৪৬.১ ওভারে নিউজ়িল্যান্ড ২১১-৫, এই অবস্থায় বৃষ্টি নামে। ইংল্যান্ডের সময় বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ তা সাময়িক ভাবে থামলও। গ্যালারিতে তখন বেশ কিছু ভারতীয় দর্শক ছাতা মাথায় বসে। হাতে তেরঙ্গা। গায়ের নীল জার্সি ভিজে গেলেও পাল্টাননি। ছাদ না-থাকায় অনেকে নীচে নেমে গিয়েছিলেন। তাঁরা ফিরে এসেছেন। গ্যালারি আবার ভর্তি হতে শুরু করেছে। একটা অংশ অবশ্য অধৈর্য হয়ে পাশের স্টেশন থেকে ট্রাম ধরে ফিরে গিয়েছেন। কিন্তু যাঁরা ছিলেন, মাঠ থেকে কভার সরাতে দেখে এমন গর্জন করে উঠলেন যে, মনে হবে, কোহলিরা বুঝি জিতেই গিয়েছেন! আর তার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ফিরে এল বৃষ্টি। তড়িঘড়ি কভার ফিরিয়ে আনা হল মাঠ ঢাকার জন্য। পিচের উপর থেকে চাকা লাগানো কভার সরানোর তখনও কোনও সম্ভাবনা নেই। কোনও রকম বিঘ্ন না-ঘটে পুরো খেলা হলে তা শেষ হয়ে যায় ইংল্যান্ডের সময় ৬টা নাগাদ। এখানে সাড়ে ৫টা বেজে যাওয়ার পরেও ম্যাচ শুরু হওয়ার কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি। কেউ কেউ তখনই আবহাওয়ার অ্যাপ খুলে দেখলেন, ইংল্যান্ডের সময় ৭টা পর্যন্ত বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। কিছু পরে আবার থামল, তার পরে ফের নামল। শেন ওয়ার্ন তখন মাঠে নেমে টিভি ধারাভাষ্যে বলে চলেছেন, ‘‘মাঠে এখনও এত দর্শক বসে রয়েছেন। চেষ্টা করা উচিত যাতে আজই খেলা করা যায়।’’ তার কিছু পরেই সরকারি ভাবে খেলা আজকের মতো স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করে দেওয়া হল। কালকের বাকি থাকা খেলা হবে আজ।
বিশ্বকাপের নিয়ম অনুযায়ী প্রথম দিনে যদি খেলা থেমে যায় এবং ফের শুরু করা না-যায়, তা হলে যেখানে খেলা শেষ হয়েছিল, তার পর থেকে চালু হবে। অর্থাৎ বুধবার রিজার্ভ ডে-তে নিউজ়িল্যান্ড যে ৪৬.১ ওভারে শেষ করেছিল, সেখান থেকেই আবার ম্যাচ হবে। প্রথমে তারা পুরো পঞ্চাশ ওভার খেলবে, তার পরে রোহিত শর্মারা নামবেন। যদি প্রথম দিনেই খেলা চালু করা যেত, তা হলে ডাকওয়ার্থ-লুইস নিয়মে পরিবর্তিত টার্গেট সামনে নিয়ে ব্যাট করতে নামতে হত ভারতকে।
এখন যা দাঁড়িয়েছে, বুধবার প্রথমে বাকি খেলার পুরোটাই করার চেষ্টা হবে। যদি বৃষ্টি তা হতে না-দেয়, ডাকওয়ার্থ-লুইস নিয়মে পরিবর্তিত টার্গেট ঝোলানো হবে ভারতের সামনে। সে-ক্ষেত্রে প্রথম চেষ্টা করা হবে, ভারত যেন ন্যূনতম ২০ ওভার ব্যাট করতে পারে। যদি ভারত ব্যাট করারই সুযোগ না-পায়, তখন রাউন্ড রবিন পর্বে যে-দল পয়েন্ট টেবলে উপরে ছিল, তারা যাবে। সে-ক্ষেত্রে কোহলিরাই ফাইনালে উঠবেন কেন উইলিয়ামসনদের হারিয়ে।
বিশ্বকাপে বৃষ্টিতে খেলা ভেস্তে যাওয়া নিয়ে অনেকেরই ধৈর্যের বাঁধ ভাঙতে শুরু করেছে। প্রশাসনিক এবং আয়োজনগত গাফিলতির কথাও উঠতে শুরু করেছে জোরালো ভাবে। আজ এক বার বৃষ্টি যখন কিছুটা থেমেছে, দেখা গেল, মাঠের মধ্যে আম্পায়ার, কর্মীরা দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছেন। সেই সময় তাঁরা তড়িঘড়ি মাঠ শুকোনোর ব্যবস্থা করছিলেন না কেন, সেটাই প্রশ্ন। প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইকেল আথারটন পর্যন্ত বলে ফেললেন, ‘‘বৃষ্টি তো থেমে গিয়েছে। তা হলে ওরা কভার সরাতে উদ্যোগী হচ্ছে না কেন?’’
বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে মাঠ শুকোনোর জন্য মাত্র দু’টো সুপার সপার থাকবে কেন, সেই প্রশ্নও জোরালো ভাবে উঠে পড়ছে। টুর্নামেন্ট শুরু হয়েছে ৩০ মে। এক মাস দশ দিন পরেও খুঁত মেরামতির কোনও প্রয়াস নেই। মাঠের অত্যাধুনিক জল নিষ্কাশনী ব্যবস্থার উপরে নির্ভর করছিলেন সংগঠকেরা। পাল্টা প্রশ্ন উঠছে, ইংল্যান্ডে বৃষ্টি হচ্ছে, সকলে তো দেখতেই পাচ্ছে। ম্যাঞ্চেস্টারে যে অহরহ বৃষ্টি হয়, এটা আর নতুন কী? এ শহরের অন্য নামই তো হয়ে গিয়েছে ‘রেনচেস্টার’। তা হলে সেমিফাইনালের কথা ভেবে আগাম সতর্কতা নেওয়া হল না কেন? প্রয়োজনে অন্য মাঠ থেকেও কয়েকটা সুপার সপার বা মাঠ ঢাকার জন্য কভার উড়িয়ে এনে রাখা যেত দু’টি সেমিফাইনাল এবং ফাইনালের মাঠে।
তবে কোনও সন্দেহ নেই, কোহলিদের পক্ষে আজকের এই দ্বিতীয় পথটাই বেশি সুবিধাজনক। কারণ, যশপ্রীত বুমরারা নিউজ়িল্যান্ড ব্যাটিংকে শ্বাসরুদ্ধ করে ফেলেছিলেন। বৃষ্টিবিঘ্নিত প্রথম দিনে খেলতে নামা মানে তাঁদের সামনে অপেক্ষাকৃত কঠিন টার্গেট স্কোর দেওয়া হত। যেমন, কোহালিরা যদি ২০ ওভার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেতেন, তা হলে তাঁদের টার্গেট হত ১৪৮। যেখানে পুরো ৫০ ওভারের ম্যাচ হলে হয়তো খুব বেশি হলে ২৪০-এর স্কোর তাড়া করতে হত। ডাকওয়ার্থ-লুইস নিয়মে চললে তাই অ্যাডভান্টেজ নিউজ়িল্যান্ড। শুরুর দিকে ভারতীয় বোলারদের একচ্ছত্র শাসনের ফায়দাই তোলা কঠিন হত।