বয়স এবং গরমকে হার মানিয়ে প্রচারে ঝড় তুলছেন বাঁকুড়ার তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। যেখানেই সভা বা রোড শো করছেন মানুষ বিপুল ভাবে সমর্থন জানাচ্ছেন তাঁকে। তাই এই কেন্দ্রে যে তাঁর জয় শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা তা একবাক্যে স্বীকার করছেন সকলেই।
সুব্রত মনে করেন, এই কেন্দ্রে এবার তাঁর জয় এতটাই নিশ্চিত যে, তা নিয়ে বেশি কিছু ভাবছেন না। বরং তিনি ভাবছেন লিড নিয়ে। তাঁর ধারণা, এবার তাঁর জয়ের ব্যবধান গতবারের তুলনায় অনেকটাই বাড়বে। এ ব্যাপারে তিনি ২০০ শতাংশ নিশ্চিত। নিশ্চিত হবেন না কেন, যে ৭টি বিধানসভা এলাকা নিয়ে এই লোকসভা কেন্দ্র, যেমন রঘুনাথপুর, শালতোড়া, ছাতনা, বাঁকুড়া, তালডাংরা, রানিবাঁধ ও রাইপুর, সব কটি বিধানসভায় বিধায়ক তৃণমূলের। জেলা পরিষদ তাঁদের হাতে। সব পঞ্চায়েত সমিতি তাঁদের অধীনে। ৯৮ শতাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত তঁাদের হাতে।
সুব্রতবাবুর মতো একজন ওজনদার এবং করিৎকর্মা নেতা এই কেন্দ্রের প্রার্থী হওয়ায় দলের মধ্যে কোনও অসন্তোষের জায়গা ছিল না। বুথকর্মী থেকে জেলা নেতা, সকলে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন তাঁকে জেতাতে। দলের নেতা থেকে কর্মীরা, সকলেই মনে করছেন, তিনি জিতলে তাঁর হাত ধরে এই জেলায় হবে প্রভূত উন্নতি। ইতিমধ্যেই এই জেলার শতাব্দীপ্রাচীন সমস্যা পানীয় জল সঙ্কটের সমাধান করে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সুব্রতবাবু জেলাবাসীর মন কেড়ে নিয়েছেন। এই সমস্যার যে কখনও সমাধান হতে পারে, ইতিপূর্বে কেউ কখনও তা ভাবেনওনি।
সুব্রতবাবু জানালেন, তাঁর রাজনৈতিক জীবন ৫০ বছরের। এর মধ্যে ৪৮ বছর ধরে তিনি বিধায়ক। দুই মুখ্যমন্ত্রীর মন্ত্রিসভায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্বে। তেমন অভিজ্ঞ একজন রাজনীতিককেই মানুষ বেছে নেবেন, এই দৃঢ় বিশ্বাস তাঁর আছে। তা ছাড়া এই মুহূর্তে এই জেলায় তাঁদের দলীয় সংগঠন অত্যন্ত মজবুত। অন্য দুটি দল, তাঁদের ধারে কাছে নেই।
টানা প্রায় দেড়মাস ধরে গোটা নির্বাচনী এলাকায় প্রচার করেছেন সুব্রতবাবু। যেখানেই কোনও দুর্বলতা তাঁর নজরে এসেছে, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছেন। আদিবাসীরা যে তাঁদের পাশে ভীষণভাবেই রয়েছেন, প্রচারে গিয়ে প্রত্যেকদিন তিনি তা উপলব্ধি করেছেন। গ্রামে ঢুকতে গেলেই আদিবাসী রমণীরা তাঁর পা ধুইয়ে দিয়েছেন জল দিয়ে এবং নিজেদের শাড়ির আঁচল দিয়ে তা মুছিয়ে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, শেষে মহুয়া ফুলের মালা তাঁকে পরানো হয়েছে। তিনি বারবার আপত্তি করেছেন, কিন্তু কেউ তাঁর আপত্তিতে কর্ণপাত করেননি। তাঁকে বারবার শুনতে হয়েছে, এটিই নাকি প্রিয় অতিথিকে বরণ করার আদিবাসী প্রথা। মাইলের পর মাইল আদিবাসী মা, বোনেরা হেঁটেছেন তাঁর সঙ্গে। তাই তাঁর বিশ্বাস, শুধু জয় নয়, এবার ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রেও তাঁর সঙ্গে অনেকটাই ব্যবধান বেড়ে যাবে বিরোধীদের। তা ছাড়া অন্য প্রার্থীদের সঙ্গে তাঁর একটা মস্ত বড় তফাত আছে। তা হল, তাঁরা গ্রামবাসীদের কাছে যেয়ে ভোট চাইছেন কাজ করবেন এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে। আর তিনি ভোট চাইতে গেছেন, অনেক কাজ শেষ করে।
ছাতনা বিধানসভার কমলপুরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী অশোক মণ্ডলও মনে করেন, সুব্রতবাবুর জেতা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। অন্য দুই প্রার্থীর চেয়ে যোগ্যতায় এবং কর্মকুশলতায় সুব্রতবাবু যে কয়েকশো গুণ এগিয়ে রয়েছেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শালতোড়া বিধানসভার সালমা গ্রামের প্রান্তিক চাষি অজিত দাসও মনে করেন, সুব্রতবাবুর জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা। পানীয় জল সঙ্কটের সমাধান করায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির পাশে সুব্রত মুখার্জির নামটিও জেলার ইতিহাসে লেখা থাকবে। রানিবাঁধ বিধানসভার হিড়বাঁধের ক্ষুদ্র চাষি কমল বাউরিও মনে করেন, সুব্রতবাবুর জয় অবশ্যম্ভাবী।