সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লক্ষ্য ছিল ৪২-এ ৪২। কিন্তু গেরুয়া সন্ত্রাস, ইভিএম কারচুপি, নির্বাচন কমিশনের বিজেপির প্রতি পক্ষপাতিত্ব, টাকা বিলি, রাম-বাম আঁতাত ইত্যাদি বিষয়ই তৃণমূল নেত্রীর স্বপ্নপূরণে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে গত লোকসভা নির্বাচনের থেকে কিছুটা আসন কমলেও ভোট বেড়েছে প্রায় ৪ শতাংশ। আর এইসব কিছু নিয়েই শনিবারের বিকেলে কালীঘাটে তৃণমূল সুপ্রিমো দলের নেতা-নেত্রীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। সাফল্য-ব্যর্থতা সবকিছু নিয়েই চলে পর্যালোচনা। রদ বদল করা হয় অনেক নেতা-নেত্রীর দায়িত্বও। সেই তালিকায় উল্লেখযোগ্য নাম শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দক্ষ সাংগঠনিক ক্ষমতাকে কাজে লাগাতে চান তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই শুভেন্দুর ওপরই গুরু দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি। জঙ্গলমহলের সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
উল্লেখ্য এই জঙ্গলমহলের সাময়িক বিপর্যয়ের ফলে আর কোনো ঝুঁকি নিতে নারাজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ তিনি জানেন যে পারলে শুভেন্দুই পারবেন। অন্য কেউ নন। জঙ্গলমহলে তৃণমূলের সংগঠন করার মূলে শুভেন্দুই। পশ্চিমাঞ্চলের পাড়া-পাড়া, গ্রাম-গ্রাম, জঙ্গল-জঙ্গল হাতের তেলোর মতো চেনেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। একটা সময় তিনিই ছিলেন এই অঞ্চলের দায়িত্বে। আবারও সেই মজবুত ও বিশ্বস্ত কাঁধেই ফিরেই দেওয়া হল দায়িত্ব।
লোকসভা নির্বাচনের আগে মুর্শিদাবাদ ও বহরমপুরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল শুভেন্দুকে। আর সেখানে তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতার নজির রেখেছেন তিনি। মুর্শিদাবাদের আসন ছিনিয়ে নিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে, তথাকথিত অধীর গড় বহরমপুরেও বেশ ভালোরকম ছাপ ফেলেছে তৃণমূল। এছাড়াও পশ্চিম মেদিনীপুরের আসনগুলোতেও সাফল্য এসেছে তাঁর হাত ধরে। সেই সাফল্যকেই কাজে লাগাতে চান মুখ্যমন্ত্রী।
অন্যদিকে, একাধিক জেলার সংগঠনে দায়িত্ব বদলেছেন মমতা। ঝাড়গ্রামের জেলা সভাপতি করা হয়েছে বীরবাহা সরেনকে। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার সভাপতির আসনে বসানো হয়েছে নাট্যকার অর্পিতা ঘোষকে। এছাড়াও হুগলিতে চেয়ারম্যান করা হয়েছে রত্না দে নাগকে। সেই সঙ্গে দিলীপ যাদব এবং প্রবীর ঘোষালকে কনভেনর করা হয়েছে হুগলিতে। শ্যামল সাঁতরা, শুভাশিস বটব্যাল, শঙ্কর সিং এবং মহুয়া মৈত্র, জিতেন তিওয়ারি, কানহাইয়ালাল আগরওয়াল, মৌসম বেনজির নুর এবং মোয়াজ্জেম হোসেন প্রভৃতি নেতৃত্বকে দেওয়া হয়েছে দায়িত্ববান পদ। সঙ্গে রাজ্য তৃণমূলের পক্ষে হাওড়া, হুগলি ও দুই বর্ধমানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ফিরহাদ হাকিমকে।
তৃণমূল সুপ্রিমোর এই নতুন চমকে আশাবাদী দলীয় সমর্থক থেকে সাধারণ মানুষও। যেটুকু খামতি হয়েছে এই লোকসভায় তা পুনরায় ফিরিয়ে আনতে বদ্ধ পরিকর জন নেত্রী। আর তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বই দেওয়া হয়েছে দলের অন্যতম যোদ্ধার কাঁধে।