‘রাজ্যে ৪২-এর মধ্যে ৪২টি আসন জিতে বাংলাই এবার দিল্লীতে সরকার গড়বে। বাংলা দেখিয়ে দেবে, বাংলা যা পারে তা আর কেউ পারে না।’ বৃহস্পতিবার কোচবিহারের মাথাভাঙার সভা থেকেই এ কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর গলায় শোনা গেল এমনই আত্মবিশ্বাসের সুর।
এবারের লোকসভা ভোটে বিজেপিকে হারাতে একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থী দিয়ে ফেডারেল ফ্রন্ট তৈরির ডাক দিয়েছিলেন প্রথম মমতাই। এবং তা এই বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়েই। তাঁর মূল লক্ষ্যই ছিল বিভিন্ন রাজ্যে প্রধান আঞ্চলিক দলগুলির শক্তিবৃদ্ধি। যাতে কেন্দ্রে বিরোধীদের মিলিত সরকার গড়ার ক্ষেত্রে আঞ্চলিক দলগুলির ভূমিকা প্রাধান্য পায়।
সেই মতোই রাজ্য থেকে তৃণমূল যত বেশি সংখ্যক আসন জিততে পারবে, কেন্দ্রে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে তাদের জোর তত বাড়বে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, মমতার গতকালের বক্তব্য তারই প্রকাশ। তৃণমূলের বিভিন্ন নেতা ইতিমধ্যেই বলছেন, মমতাই হবেন দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। মমতা নিজে অবশ্য বলেছেন, তিনি পদের প্রত্যাশী নন। তাঁর বক্তব্য, দেশের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, তা ঠিক হবে ভোটের পরে।
বুধবারের মতো গতকালের সভাতেও প্রথম থেকেই আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মোদীকে কটাক্ষ করতে গিয়ে তিনি তাঁকে ‘প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী’ এবং ‘ভুয়ো চৌকিদার’ বলেও সম্বোধন করেন। তাঁর কথায়, ‘পাঁচ বছরে কিছু ভাবার সময় হল না। এখন ভোটের সময় বলছে, আমি ভাবছি। যেন হরিদাস। আর ভাবার সময় নেই। তোমাকে আর ভাবতে হবে না। অনেক ভেবেছো বাবা।তুমি মহম্মদ বিন তুঘলকের ঠাকুরদাদা, হিটলারের জ্যাঠামশাই। ফ্যাসিবাদী শক্তি।’
নোটবন্দী এবং এনআরসি প্রসঙ্গে বিজেপিকে আক্রমণ করে তাঁর বক্তব্য, ‘আসামে ওরা হিন্দু এবং মুসলিম বাংলাভাষীদের তাড়াচ্ছে। বাংলা সবাইকে আশ্রয় দেবে।’ মমতার অভিযোগ, নোটবন্দী করে প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষকে বিপাকে ফেলেছেন। এনআরসিতে অসমের ৪০ লক্ষ মানুষ বিপাকে। পাহাড়ে আগুন জ্বালানোর পেছনেও মোদীর ইন্ধন রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
মোদীর বিরুদ্ধে হঠকারিতার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘হঠাৎ মনে হল নোটবন্দী করে দিলেন। হঠাৎ মনে হল জিএসটি করে দিলেন। হঠাৎ মনে হল তিনি চৌকিদার হয়ে গেলেন। হঠাৎ মনে হল উনি চাওয়ালা হয়ে গেলেন। নিজেকে নিয়ে আবার একটা সিনেমাও বানিয়েছেন! কেন লোকে দেখবেন ওঁকে?’
এর পরেই তিনি তুলে ধরেন গত ৫ বছরে বেকারত্বের প্রসঙ্গ। বিএসএনএল কর্মীদের বেতন না হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে তাঁর অভিযোগ, এই সরকারের আমলে ২ কোটি মানুষের কাজ গিয়েছে। অথচ ক্ষমতায় আসার সময় এরাই বলেছিল, কালো টাকা দেশে ফিরিয়ে প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে দিয়ে দেবে। তাঁর কটাক্ষ, ‘তাহলে কত বড় ধুরন্দর ভাবুন। ভোট নিয়েছেন ধাপ্পা দিয়ে। ভোটের পরে এখন আবার চা-ওয়ালা আর চৌকিদার সেজেছেন।’
এবার কোচবিহারের তৃণমূল প্রার্থী পরেশ অধিকারী। সভার শুরুতেই পরেশের সম্পর্কে বলতে গিয়ে মমতা জানান, তিনি দীর্ঘদিনের বামপন্থী আন্দোলনের নেতা। কিন্তু বামপন্থীদের বেশিরভাগই সাম্প্রদায়িক দলে চলে গিয়েছেন। সেটা বুঝতে পেরেই পরেশবাবু তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। কোচবিহারবাসীকে মমতা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, রাজ্যে ৪২-এর মধ্যে ৪২টি আসন জিতে বাংলাই এবার দিল্লীতে সরকার গড়বে। বাংলা দেখিয়ে দেবে, বাংলা যা পারে তা আর কেউ পারে না।