দুই প্রার্থীতে দারুণ মিল। দুজনেরই বাড়ি পাটনার পাশাপাশি দুই রাস্তায়। পার্টির টিকিট হাতে পাটনা এয়ারপোর্টে নেমেই স্বদলীয় বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন একজন। আর প্রদেশ কংগ্রেস অফিসে গিয়ে সহকর্মীদের ক্ষোভ দেখতে হল অন্যজনকে। এবারের ভোটযুদ্ধে এই দুজনের মধ্যেই এক অদ্ভুত লড়াই দেখবে পাটনা সাহিব। রাজ্যের ৪০টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে এই কেন্দ্র একেবারে অন্যরকম। এখানে সরাসরি লড়াই বিজেপি আর ‘না-বিজেপি’র মধ্যে। ২০১৪ ভোটে রেকর্ড ভোটে জেতা সদ্য ‘না-বিজেপি’ শত্রুঘ্ন সিনহার পাশে দাঁড়িয়েছে কংগ্রেস, রাষ্ট্রীয় জনতা দল-সহ মহাগঠবন্ধনের সমস্ত দল। আর পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝেই বিজেপি সরাসরি নির্বাচনে নামিয়ে দিয়েছে মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদকে।
প্রসঙ্গত, ছাত্র জীবনে এবিভিপি, পরে আরএসএসের সক্রিয় কর্মী। লম্বা রাজনৈতিক জীবনে রাজ্যসভাতেই কাটানো আইনজীবী রবিশঙ্কর এবার সম্মুখ সমরে। তা-ও দলেরই সদ্য প্রাক্তন মন্ত্রী বিহারিবাবুর বিরুদ্ধে। কিন্তু, তাঁকে মানছে না দলীয় কর্মীরাই। পাটনা এয়ারপোর্টে নেমেই তাঁদের ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন বর্ষীয়ান এই নেতা। তবে খোদ প্রদেশ কংগ্রেস অফিসে সহকর্মীদের বিক্ষোভ দেখতে হয়েছে শত্রুঘ্নকেও। পরে প্রদেশ সভাপতি সমীরকুমার সিং ও প্রেমচন্দ্র মিশ্র অবস্থা সামাল দেন। তবে এখলি দুই প্রার্থীর মধ্যে আরেকটি মিল হল একে অপরের বিরুদ্ধে নীরব থাকা। রবিশঙ্করের মতে, ‘নীরবতাই আমাদের লড়াইচিহ্ন।’ আর বিহারিবাবু তাঁর স্বকীয় ভঙ্গিমায় বলেন, ‘রবিশঙ্কর ভদ্রমানুষ। ভদ্র পরিবার থেকে এসেছেন, আমার ভাল বন্ধু।’
পাটনা সাহিব স্টেশন রোড থেকে শুরু করে বাজার এলাকা বা হাই রোড, কোথাও কিন্তু কারওই তেমন প্রচার নেই। দেওয়াল লিখনের তেমন চল গোটা বিহারেই নেই। কিছু ফ্লেক্স, পোস্টার বাদ দিলে ভোট বলে মনেই হয় না। প্রার্থী বলতে অধিকাংশই বিহারিবাবুর কথাই জানেন। তবে বিহারে জাতি-রাজনীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু নীচ জাতি নয়, উঁচু জাতির ক্ষেত্রেও। পাটনা সাহিবে উঁচু জাতি মানে কায়স্থ ২৮ শতাংশ। এই ভোটটা কিন্তু ভাগ হবে দুই প্রার্থীর মধ্যে। আর যাদব ও মুসলিম ভোট যে কিছুতেই বিজেপির দিকে যাবে না, তা জলের মতো সাফ। যদিও বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদী বলছেন, আমেরিকা থেকে ট্রাম্প এসে দাঁড়ালেও নাকি পাটনা সাহিবে বিজেপির জয় কেউ আটকাতে পারবে না। তবে বিহারিবাবুর জবাব, ‘পারলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এসে পাটনা সাহিবে দাঁড়ান। আমি খুব খুশি হব।’
উল্লেখ্য, বিমানবন্দর থেকে পাটনা সাহিব পৌঁছে, পরেরদিনই সোজা রাবড়ি দেবীর বাড়িতে চলে গেছেন শত্রুঘ্ন। সেখানে রাবড়ি, তেজস্বীর সঙ্গে অনেকক্ষণ কাটিয়ে এসে তিনি জানান, এঁরা আমার পারিবারিক বন্ধু। জেলের হাসপাতালে লালুর সঙ্গেও যে তিনি দেখা করেছেন, সে কথা জানিয়ে বিহারিবাবু বলেন, ‘লালুজির পরামর্শেই আমি কংগ্রেসে যোগ দিয়েছি।’ আর প্রাক্তন সহকর্মী রবিশঙ্করকে নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় তিনি বলেন, কিছু বলব না। নীতির বিরুদ্ধে লড়ছি। জয়প্রকাশকে দেখে রাজনীতিতে আসা বিহারিবাবু ৮০-র মাঝামাঝি বিজেপি ঘনিষ্ঠ হন। সেই তিনিই এখন সাফ জানাচ্ছেন, “বিজেপি এখন ‘ওয়ান ম্যান শো, টু ম্যান আর্মি’। অন্যদের বিষয়ে বলে কী লাভ?”
পাটনা সাহিব ডিলিমিটেশনের পর নতুন কেন্দ্র। এই তৃতীয়বারের জন্য ভোট হচ্ছে এই কেন্দ্রে। দু’বারই লক্ষাধিক ভোটে জেতা শত্রুঘ্ন ইতিমধ্যেই প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। দেশের বিরোধী নেতাদের সুরেই এলাকার বিজেপি সাংসদের মুখেই শুনছে মানু্ষ। ‘আপনার অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা এসেছে? নোটবন্দী তো দেশের সবচেয়ে বড় স্ক্যাম! চাকরি কজন পেয়েছেন? সারের দাম কত? প্রশ্ন করলেই দেশদ্রোহী? এ জন্যই কি আডবাণী, মুরলী মনোহর যোশিরা টিকিট পাননি?’ দলে টিকিট না পেয়ে অন্য দলে বা নির্দল হয়ে ভোটে দাঁড়ানো নতুন কিছু নয়। তবে শত্রুঘ্নকে সেই দলে ফেলা যাবে না। কারণ ২ বছর ধরে দলের মধ্যে থেকেই দলীয় অবস্থানের প্রতিবাদ করছিলেন তিনি। অবশেষে দলীয় টিকিট প্রত্যাখ্যান করেই কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন বিহারিবাবু। এবং তাঁর সামনে এখন একটাই লক্ষ্য, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের পর মোদী-শাহ-সহ গোটা গেরুয়া শিবিরকে ‘খামোশ’ করে দেওয়া।