২৩ মে লোকসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর পর্যালোচনা বৈঠকেই তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছিলেন এখন থেকে দল এবং সংগঠনের কাজে আরও বেশি মন দেবেন তিনি। কিন্তু তাই বলে সরকারি কাজেও খামতি রাখতে নারাজ মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি পরিষেবা বা প্রকল্পের সুবিধা থেকে কেউ যাতে বঞ্চিত না হয়, সে জন্য সরকারি প্রকল্পের নজরদারিতে ‘মনিটরিং সেল অন প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন অ্যান্ড গ্রিভ্যান্সেস’ অথবা ‘গ্রিভ্যান্স সেল’ গঠনের কথা ঘোষণা করেন তিনি। এর পাশাপাশি কন্যাশ্রী, রূপশ্রী-সহ বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা এবার থেকে সমবায় ব্যাঙ্কের মাধ্যমে দেওয়া হবে বলে সোমবারই মন্ত্রীসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, রাজ্যের বহু গ্রামে এখনও সমবায় ব্যাঙ্কের শাখা নেই। তাই আগামী তিনমাসের মধ্যে আরও ২৫টি সমবায় ব্যাঙ্কের শাখা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।
এই সমবায় ব্যাঙ্কগুলিতে আপাতত অন্যান্য ব্যাঙ্ক থেকে কর্মী নিয়োগ করা হলেও দ্রুত সেই শূন্যস্থান পূরণে কর্মী নিয়োগ করা হবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে। কোথায় কত সংখ্যক কর্মী প্রয়োজন তা দ্রুত কোঅপারেটিভ সার্ভিস কমিশনকে জানাতে বলা হয়েছে। অন্তত প্রায় ৫০০ কর্মী ও অফিসার প্রথম পর্যায়ে নিয়োগ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আগেও প্রায় ৫০টি সমবায় ব্যাঙ্কের শাখা খোলা হয়েছে। সেখানে পর্যাপ্ত কর্মী নিয়োগ করা হয়নি। কিন্তু, এবার থেকে সমস্ত রাজ্য সরকারি প্রকল্পের টাকা সমবায় ব্যাঙ্কের মাধ্যমে দেওয়া হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করায়, কর্মী অভাব পূরণ হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাজ্যের সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায় বলেছেন, সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা এবার থেকে সমবায় ব্যাঙ্কের মাধ্যমে দেওয়া হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন। এটা বড় ব্যাপার। এতে সমবায় ব্যাঙ্কগুলি আরও উজ্জীবিত হবে।
তিনি জানান, আমরা গত এক বছরে ৫০টি ব্যাঙ্কের শাখা ও ২৬৩১টি কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট তৈরি করেছি। মানুষের সুবিধার জন্য আরও ২৫টি ব্যাঙ্কের শাখা করা হবে। যেখানে যেমন কর্মীর প্রয়োজন, তেমনই কোঅপারেটিভ সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ করা হবে। তাঁর কথায়, সমবায় ব্যাঙ্কের যা পরিকাঠামো আছে, তাতে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া কঠিন হবে না। বরং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে মানুষ নানাভাবে নাজেহাল হতেন। এবার সেটা হবে না। উল্লেখ্য, রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা এবার থেকে সমবায় ব্যাঙ্কের মাধ্যমে দেওয়া হবে বলে সোমবারই মন্ত্রীসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু, বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, সমবায় ব্যাঙ্কের এই পরিকাঠামো আছে কি না।
এর জবাবে সমবায় দফতরের অফিসাররা বলেছেন, এই মুহূর্তে রাজ্যের অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েতে সমবায় ব্যাঙ্কের শাখা আছে। গত এক বছরে প্রচুর সংখ্যক কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট ও ব্যাঙ্কের শাখা করা হয়েছে। অন্যান্য শাখা থেকে কর্মী নিয়ে আপাতত নতুন শাখাগুলি চালু করা হয়েছে। কিন্তু, কোথায় কী কর্মীর প্রয়োজন তা জানিয়ে প্রতিটি জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক কোঅপারেটিভ সার্ভিস কমিশনকে চিঠি করে। সেইমতো কোঅপারেটিভ সার্ভিস কমিশন নিয়োগ করে। এবার সদ্য তৈরি হওয়া ৫০টি শাখা ও আগামী দিনে যে ২৫টি শাখা তৈরি হবে, সেখানে কর্মী নিয়োগ করা হবে। এতে প্রচুর বেকার যুবক যেমন চাকরি পাবেন, তেমনই গ্রামাঞ্চলের মানুষ সমবায় ব্যাঙ্কের মাধ্যমেই তাঁদের সুযোগ সুবিধা পাবেন।