হাতে বাকি আর মাত্র ১৭ দিন। আগামী ১১ এপ্রিল থেকে দেশজুড়ে শুরু হতে চলেছে লোকসভা নির্বাচন। যা সাত দফায় চলবে ১৯ মে পর্যন্ত। এরপর ২৩ মে হবে ভোটের ফলপ্রকাশ। এখন প্রশ্ন উঠছে ভোটের পর কি নরেন্দ্র মোদীকে আবার ৭, রেসকোর্স রোডে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে দেখা যাবে? রাজধানীর রাজনৈতিক মহল নিশ্চিত – না! বস্তুত, কোন পাটিগণিতের অঙ্কে মোদী আর রেসকোর্স রোডে ফিরবেন না, তা নিয়ে আপাতত জোর জল্পনা চলছে দিল্লীর বিভিন্ন মহলে।
সেই পাটিগণিত খুব সরল এবং স্পষ্ট। প্রাথমিকভাবে যেমন বলা হচ্ছে, দেশের ৭টি রাজ্যে যে ১৯৩টি লােকসভা আসন আছে, তার মধ্যে খুব বেশি হলে মােদী ৫ থেকে ১০টি আসন জিততে পারে। এই রাজ্যগুলি হল তামিলনাড়ু, কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, কর্ণাটক, উড়িষ্যা এবং বাংলা। কেন এই রাজ্যগুলি থেকে বড়জোর ১০টি (সবচেয়ে কম ৫টি) আসন পেতে পারেন বিজেপি? এর ব্যাখ্যা হিসেবে বলা হচ্ছে, ২০১৪ সালে প্রবল মােদী-হাওয়ার
মধ্যেও এই রাজ্যগুলির মােট ১৯৩টি আসনের মধ্যে মাত্র ২১টি আসন জিতেছিল বিজেপি। তার মধ্যে ১৭টি আসন ছিল কর্ণাটকে।
কিন্তু এবার কর্ণাটকের রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে গেছে। সেখানে এবার কংগ্রেসের সঙ্গে দেবগৌড়ার জনতা দলের জোট হয়েছে। অঙ্ক বলছে, কর্ণাটকে এই দুটি দলের মোট ভোটের পরিমাণ ৫৬ শতাংশ। আর এবার সেভাবে কোনও মােদী-হাওয়া নেই। পাশাপাশি, যে ৭টি রাজ্যের কথা আলোচনা করা হচ্ছে, তার মধ্যে একমাত্র তামিলনাড়ুর দল এডিএমকের সঙ্গে জোট গড়তে পেরেছে বিজেপি। বাকি কোথাও কোনও আঞ্চলিক দলের সঙ্গে তাদের জোট হয়নি। আবার এডিএমকের সঙ্গে বিজেপি জোট গড়লেও এডিএমকেও আড়াআড়ি ভাবে বিভক্ত। এবং তা এতটাই যে, তারা একটি আসনও না জিততে পারে। ফলে এই ১৯৩টি আসনে বিজেপি তথা মোদীর ভরাডুবি এখন পর্যন্ত অনিবার্য বলেই মনে করা হচ্ছে।
পাটিগণিতের পরের ধাপ উত্তরপ্রদেশ। ২০১৪ সালে যেখানে ৮০ টি আসনের মধ্যে ৭১টি জিতেছিল বিজেপি। কিন্তু ওয়াকিবহাল মহল মনে করিয়ে দিচ্ছে, তখন কোনও বিরোধী জোট হয়নি। সকলেই আলাদা আলাদা লড়েছিল। দলে বিজেপি-বিরোধী ভোট ভেঙেচুরে ছত্রখান হয়ে গিয়েছিল। তবে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয়, যােগী আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এখনও পর্যন্ত খুব সফল, এমন কথা তার অতি বড় সমর্থক বলবেন না। আর, দ্বিতীয়ত এবার সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি এবং রাষ্ট্রীয় লোক দল জোট বেঁধেছে। যাদের মিলিত ভোটের
পরিমাণ ৪৪ শতাংশ।
ঘটনাচক্রে, ২০১৪ সালে উত্তরপ্রদেশের বিজেপির ভােট ছিল ৪২ শতাংশ। সেই হিসেবে বিজেপি এবার উত্তরপ্রদেশে ২০ থেকে ২৫টি আসনের বেশি পেতে পারে না বলেই রাজধানীর রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য। বিশেষজ্ঞদের আরও অভিমত, ওই তিন বিরোধী দলের সঙ্গে কংগ্রেস যোগ দিলে বিজেপি উত্তরপ্রদেশে ‘শূন্য’ হয়ে যেতে পারে। এছাড়া রয়েছে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়। ওই তিনটি রাজ্যে মােট লােকসভা আসন ৬০টি। তিনটি রাজ্যেই কয়েক মাস আগের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস জিতেছে। রাজধানীর জল্পনা, ওই তিনটি রাজ্যে মােদীর আসন ৩০-ও পেরাবে না।
এই অঙ্ক সত্যি হলে ১১টি রাজ্যের মোট ৩৩৩টি আসনের মধ্যে বিজেপির আসন সংখ্যা ৬৫-ও পেরবে না। বাকি রইল ২০৭টি আসন। সরকার গড়তে গেলে ২৭২টি আসন পেতে হবে। ফলে বাকি ২০৭টি আসনের মধ্যে মোদী তথা বিজেপিকে ২০৬টি আসন পেতে হবে। যা অসম্ভব। সামগ্রিকভাবে এই অঙ্ক বলছে, মােদী পেতে পারেন সর্বোচ্চ ১৩৫টি আসন। সর্বনিম্ন ৭০টি। এর সঙ্গেই যে বিষয় নিয়ে রাজধানীর রাজনৈতিক মহল আলোচনায় মশগুল, তা হল— ২০১৪ সাল থেকে গত পাঁচ বছরে যে ২৫টি রাজ্যে ভোট হয়েছে, তার মধ্যে ১৫ টির হেরেছেন মোদী। যার মধ্যে রয়েছে দিল্লী, পাঞ্জাব, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড়।
শুধু তাই নয়। মোদীর নিজের রাজ্য গুজরাটেও বিধানসভা ভোটে মাত্র ৭টি আসনের গরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করতে হয়েছে বিজেপিকে। পাশাপাশি বিরোধীদের অভিযোগ, গোয়া এবং মণিপুরে বিজেপি রাজ্যপালের মারফত ক্ষমতা দখল করেছে। বস্তুত, ২০১৮ সালে ত্রিপুরা ছাড়া একটি রাজ্যেও জেতেনি বিজেপি। বাকি ৯টি রাজ্যে বিধানসভা ভোটে হেরেছেন মোদী। ফলে এই অঙ্কে ভর করেই এ কথা খুব স্পষ্ট ভাবে বলা যায় এবার ৭, রেসকোর্স রোডে ফেরা হচ্ছেনা বিগত ৫ বছর ধরে ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’-এর স্বপ্ন ফেরি করে যাওয়া মোদীর। কারণ আগামী ২৩ মে-ই তাঁর ‘আচ্ছে দিন’-এর শেষ হতে চলেছে।