ বলে ৮৫ রানের ইনিংসে লুকিয়ে ছিল অনেক জবাব। বিশ্বকাপের আগে সে রকম ফর্মে ছিলেন না রয়। ১৫ জনের দলে অ্যালেক্স হেলস না রয়কে নেওয়া হবে, তা নিয়েও ছিল সংশয়। যদিও ক্যাপ্টেন ইয়ন মর্গ্যান রয়কেই বেছে নেন।
মর্গ্যান যে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়নি, তা বুঝিয়ে দিয়ে গেল ইংল্যান্ড ওপেনার। আর একইসঙ্গে ক্যাপ্টেনের ভরসার দামটাও দিয়ে গেলেন তিনি। যে পিচে ২২৩ রানে অলআউট অস্ট্রেলিয়া, সেখানে স্টার্ক, কামিন্স, বেহরেনডর্ফদের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই আগ্রাসী মেজাজে ব্যাট করে গেল রয়। কখনওই অস্ট্রেলিয়ার পেসারদের চেপে বসতে দেয়নি। সেমিফাইনালের চাপ সামলে এ ধরনের ইনিংস খেলা কঠিন। এবার সামনে হার্ডল আর একটাই। কঠিন প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। যে ম্যাচ জিতলে, প্রথমবার বিশ্বকাপ ঘরে তুলবে ইংরেজ বাহিনী। আর সেই হার্ডল টপকাতে এখন ক্যাপ্টেনের অন্যতম ভরসার নাম তাদের ওপেনার জেসন রয়ই।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত