চলছে বিশ্বকাপ ক্রিকেট। পৃথিবীবাসী এই জ্বরে ভুগছে। ভারতের কাছে বিশ্বকাপ বললেই চলে আসে ১৯৮৩,২০০৩,২০০৭,২০১১ এর মত সালগুলো। কপিলদেবের হাত ধরে ভারত ১৯৮৩ সালে পেয়েছিল প্রথম বিশ্বকাপের স্বাদ। তারপর অনেক উত্থান পতনের মধ্যে দিয়ে চলেছিল ভারতীয় ক্রিকেট দল। আবার বিশ্বকাপ জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছিল ভারত ২০০৩ সালে সৌরভ গাঙ্গুলির হাত ধরে। তারপর ২০০৭ টি২০ বিশ্বকাপ ও ২০১১ একদিন ক্রিকেটের বিশ্বকাপ মহেন্দ্র সিং ধোনির হাত ধরে ভারত জিতেছিল। তবে এই দুই বিশ্বকাপে ভারতের অধিনায়ক যেমন একজন ছিল, তেমনই এই দুই বিশ্বকাপে সেরাও একজনই ছিলেন। তিনি হলেন যুবরাজ সিং। এক ট্র্যাজিক নায়ক। দলে সুযোগ পাওয়া, দল থেকে বাদ পড়া, আবার যোগ্যতা প্ৰমাণ করে দলে ফেরা, নিজের সেরা পারফরম্যান্স করা, ক্যানসারের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই, আবার মাঠে ফিরে আসা। এত উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়েই যেন ফুটে উঠেছে যুবরাজ। নামের সঙ্গে মাঠেও তিনি যখন খেলেন তিনি ‘যুবরাজ’।
২০০০ সালে নাইরোবিতে কেনিয়ার বিরুদ্ধে ভারতের জার্সিতে ওয়ান-ডে অভিষেক হয়েছিল যুবরাজের। আর তার তিন বছর পর তিনি মোহালিতে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ক্রিকেটের দীর্ঘতম ফর্ম্যাটে প্রথম ম্যাচ খেলেছিলেন। ২০০৭-এ স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে ডারবানে ভারতের হয়ে প্রথম টি-২০ ম্যাচ খেলেছিলেন। দীর্ঘ ১৯ বছরের কেরিয়ারে ইতি টানলেন যুবি। ৪০টি টেস্ট ও ৩০৪টি ওয়ান-ডে ও ৫৮টি টি-২০ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন পাঞ্জাব পুত্তর।
বাইশ গজের ‘লাইভওয়্যার’ ছিলেন যুবি। তাঁর কথা বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ২০০৭ টি-২০ বিশ্বকাপে স্টুয়ার্ট ব্রডকে ছ’বলে ছ’ছক্কা হাঁকানোর সেই মুহূর্ত। ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম সংস্করণের প্রথম বিশ্বকাপে ভারতকে জেতানোর পিছনেই শুধু অবদান রাখেননি যুবি, ২০১১ সালে পঞ্চাশ ওভারের বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম কারিগরও ছিলেন যুবি। ৩৬২ রান ও ১৫টি উইকেট নিয়ে সেবার টুর্নামেন্টের সেরা হয়েছিলেন তিনি।
বিশ্বকাপের পরেই যুবির ক্যান্সারের মতো মারণরোগ ধরা পড়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপির বৃত্ত সম্পূর্ণ করে ফের বাইশ গজে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন তিনি। ২০১২-তে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক টি-২০ ম্যাচে ফিরেছিলেন তিনি।যুবরাজ ২০১৭ সালে কেরিয়ারের সেরা ওয়ান-ডে ইনিংস খেলেছিলেন। কটকে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৫০ রান এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকে। ভারত জিতেছিল ১৫ রানে। যুবরাজের বায়োডেটায় রয়েছে আরও অনেক রেকর্ড। টি-২০ ক্রিকেটে দ্রুততম হাফ-সেঞ্চুরি করেন তিনি। ১২ বলে ৫০ এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকে।
তিনি জীবন শুরু করেছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলির মতো অধিনায়কের হাত ধরে। তাই আজ যখন তাঁর জীবনের অন্যতম দিন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবন থেকে চিরতরে সরে যাচ্ছেন তখন তাঁর মুখে শোনা গেল, ‘সৌরভ গাঙ্গুলী আমার কেরিয়ারে ভীষণই বেশি সাহায্য করেছেন, বিশেষ করে কেরিয়ারের শুরুর দিকে।’ এইরকম অকপট ভালোবাসা, শ্রদ্ধা কজন দেখাতে পারেন। শুধু সৌরভ নন। তাঁর জীবনে ধোনির মাহাত্ম্যটাও তিনি বলে গেলেন। ‘মহেন্দ্র সিং ধোনির সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভীষণই ভালো থেকেছে। আমরা এক সঙ্গে অনেক ট্রফি জিতেছি। এই দুজন ভারতীয় ক্রিকেটের অনেক বড়ো অধিনায়ক।’
২০১১ সালে ধোনি যখন ফাইনালে উইনিং শট নিলেন তখন অন্যদিকে ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। তাঁর কান্নাই বুঝিয়ে দিয়েছিল যে সে কতটা ভালোবাসে ক্রিকেটকে। কতটা অধ্যাবসায় থেকে নিজেকে তৈরি করেন। ক্যানসারের মতন মারণরোগকে তিনি জয় করেছেন। নিজেকে বারবার প্ৰমাণ করেছেন। লড়াই করেছেন। কঠিন সময়ে পাশে ছিল তাঁর মা। ওই ভালোবাসার ওপর ভর করে স্বার্থের খোলস থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছেন। ‘বিশ্ব ক্রিকেটে তুমি অন্যন্য। ক্রিকেট তোমায় পেয়ে ধন্য…’
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত