কয়েক হাজার কোটি টাকার ব্যাঙ্ক জালিয়াতি করে ভারত ছাড়ার পর লন্ডনেই আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। ছিলেন একেবারে রাজার হালে। তবে গ্রেফতারির পর ওয়েস্ট এন্ড সেন্টার পয়েন্টের সেই ফুরফুরে মেজাজ, হাসি মাখা মুখ আর নেই। বুধবার থেকেই দক্ষিণ লন্ডনের জেলে ঠাঁই হয়েছে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ খেলাপে অভিযুক্ত নীরব মোদীর। ন’লাখের স্যুটের বদলে গায়ে উঠেছে সাধারণ পোশাক, সাদা শার্ট আর ট্রাউজার্স। ৪৮ বছরের হীরে ব্যবসায়ীর চোখে দেখা দিয়েছে চিন্তার ছায়া।
গতকালই ওয়েস্টমিনস্টারের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়েছিল নীরবকে। কিন্তু শুনানির সময় সেখানে চুপচাপই ছিলেন তিনি। প্রয়োজনের অতিরিক্ত একটাও শব্দ খরচ করেননি। তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ করে আপাতত জেল হেফাজতে থাকারই নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ২৯ মার্চ পর্যন্ত দক্ষিণ লন্ডনের ‘হার ম্যাজেস্টি’স প্রিসন’ (এইচএমপি) হবে নীরবের নয়া ঠিকানা।
লন্ডন এবং ওয়েলসের যতগুলো জেল রয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে ঘিঞ্জি হলো ‘হার ম্যাজেস্টি’স প্রিসন।’ ওয়ান্ডসওয়ার্থের এই জেলে কয়েদিদের ঠাসাঠাসি ভিড়। গ্রেফতার হওয়ার আগে পর্যন্ত ওয়েস্ট এন্ডের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে কাটিয়েছেন নীরব। সেখান থেকে সরাসরি তাঁকে তুলে আনা হয়েছে এই জেলের ঘিঞ্জি পরিবেশে।
২০১৮ সালের মার্চে করা একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, এই জেলে বন্দির সংখ্যা ১৪২৮ জন। মাদক পাচারকারী কিংবা মানসিক ভাবে অসুস্থ বন্দিরা যেমন আছেন এখানে, তেমনই দাউদ ইব্রাহিমের ঘনিষ্ঠ বলে অভিযুক্ত জাবির মোতিও আপাতত এই জেলে। তাঁর আমেরিকায় প্রত্যর্পণের মামলা চলছে। প্রসঙ্গত, ১৮৫১ সালে তৈরি হয় এই জেল। বহুবার এখানকার পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। বন্দীর সংখ্যা যেমন বেশি, তেমনি পরিচ্ছন্নতার খামতি রয়েছে সেলগুলিতে। যে সেলে এক জনের থাকার কথা, সেখানে রাখা হয় দু’জনকে। অপরিচ্ছন্ন শৌচাগার। দিনের বেশির ভাগ সময় বন্ধই থাকে সেলের দরজা।
পিএনবি প্রতারণা মামলার প্রধান অভিযুক্তের জামিন আদায়ের চেষ্টায় খামতি রাখেনি তাঁর আইনজীবী দল। ব্যারিস্টার জর্জ হেপবার্ন-স্কটের সঙ্গে সলিসিটর আনন্দ দুবে তাঁর হয়ে প্রত্যর্পণ মামলার লড়াই করছেন। স্কট আদালতকে জানিয়েছেন, আত্মসমর্পণ করতে নাকি রাজি ছিলেন নীরব। তদন্তে সহযোগিতারও আশ্বাস দিয়েছিলেন।
নীরবের আইনজীবীদের দাবি, বরাবরই প্রকাশ্যে থেকেছেন তিনি। নতুন হীরে ব্যবসা নয়, বরং ১৮ লক্ষ টাকা মাইনের একটি চাকরি করছিলেন তিনি। ৫ লক্ষ পাউন্ড বন্ডে জামিনের আর্জির পাশাপাশি নীরব কঠিনতম শর্ত মেনে চলতেও রাজি বলে জানান তাঁরা। তবে নীরবের আইনজীবীদের আবেদন খারিজ করে বিচারক মারি ম্যালন বলেন, ‘নীরব কোটি কোটি টাকা আর্থিক কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত। তাঁর বিরুদ্ধে তছরুপের অঙ্কটা এতটাই বিরাট যে জামিন পেলে তিনি যে আত্মসমর্পন করবেন, এমন ভাবার কারণ নেই।’ অর্থাৎ বিচারক এক প্রকার বুঝিয়েই দিলেন যে এই মুহূর্তে কোনও ভাবেই জামিন মিলবে না পিএনবি কান্ডে অভিযুক্ত নীরবের।