নিউজিল্যান্ড ম্যাচের আগেই বড় ধাক্কা ভারতীয় শিবিরে। বাঁ হাতের বুড়ো আঙুলে হেয়ারলাইন ফ্র্যাকচারের ফলে আগামী তিন সপ্তাহের জন্যে শিখরকে পাবে না টিম ইন্ডিয়া। তবে এখনই বিকল্পের পথে হাঁটছেন না কোহলিরা। ভারতের এই ওপেনারকে আপাতত ইংল্যান্ডেই রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, বাঁ হাতের বুড়ো আঙুলে ‘হেয়ারলাইন ফ্র্যাকচার’ হয়েছে ধওয়ানের। এ ক্ষেত্রে পুরো সুস্থ হতে তিন সপ্তাহ সময় লাগার কথা। তা হলে কাল নিউ জিল্যান্ড ম্যাচ ছাড়াও গ্রুপ লিগে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড, বাংলাদেশ ম্যাচ খেলতে পারবেন না ধাওয়ান। সুস্থ হলে তিন সপ্তাহ পরে গ্রুপ লিগের শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ফেরার সম্ভাবনা থাকছে। সরকারি ভাবে টিম ম্যানেজমেন্ট তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বোর্ডের মেডিক্যাল টিম তাঁকে দেখছে। আপাতত ধাওয়ান ইংল্যান্ডেই থাকছেন, দেশ থেকে কোনও বিকল্প চাওয়া হচ্ছে না।
এখন টিম ম্যানজেমন্ট ও ভারতীয় বোর্ডকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এখন পর্যবেক্ষণে রাখলেও ধাওয়ানের ব্যাপারে ঠিক কী করা হবে। বিকল্প দুটো। এক, ধাওয়ানকে টিমের সঙ্গে রেখে দেওয়া। যাতে জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কা ম্যাচ এবং টিম নক আউটে গেলে সেমিফাইনালে তাঁকে পাওয়া যায়। দুই, ধাওয়ানকে দেশে ফিরিয়ে দিয়ে তাঁর বদলি হিসেবে স্ট্যান্ডবাই থাকা ক্রিকেটারদের মধ্যে একজনকে নেওয়া। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ নয়, কারণ আইসিসি টুর্নামেন্টে ধাওয়ান ভারতের অন্যতম সফল ব্যাটসম্যান। বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি মিলিয়ে মোট ছ’টি সেঞ্চুরি আছে।
প্রশ্ন উঠতে থাকে, ভারতীয় দল তিন সপ্তাহ ধরে তাদের বাঁ হাতি ওপেনারের সেরে ওঠার জন্য কি অপেক্ষা করবে? না কি দেশ থেকে পরিবর্ত উড়িয়ে আনার জন্য আইসিসি-র কাছে আবেদন করবে? সময় যত বাড়ে, তত জল্পনা ছড়িয়ে পড়তে থাকে যে, শিখরের জায়গায় বিকল্প হিসেবে ইংল্যান্ড উড়ে যাচ্ছেন ঋষভ পন্থ। প্রথম অবস্থায় যাঁর বিশ্বকাপ দলে স্থান না পাওয়া নিয়ে তুলকালাম হয়ে গিয়েছে। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের একাংশে এমন খবরও চাউর হয়ে যায় যে, ঋষভকে ইংল্যান্ডের উড়ানে উঠে পড়ার সংকেত দিয়ে দিয়েছে ভারতীয় বোর্ড। তিনি নাকি ইংল্যান্ডে টিমের সঙ্গে যোগ দেবেন পাকিস্তান ম্যাচের আগে।
রাতের দিকে জানা যায়, শিখরের চোট নিয়ে দুশ্চিন্তা তৈরি হলেও এখনই ঋষভের উড়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। বরং ভারতীয় দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শিখরের চোট আরও ভাল ভাবে পরীক্ষা করে অপেক্ষা করা হবে। শোনা যাচ্ছে, ইংল্যান্ডেই আরও বড় কোনও শল্যবিদের পরামর্শ নেওয়া হতে পারে। তার পরেই যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেওয়া হবে। ম্যাঞ্চেস্টারে পৌঁছনোর পরে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হতে পারে। পাকিস্তান ম্যাচের আগে পর্যন্ত বিকল্প ক্রিকেটার নিয়ে কোনও চিন্তা-ভাবনা নেই। যত ক্ষণ না পুরোপুরি নিশ্চিত হচ্ছে ভারতীয় দল যে, শিখরকে কোনও ভাবেই দ্রুত সুস্থ করে তোলা যাবে না, তত ক্ষণ বিকল্প উড়িয়ে আনা নিয়েও সিদ্ধান্ত হবে না।
আবার বিকল্প না চেয়ে ধাওয়ানকে রেখে দেওয়ার পক্ষেও অনেকে আছেন। তাঁদের যুক্তি, ২০০৩ সালের বিশ্বকাপেও ভাঙা আঙুল নিয়ে একের পর এক ম্যাচ খেলে গিয়েছিলেন সচিন তেন্ডুলকর। আরও যুক্তি, এখন ভাঙা আঙুলে প্লাস্টার করে ধাওয়ানের যদি খেলতে অসুবিধে না হয়, তাঁকে কেন দেশে ফেরৎ পাঠানো হবে?
শিখরকে নিয়ে ধৈর্য ধরতে চাওয়ার প্রধান কারণ দু’টি। প্রথমত, তিনি দলের প্রধান ব্যাটসম্যানদের এক জন। অন্যতম সেরা ম্যাচউইনার। অস্ট্রেলিয়ার মতো হেভিওয়েট দলের বিরুদ্ধে রান করে জিতিয়েছেন বলে ফর্ম এবং আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে। এত তাড়াতাড়ি তাঁর বিশ্বকাপ শেষ বলে ধরে নিতে চাইছে না দল। দ্বিতীয়ত, শিখরের বিকল্প ইতিমধ্যেই হাতে রয়েছে। কে এল রাহুলকে এত দিন চার নম্বর স্থানে ভাবা হচ্ছিল। এখন তিনি ওপেন করতে পারবেন। চার নম্বরের জন্য ধোনি বা কেদার যাদবকে তুলে এনে দীনেশ কার্তিককে বাড়তি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলানো যেতে পারে। বিজয় শঙ্করও আছেন। তাই এক্ষুনি তাড়াহুড়ো করে শিখর ছিটকে গিয়েছেন ধরে নিয়ে বিকল্প নিয়ে আসার দরকার নেই।