সপ্তাহের শুরুতেই ইন্দ্রপতন৷ প্রয়াত হলেন ক্যালকাটা ইয়ুথ কয়্যারের প্রতিষ্ঠাত্রী এবং অভিনেত্রী রুমা গুহঠাকরতা৷ নিজের বাড়িতেই ঘুমের মধ্যে মৃত্যু হয় তাঁর৷ আজ ভোর সওয়া ৬টা নাগাদ ৩৮ বালিগঞ্জ প্লেসে নিজের বাড়িতেই মৃত্যু হয়েছে বর্ষীয়াণ অভিনেত্রীর। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। তাঁর এই প্রয়াণে চলচ্চিত্র জগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে তাঁর।
প্রয়াত অভিনেত্রীর বাড়িতে যান মুখ্যমন্ত্রী, কথা বলেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। তাঁর প্রয়াণ নিয়ে একটি টুইটও করেছেন মমতা। টুইটে তিনি লেখেন, “রুমা গুহঠাকুরতার প্রয়াণে আমি গভীর শোকাহত। চলচ্চিত্র এবং সঙ্গীতের জগতে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর পরিবার এবং অনুরাগীদের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা”। আজ রাজ্য সরকারের তরফে গান স্যালুটও দেওয়া হবে। আজ সন্ধ্যায় কেওড়াতলা মহাশ্মশানে শেষকৃত্য হবে শিল্পীর।
আজ ভোর সওয়া ৬টা নাগাদ, কলকাতায় নিজের বাড়ি, ৩৮ বালিগঞ্জ প্লেসে ‘ঠাকুরতা হাউস’-এ ঘুমের মধ্যেই প্রয়াত হন ক্যালকাটা ইয়ুথ কয়্যারের প্রতিষ্ঠাতা। দেবব্রত বিশ্বাসের ছাত্রী রুমা গান গেয়েছেন, ‘অমৃত কুম্ভের সন্ধানে’, ‘বাঘিনী’, ‘পলাতক’-সহ বেশ কিছু বিখ্যাত ছবিতে। অভিনেত্রী হিসাবেও দক্ষতা দেখিয়েছেন রুমা। সত্যজিৎ রায় থেকে তপন সিংহ, তরুণ মজুমদার থেকে রাজেন তরফদার বাংলা ছবির প্রখ্যাত পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন।
মায়ের প্রয়াণে গভীর শোকাহত তাঁর পুত্র অয়ন গুহঠাকুরতা। তিনি জানালেন, “আমার ছোটবেলা কেটেছে মায়ের সঙ্গে সঙ্গে। আমার মা রুমা গুহঠাকুরতা। কাল রাতেই আমাদের বালিগঞ্জ প্লেসের বাড়িতে এক সঙ্গে মা আর ছেলে ক্রিকেট দেখছিলাম। গল্প করছিলাম। মা খুব ক্রিকেট দেখতে ভালবাসত। এই কিছু দিন হল দাদার বাড়ি থেকে (অমিতকুমার) মা আমার কাছে এল। নাতি আর নাতবৌকে এক সঙ্গে দেখবে বলে। ওদের দু’জনকে দেখে খুব খুশি ছিল মা। সেই মা ভোর বেলা নিজের ঘরে হঠাৎ পাথর হয়ে গেল।
কী বলব মা কে নিয়ে? মা? নাকি রুমা গুহঠাকুরতা? ওরকম গায়িকা, অভিনেত্রী, গুহঠাকুরতা বাড়ির বড় বউ… সব মিলিয়ে মা এক আশ্চর্য ব্যাক্তিত্ব ছিল”।
বন্ধু তথা সহ অভিনেত্রী রুমা গুহ ঠাকুরতার মৃত্যুতে শোকাহত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি জানান, ” আমি শোকাহত, মর্মাহত। আমরা দীর্ঘদিনের বন্ধু, প্রায় ৬০ বছরের বন্ধুত্ব। যখন থেকে আমি সিনেমায় এসেছি, তখন থেকে। মানিকদার আত্মীয়া তো, ওদের বাড়ি প্রায়ই যেতাম। অরূপ আমাদের বন্ধু ছিল। আমরা তার গুণমুগ্ধ ছিলাম, অসামান্য গান করতো, অভিনয় করতো। আমরা একসঙ্গে কত ছবি করেছি। ‘অভিযান’-এর কথা খুব মনে পড়ছে। ‘বাঘিনী’ , ‘গণশত্রু’র, বহু ছবির কথাই মনে পড়ে। খুবই কষ্ট হচ্ছে, কী বলব… আর কিছু বলতে পারছি না, অনেক কথাই মনে পড়ছে। কষ্ট হচ্ছে। ‘
অভিনেত্রী মাধবী মুখোপাধ্যায়ও স্মৃতিকাতর হয়ে পড়লেন। বললেন, ” অনেক স্মৃতিই তো আছে। আমরা একসঙ্গে ছবি করেছিলাম, ‘চৌধুরী পরিবার’ সেই ছবির শ্যুটিংয়ের সময় আমরা একসঙ্গে থাকতাম, একসঙ্গেই খাওয়াদাওয়া সবকিছুই। সেখানকার অনেক স্মৃতিই তো মনে রয়েছে। এছাড়াও আরও অনেক স্মৃতিই রয়েছে রুমাদির সঙ্গে। খুব খারাপ লাগছে মনটা। বুঝতে পারছি না আমি যে ঠিক কী বলবো…মাঝে অনেকদিন রুমাদির সঙ্গে আমার দেখা সাক্ষাৎ হয়নি। উনি বোম্বে চলে গিয়েছিলেন। তবুও একটা মানুষ আছে এটাই বড় কথা ছিল। আর আজ উনি যে নেই, সেকথা ভাবতেই পারছি না। খুব খারাপ লাগছে।”
চলচ্চিত্র মহলেও গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শোকের অতলে ডুবে গেছেন ক্যালকাটা ইয়ুথ কয়্যারের সদস্যরাও। আর মাত্র কিছুক্ষণ, তাঁর পরেই চিরতরে বিলীন হয়ে যাবে তাঁর নশ্বর দেহ।