ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসি হয়েছিল ১৯০৮ সালে। তখন তার বয়স ছিল ১৮ বছর। সেই ঘটনার ১১১ বছর পর সৌদি আরবে মুণ্ডচ্ছেদ হতে চলেছে কিশোর মুর্তাজা কুরেইরিসের। তার ১০ বছর বয়েসে করা অপরাধের জন্য।
সারা বিশ্ব উত্তাল হলেও আশ্চর্যজনক ভাবেই শান্ত সৌদি রাজতন্ত্র। যে রাজতন্ত্র উপড়ে ফেলার ডাক দিয়েছিল এক কিশোর। আরব কাঁপিয়ে দেওয়া বসন্ত বিপ্লবের অন্যতম মুখ মুর্তাজা কুরেইরিস। যাকে আমরা হয়তো কেউ চিনি না। মুণ্ডচ্ছেদের আগে তাকে বাঁচাবার জন্য ঝাঁপিয়েছে বিশ্ব, তার জন্য কাঁদছে আরব মায়েরা।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে সৌদি আরব মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার দিক থেকে বিশ্বের প্রথম পাঁচটি দেশের মধ্যে তৃতীয় স্থানে আছে। বাকি দেশগুলি হল চিন, ইরান, ভিয়েতনাম ও ইরাক। সৌদি আরবে শুধু গত বছর ১৪৯ জনকে মুণ্ডচ্ছেদ কর হয়েছে। এই বছরে এখনও পর্যন্ত ১০০ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে সৌদি আরব। এর মধ্যে শুধু এপ্রিলেই ৩৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
আরব বসন্তে উত্তাল হয়েছিল আরব দুনিয়া। রাজতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্রের অবসান চেয়ে রাস্তায় নেমেছিল আরব দুনিয়ার লক্ষ লক্ষ শোষিত ও বঞ্চিত মানুষ। গণজাগরণের জোয়ারে ভেসে গিয়েছিল একের পর এক আরব দেশ। ২০১০ সালের ১৭ ডিসেম্বর নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে আরব বসন্তের মশাল জ্বালেন তিউনিসিয়ার ফেরিওয়ালা বাওয়াজিজি।
সৌদি রাজতন্ত্রের অবসান চেয়ে রাস্তায় নামেন সৌদির সাধারণ মানুষ। আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে আলি কুরেইরিস নামে এক ১৭ বছরের কিশোর। ওই বয়েসেই নেতৃত্ব দেয় জনগণকে। রাতের অন্ধকারে পোস্টার মারে সৌদি আরবের প্রশাসনিক ভবনগুলিতে। ঘরে বসে পোস্টার লিখতে সাহায্য করে তার ১০ বছর বয়সী ভাই মুর্তাজা।
একদিন, মুর্তাজার দাদা আলিকে বিক্ষোভরত অবস্থায় গুলি করে হত্যা করে সৌদি পুলিশ। আলির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার শেষ হতেই, ক্ষোভে দুঃখে প্রতিবাদে নেমে পড়েছিল ১০ বছরের বালক মুর্তাজা। তিরিশ জন বালকের একটি সাইকেল বাহিনী নিয়ে। মুর্তাজার তোলা ‘রাজতন্ত্র নিপাত যাক’ স্লোগানে মুখরিত হয়েছিল এলাকা। সেদিন থেকেই সৌদি প্রশাসনের দু’চোখের বিষ হয়ে উঠেছিল বালক মুর্তাজা। ২০১৪ সালে লুকিয়ে বাহরিন পালিয়ে যাওয়ার পথে সৌদি সীমান্তে গ্রেফতার করা হয় ১৩ বছর বয়সী মুর্তাজাকে। রাষ্ট্রদোহিতা, দাদার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় উপস্থিত থাকা, পুলিশ থানায় মলোটভ ককটেল বোমা ছুঁড়ে মারা ও সন্ত্রাসবাদী সংঘঠনে যোগ দেওয়ার মতো মারাত্মক সব অভিযোগ আনা হয় মাত্র ১৩ বছর বয়সী একজন বালকের বিরুদ্ধে।
এর পর মুর্তাজাকে রাখা হয় দাম্মামের জুভেনাইল ডিটেনশন সেন্টারে। বিচার শুরু হতে সময় লাগল ৪বছর। বিচারের নামে প্রহসন ঘটিয়ে গত বছরের অগাস্ট মাসে তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে সৌদি আরব। মুর্তাজাকে বাঁচানোর জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সহ সারা বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলি। সৌদি আরবের কাছে তারা আবেদন জানিয়েছে মুর্তাজা কুরেইরিসের মৃত্যুদণ্ড রদ করার জন্য। কিন্তু সত্যিই কি মুক্তি পাবে মুর্তাজা!