বারবার কেন্দ্রীয় বঞ্চনার শিকার হয়েও এ রাজ্য এবার বিজেপিকে দিয়েছিল ১৮টি আসন। কিন্তু তারপরও মোদী সরকারের দ্বিতীয় ইনিংসের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেটে বাংলা সেই ‘ছাগলের তৃতীয় সন্তান’ হয়েই রয়ে যায়। বাজেটে বাংলার জন্য কোনও বিশেষ প্রকল্পের ঘোষণা তো হয়ইনি, বরং রাজ্যের বেশ কিছু চলতি প্রকল্পে বরাদ্দ শুন্য করে দেওয়া হয়েছে। সাধারণ বাজেটের ধারাই বজায় রইল রেল বাজেটে। রাজ্যের জন্য নতুন কোনও রেল প্রকল্পের উল্লেখই নেই সেখানে।
হ্যাঁ, রেলের যে আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত খতিয়ান গতকাল প্রকাশ করেছে কেন্দ্র, তাতে গত কয়েক বছরের মতো এবারও বঞ্চিত হল বাংলার ঘোষিত রেল প্রকল্পগুলি। অধিকাংশ প্রকল্পের বরাদ্দ বেড়েছে নামমাত্র। তাতে প্রকল্পের কাজে গতি আসা কঠিন। কিছু প্রকল্পকে আবার বাজেটে মাত্র এক হাজার টাকা দিয়ে কোনও ভাবে বাঁচিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদী সরকার। এই বিষয়টি নিয়ে তাই সরব হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তৃণমূল সাংসদেরা।
প্রসঙ্গত, রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার জন্য একাধিক রেল প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু মমতা-ঘোষিত অধিকাংশ রেল কারখানার নাম চলতি বাজেট নথিতে নেই বলে অভিযোগে সরব হয়েছে তৃণমূল। কাঁচরাপাড়া রেল কোচ কারখানায় বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ৩০ লক্ষ টাকা। ৭৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হতে যাওয়া কারখানাটির পিছনে কেন্দ্র এ যাবৎ বিনিয়োগ করেছে মাত্র ২৯ কোটি টাকা।
যেখানে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার বেশি প্রয়োজন, সেখানে মাত্র ৩০ লক্ষ টাকায় কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। একই ভাবে বাংলাদেশের খুলনার সঙ্গে কলকাতার যাত্রী ট্রেন চালানোর পরিকাঠামো খাতে ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে রেল। ডানকুনিতে দক্ষতা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মালদহে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও বেলেঘাটায় ট্র্যাক প্রশিক্ষণ ইউনিটের জন্য মাত্র ৫ লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর ধরে অর্থের জোগান কম থাকায় নতুন নির্মাণের পরিবর্তে যাত্রী পরিষেবা বৃদ্ধিতে জোর দিয়েছে রেল মন্ত্রক। সে ক্ষেত্রেও বাংলার জন্য কোনও সুখবর নেই। গোটা মালদা ডিভিশনের ছ’টি প্ল্যাটফর্ম উঁচু করা, প্ল্যাটফর্ম শেড, যাত্রী ওভারব্রিজ, নতুন স্টেশন ভবন, পানীয় জল ও বেঞ্চ পাতার খাতে বরাদ্দ হয়েছে সাকুল্যে এক লক্ষ টাকা। সম পরিমাণ টাকায় একই কাজ করার জন্য নির্দেশ এসেছে হাওড়া ডিভিশনের ১৯টি স্টেশনে।
আবার পূর্ব রেলে যাত্রী সুবিধার্থে মাত্র দু’টি স্টেশনে এসক্যালেটর বসানোর জন্যও বরাদ্দের পরিমাণও মাত্র ১ লক্ষ টাকা। নৈহাটি ও রানাঘাট স্টেশনে যাত্রী সাবওয়ে নির্মাণে বরাদ্দ হয়েছে যথাক্রমে ১৫ ও ২০ লক্ষ টাকা। ওই সামান্য টাকায় কাজ কীভাবে শেষ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে রেল মন্ত্রকের অভ্যন্তরেও। সবমিলিয়ে বাংলার শাসক দল এবং রাজ্যবাসীর অভিযোগ, নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতেই ফের বাংলাকে বঞ্চিত করে রাখল কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।