‘এটা ভালোবাসবার পাড়া, দূর হটো দাঙ্গাবাজ যারা’ – লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে আগেই বাংলার মা-মাটি-মানুষের সুর বেঁধে দিয়েছে তৃণমূলের থিম সং ‘মা মাটি মানুষ’। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়াতে জনপ্রিয় হয়েছে তৃণমূলের সেই প্রথম নির্বাচনী গান। তবে তার ‘লুপ’ কাটতে না কাটতেই এবার নতুন ভোটারদের জন্য তৃণমূল নিয়ে এল একটি নতুন গান – ‘প্রথম ভোট’। শনিবার ২০শে এপ্রিল বেলা ১২ টায় দলের বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে প্রকাশ পায় গানটির ভিডিও। আর প্রকাশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা ভাইরাল।
ভিডিওর ‘ফরম্যাট’ টি হল আন্তর্জাতিক লিরিক – অ্যানিমেশন এর মাধ্যমে গানের কথা ভেসে উঠবে মোবাইল বা কম্পিউটার স্ক্রিনে। হ্যাঁ, অধুনা ইউটিউবে দাপিয়ে বেড়ানো আধুনিক লিরিক ভিডিওর মাধ্যমে ও অ্যানিমেশনের সাহায্যে ভোট-বার্তা তুলে ধরা হয়েছে নয়া প্রজন্মের সামনে। গানের শুরুতেই বলা হচ্ছে, ‘এবারের ভোট যাদের জীবনের প্রথম ভোট/ তারা জেনে নাও, বুঝে নাও, শুনে নাও, গুণে নাও/ জীবনের প্রথম ভোট বাংলার পক্ষে দেবে, না বিপক্ষে দেবে, সিদ্ধান্ত তোমার, পছন্দ তোমার।’
২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই ‘প্রথম ভোট’-এর গুরুত্বের পাশাপাশি এই ভিডিও-প্রচারে হাইলাইট করা হয়েছে বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কথাও। গানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত ‘কন্যাশ্রী’ থেকে ‘যুবশ্রী’ প্রকল্পের তথ্য সম্পর্কেও সচেতন করা হয়েছে। একদিকে যখন সারা দেশ হিংসা, হানাহানির রাজনীতিতে জর্জরিত, বাংলায় আছে শান্তি ও সম্প্রীতির পরিবেশ। বিভেদের রাজনীতি নয়, বাংলায় গুরুত্ব পাচ্ছে উন্নয়ন – ৬০ লক্ষ মেয়ের ক্ষমতায়ন করে কন্যাশ্রী আজ বিশ্বজয়ী। উৎকর্ষ বাংলা, সবুজ সাথীও পেয়েছে আন্তর্জাতিক সম্মান।
একদিকে যখন দেশজুড়ে বেকারত্ব বাড়ছে, বাংলায় গতিধারার হাত ধরে স্বাবলম্বী হয়েছে বেকার যুবক-যুবতীরা। রাজারহাটে তৈরী হচ্ছে সিলিকন ভ্যালি হাব – যা খুলে দেবে কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত। ফিফা অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপের পর বাংলার যুবভারতী আজ দেশের সেরা স্টেডিয়াম। তাই গানের মাধ্যমে বলা হয়েছে, প্রথম ভোটারদের ‘ডিসিশন নিতে হবে’। তাদের ভোটটা বাংলার পক্ষে হবে না বিপক্ষে হবে? সিদ্ধান্ত ও পছন্দ সম্পূর্ণ নতুন ভোটারদের। এই গানে তাদের সিদ্ধান্তটা সহজ করে দিতে বাংলার গণতান্ত্রিক পরিবেশের কথা বলা হয়েছে। প্রথম ভোটটা শান্তি, প্রগতি, উন্নতির পক্ষে, দেশের ও বাংলার পক্ষে দেওয়ার জন্যই আবেদন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, জাতীয় লোকসভা নির্বাচনে তারুণ্যের প্রভাব হবে অনস্বীকার্য। প্রায় ৫ কোটি নতুন ভোটার প্রথমবার তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে ২০ লক্ষ নতুন ভোটারই বাংলায়। গানে তাঁদের উদ্দেশ্য করে এ কথাও বলা হয়েছে যে, ‘নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন উড়ান নতুন ডানা পাবে।’ শুধু তাই নয়, জীবনের প্রথম ভোট দিতে যাওয়ার আগে তাঁদের এ কথাও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, ‘ভরসা উশুল, তৃণমূল জোড়াফুল/ ভরসায় নেই ভুল, জোড়াফুল তৃণমূল।’ ভিডিওর শেষে বাংলার উন্নয়ন এবং অধিকারের স্বার্থে, ধর্মনিরপেক্ষ-প্রগতিশীল সরকার গড়ার লক্ষ্যে তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার আহ্বানও জানানো হয়েছে প্রথম ভোটারদের উদ্দেশ্যে।
উল্লেখ্য, ‘প্রথম ভোট বাংলার পক্ষে না বিপক্ষে’ – এই কথাটি তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত। তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী গানের বাকি কথা লিখেছেন ও সুর দিয়েছেন রূপম ইসলাম। প্রচার-গানটি নিয়ে বার্তা দিয়েছেন অভিষেক নিজেও। তিনি বলেছেন, ‘বাংলার যুব প্রজন্মের কাছে আহ্বান, আগামী এক মাসে এই র্যাপ গানটি নানাভাবে ব্যবহার করো। নাচের মাধ্যমে, ভিডিওর মাধ্যমে, ফ্ল্যাশ মব কিংবা তোমাদের যেভাবে মন চায়, সেভাবে নিজেদের শৈল্পিক চিন্তাকে উন্মুক্ত কর।’ উল্লেখ্য, আঙুলে কালি নিয়ে নিজস্বী, সঙ্গে পছন্দের হ্যাশট্যাগও। ভোট-উৎসাহে আলাদা অনুভূতি থাকে প্রথম ভোটারদের। তৃণমূলের বিশ্বাস, তাঁদের উৎসাহ প্রদানে কোনও খামতিই রাখবে না এই গান।