সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে ধর্মকে হাতিয়ার করে বারবার বিজেপি নেতৃত্ব প্রচার চালিয়েছে। আর নির্বাচনে বিজেপির ফলাফল দেখে মনেই হচ্ছে তাঁরা মানুষের ‘ভাবাবেগে’ ভালোভাবেই উস্কে দিতে পেরেছে। সারা দেশে এই চিত্ৰ হলেও ব্যতিক্রম কিন্তু কেরল। শবরীমালা-অস্ত্র কাজে লাগিয়েও মালাবার উপকূলে প্রভাব বিস্তারে ব্যর্থ হল বিজেপি।
সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ বারবার কেরলে গিয়ে সব রকম চেষ্টা চালিয়েছিলেন ‘ভক্ত মনে আঘাতে’র কথা বলে শবরীমালা প্রসঙ্গে ভাবাবেগ উস্কে দেওয়ার। রাজনৈতিক শিবিরের অনেকেরই মত, এই মেরুকরণের চেষ্টার ফল বরং বিজেপির বিপক্ষে গিয়েছে। রাজ্যে ২০টির মধ্যে ১৯টি আসনই জিতে নিয়েছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ। বাকি একটি আসন সিপিএম। কংগ্রেস পেয়েছে ৩৭.২৭% ভোট, সিপিএম পেয়েছে ২৫.৮৩%। শরিকদের ভোট যোগ করলে ইউডিএফের ভোট প্রায় ৪৫% এবং এলডিএফের প্রায় ৩৭%।
পাতানামতিট্টা লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে শবরীমালা মন্দিরের এলাকা। ওই কেন্দ্রে কংগ্রেসের অ্যান্টো অ্যান্টনিই ফের জয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সিপিএমের বীণা জর্জ। বিজেপির কে সুরেন্দ্রন শেষ করেছেন তৃতীয় স্থানে। শবরী-বিক্ষোভের জেরে সুরেন্দ্রনের জেলে যাওয়ার ঘটনাও তাঁকে ভোটে বিশেষ ‘সহানুভূতি’ এনে দেয়নি। আবার ওয়েনাডে রাহুল গাঁধীর বিরুদ্ধে এনডিএ শরিক ভারতীয় ধর্ম জন সেনার (বিডিজেএস) তুষার ভেল্লাপল্লি জামানত খুইয়েছেন।
কেরল বিজেপির রাজ্য সভাপতি পি শ্রীধরন পিল্লাই মানছেন, ‘‘রাজ্যে আমাদের ফল প্রত্যাশামতো হয়নি। গোটা দেশের থেকে আলাদা প্রবণতা এখানে কেন হল, তা খতিয়ে দেখতে হবে।’’ ঘরোয়া আলোচনায় বিজেপি নেতারা স্বীকার করছেন, তাঁরা শবরীমালা এবং হিন্দু ভাবাবেগে বেশি জোর দিতে যাওয়ায় রাজ্যের মুসলিম ও খ্রিস্টান— দু’ধরনের সংখ্যালঘুই কংগ্রেসকে ঢেলে ভোট দিয়েছেন। তাতে বামেদের ক্ষতি হয়েছে বটে। কিন্তু বিজেপির কোনও ফায়দা হয়নি।
প্রসঙ্গত, কেরলে কোনও আসন বিজেপি তো যেতেই নি, বরং ২০ আসনের মধ্যে ১৩টিতে এনডিএ প্রার্থীদের জামানত জব্দ হয়েছে! বিজেপি পেয়েছে ১২.৯৩% ভোট। এনডিএ-র বাকি শরিকদের ভোট যোগ করলে মোট প্রাপ্তির হার ১৬%-এর কাছাকাছি।