এনআরসি নিয়ে ফের অস্বস্তি মাথাচাড়া দিলো আসামে। সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের পরে যাঁরা আসামে এসেছেন, তাঁদের বিদেশি বলে গণ্য করা হবে। কিন্তু যিনি ১৯৪৩ সালে অর্থাৎ দেশ স্বাধীনের আগেই আসামে জন্মেছেন তাঁকেও কিভাবে বিদেশি বলা হচ্ছে! ঘটনার সূত্রপাত সেখানেই। ১৯৪৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর আসামের শিলচর টাউনে জন্মেছিলেন সুনির্মল বাগচি নামের এক ব্যক্তি। শহরের মিউনিসিপ্যাল রেজিস্টারে সেরকমই লেখা আছে। আসামের জাতীয় নাগরিকপঞ্জি তাঁকেও বিদেশি বলে চিহ্নিত করেছে।
২০১৮ সালের জুলাই মাসে যে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি প্রকাশিত হয়েছিল, তাতে সুনির্মল বাগচির নাম দেখা যায়। তালিকায় নাম তোলার জন্য ৩ কোটি ২৯ লক্ষ মানুষ আবেদন করেছিলেন। নাম উঠেছিল ২ কোটি ৮৯ লক্ষের। গত ২৬ জুন জাতীয় নাগরিকপঞ্জি থেকে ১ লক্ষ ২ হাজার মানুষের নাম বাদ দেওয়া হয়। সুনির্মলবাবুর নাম তখনই বাদ পড়ে। ১ জুলাই স্থানীয় এনআরসি অফিস থেকে তাঁকে নোটিস দিয়ে জানানো হয়, কেন তাঁর নাম নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ গিয়েছে।
সুনির্মলবাবুদের বাড়ির কাছে পঞ্চায়েত ভবনে এনআরসি-র অস্থায়ী অফিস হয়েছিল। নোটিস পাওয়ার চার দিন বাদে তিনি সেই অফিসে শুনানির জন্য যান। সংশ্লিষ্ট অফিসার তাঁকে বলেন, আপনার কাগজপত্র ঠিকই আছে। নাগরিকপঞ্জি আপডেট করার সময় আপনার বিষয়টি আমাদের লোকাল ইন চার্জের কাছে তুলব। শিলচরে এনআরসি-র নোডাল অফিসার আনিস রসুল মজুমদার বলেন, “আমাদের অফিসের কেউ ভুল করে সুনির্মলবাবুর নাম নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ দিয়েছেন।”
এই বিষয়ে সুনির্মলবাবু বলেন, “অফিসাররা তো একে অন্যের ওপরে দোষ চাপিয়ে খালাস। কিন্তু বিদেশি বলে নোটিস পাওয়ার পরে আমার যা হেনস্থা হয়েছে, কেউ কি তার ক্ষতিপূরণ দেবে?”
৭৬ বছরের সুনির্মলবাবু জানান, তিনি পেশায় ছিলেন ঠিকাদার। তাঁর দুই ছেলে সম্রাট ও শুভরাজকে ভারতীয় নাগরিক বলা হচ্ছে। তাহলে তিনি বিদেশি হন কী করে? পুলিশের যে দফতরকে সম্ভাব্য বিদেশিদের চিহ্নিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা সুনির্মলবাবুর নামে কোনও রিপোর্ট দেয়নি। ইলেকশন অফিস থেকে সন্দেহজনক ভোটারদের নামের পাশে ‘ডি’ লিখে দেওয়া হয়। তার মানে ডাউটফুল ভোটার। সুনির্মলবাবুর নামের পাশে ডি লেখা নেই। এরপরেও তাঁর নাম নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ যাওয়ায় ফের বিতর্ক শুরু হয়েছে।