গত ১১ এপ্রিল থেকে গোটা দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচন। বাংলার সাত দফার মধ্যে ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে ৫ দফার ভোট। বাকি এখনও দু’দফার ভোট। তবে হয়ে যাওয়া ৫ দফার কোন কেন্দ্রের কোন বুথে কত ভোট পড়ল, কত ভোট তৃণমূলের পক্ষে এল তা নিয়ে এখন থেকেই হিসেব-নিকেশ শুরু করে দিয়েছে রাজ্যের শাসক দল। হ্যাঁ, রাজ্যের পাঁচ দফা নির্বাচন শেষে কালবিলম্ব না করে কোন কেন্দ্রে কত ব্যবধানে দল জয়ী হবে, সেই হিসাব কষতে বসে পড়েছে তৃণমূল।
প্রসঙ্গত, পাঁচ দফা নির্বাচন শেষ। উত্তরবঙ্গের পর দক্ষিণবঙ্গের একটা বড় অংশের ভোট হয়ে গিয়েছে। বাকি আছে দক্ষিণবঙ্গের শেষ এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশের ভোট। তার উত্তাপ হার মানাচ্ছে চামড়া পোড়া গরমকেও। এই পরিস্থিতিতেই গোটা রাজ্যের ভোটকে সব মিলিয়ে তিন ভাগে ভাগ করে নিয়েছে তৃণমূল। লড়াই মূলত তাদের সঙ্গে বিজেপির। গেরুয়া শিবিরের দাবি, বাংলায় তাদের এবার শুধু ভোট শতাংশে বাড়বে তাই নয়, বেশ কয়েকটি আসনও বাড়বে। কারণ কেন্দ্রের দৌলতে হলেও রাজ্যে তাদের প্রবল হাওয়া। তবে সেসব দাবি উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূল পাল্টা দাবি, বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশই তাদের টার্গেট। সেই টার্গেট নিয়েই তারা লড়ছে। এবং জিতবেও।
কিন্তু বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশ হলেও, কোথায় কত ভোটের ব্যবধানে পদ্মফুলকে পিছনে ফেলবে ঘাসফুল, আগে থেকেই তার হিসেব কষে রাখতে চায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগত সৈনিকরা। ইতিমধ্যে দফায় দফায় ভোটের রিপোর্ট নিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। সেই পর্বে কোনও ফাঁক রাখতে চায় না তাঁর দলও। ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গের আসনগুলি নিয়ে তৃণমূলের দৃঢ় বিশ্বাস, তারা যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক আসন সেখান থেকে জিতবে। উত্তরবঙ্গ নেতৃত্ব রিপোর্ট দিয়েছে, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারে তারা অনায়াস জয় পাবে। বিজেপি এইসব আসনে টাকা ছড়িয়ে কিছু ষড়যন্ত্র করলেও ভোটের মুখে পরিস্থিতি তারা আয়ত্তে নিয়ে আসে বলে দাবি তৃণমূলের।
দার্জিলিং, দুই দিনাজপুরে বিজেপি লড়াই করার মতো পরিস্থিতিতে ছিল। দার্জিলিংয়ে বিমল গুরুং অনুগামীরা বিজেপিকে মদত দিয়েছে। কিন্তু তৃণমূল সূত্র জানাচ্ছে গোটা উত্তরবঙ্গ নিয়েই তারা আশাবাদী। এমনকী, মুর্শিদাবাদেও শাসকদলই সন্তোষজনক পরিস্থিতিতে আছে বলে দাবি তাদের। নবাবের রাজধানী পার করলে একদিকে বীরভূম ও বর্ধমান, অন্যদিকে নদিয়া। এই তিন জেলাতেই শাসকদল তাদের ভোট ব্যাঙ্কে কাউকে দাঁত ফোটাতে দেয়নি বলে খবর। নেতৃত্ব জানাচ্ছে, বুথে বিজেপির এজেন্ট দূর অস্ত, এই জেলাগুলিতে বিজেপি মিছিলের লোক জোগাড় করতে হিমশিম খেয়েছে। অভিযোগ, যাও লোক জোগাড় করেছে তার অধিকাংশই অর্থের বিনিময়ে।
আর ভোটের দিন আসানসোলের বিদায়ী সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় আর বহরমপুরের বিদায়ী সাংসদ অধীর চৌধুরির অবস্থা সকলেই দেখেছে। ভোট মেশিনারির অভাবে একাই তাঁদের পড়িমরি করে ছুটে বেড়াতে দেখেছে গোটা রাজ্য। অন্যদিকে, বীরভূম, নদীয়া, হাওড়া, হুগলী-সহ উত্তর ২৪ পরগনার যে অংশে ভোট হয়ে গিয়েছে, সেখানকার নেতৃত্ব কী বলছে? প্রত্যেকে কার্যত একযোগে জানিয়েছে, আসনপিছু ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বুথে এজেন্ট দিতে পেরেছিল বিজেপি। তা-ও বেলা বারোটার পর তাদের টিকি দেখা যায়নি। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা নেতৃত্বের কথায়, ‘যে কজনকে বুথে বসতে দেখা গিয়েছে, তাদের মাথাপিছু ৬০০ টাকা করে দিয়েছে বিজেপি।’
তবে বুথফেরত হিসাব নিয়ে রাখলেও তা নিয়ে এখনই মুখ খুলতে নারাজ তৃণমূল। তারা এখনও দলনেত্রীর ঠিক করে দেওয়া বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশ পাওয়ার লক্ষ্যেই অবিচল। এবং একইসঙ্গে আত্মবিশ্বাসীও। এর থেকেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, তাদের করা বুথফেরত সমীক্ষার ফলাফল নিয়ে বেশ সন্তুষ্টই রাজ্যের ঘাসফুল শিবির।