নির্বাচন কমিশন ভোট ঘোষণা করে দেওয়ার পর, রাজ্যে একে একে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে তৃণমূল-সহ অন্যান্য দলগুলি। কিন্তু প্রার্থী বাছাই নিয়ে দলের অন্দরে তৈরি হওয়া গোষ্ঠীদ্বন্দের জেরে বিজেপি এখনও তাদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে উঠতে পারেনি। ৪০০ জনের মধ্যে থেকে কোন ৪২ জন প্রার্থী হবেন, তা নিয়েই এখন টানাপোড়েন শুরু হয়েছে গেরুয়া শিবিরে। আসলে, রাজ্যের ৪২টি আসনের জন্য কয়েক হাজার নাম জমা পড়েছিল বিজেপিতে। তার মধ্যে থেকে ঝাড়াই বাছাই করে প্রায় ৪০০ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম নিয়ে রবিবার দিল্লী গেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সঙ্গে রয়েছেন রাজ্য বিজেপির অন্যান্য শীর্ষ নেতৃত্বও। বাংলার দলীয় প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত করার আগে গতকাল রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে একপ্রস্থ বৈঠকও সেরেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা। এখনও পর্যন্ত দলীয় সূত্রের খবর, দার্জিলিং ও আসানসোলে দলের প্রার্থী বদল হচ্ছে না।
অন্যদিকে, অমিত শাহের দেওয়া ২৩টি আসন জয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের থেকেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামাল দেওয়া কার্যত বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে রাজ্য বিজেপির। ভিন দল থেকে বিজেপিতে এসেই গেরুয়া শিবিরের টিকিট পেয়ে গেলে প্রার্থীকে কেন্দ্র করে দলের নিচুতলায় তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি হবে। দলের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা নিয়ে আলোচনায় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে এমনটাই জানিয়েছেন দলের রাজ্য নেতারা। দলীয় সূত্রের খবর, ভিন দল থেকে যাঁরা সম্প্রতি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাব্য খবরে ইতিমধ্যেই দলের নিচুতলার একটি অংশে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বাংলার ৪২টি কেন্দ্রের জন্য প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে তাই এই বিষয়টিকে মাথায় রাখার জন্য দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকেও আর্জি জানিয়েছেন দিলীপ ঘোষেরা।
গতকাল দিলীপ বলেন, ‘রাজ্যের লোকসভা কেন্দ্রগুলিতে প্রার্থী হতে চেয়ে প্রচুর আবেদন জমা পড়েছে। তার মধ্যে থেকে ঝাড়াই বাছই করে ৪২টি আসনের জন্য প্রায় ৪০০ জনের নাম নিয়ে আমি দিল্লীতে এসেছি। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহই ডেকে পাঠিয়েছেন আমাদের।’ দলীয় সূত্রের খবর, রাজ্যের যে দুটি আসনে দলের সাংসদ রয়েছেন, সেই দার্জিলিং এবং আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে সম্ভবত তাঁদের বদল করা হবে না। গতবারের জয়ী প্রার্থীরাই এই দুটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সেইমতোই দার্জিলিং লোকসভা আসনে বিজেপির প্রার্থী হতে পারেন সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া। আসানসোলে তৃণমূলের প্রার্থী মুনমুন সেনের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন বিজেপির বাবুল সুপ্রিয়ই।
সেইসঙ্গে জানা গেছে, কোচবিহার থেকে প্রার্থী হতে পারেন দীপক বর্মন। আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে প্রার্থী হতে পারেন মনোজ টিগ্গা। কলকাতা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করা হতে পারে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পরিবারের অন্যতম সদস্য চন্দ্রকুমার বসুকে। তবে বিজেপি নেতৃত্ব এ-ও জানিয়েছে যে, কয়েকদিনের মধ্যে উত্তরবঙ্গ থেকে ভিন দলের আরও কয়েকজন হেভিওয়েট নেতাকে গেরুয়া শিবিরে যোগদান করানো হবে। সেক্ষেত্রে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ফের বদলে যেতে পারে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, বাংলার জন্য দলীয় প্রার্থী বাছাই করতে গিয়ে যথেষ্ট বিপাকে পড়েছে দল। পাশাপাশি, প্রাণান্তকর অবস্থা হয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেরও।