বইমেলা এক মিলন উৎসব। প্রতিবছর বইপ্রেমীরা অপেক্ষা করে থাকে এই মেলার জন্য। তবে বইমেলায় বইপ্রেমীদের পাশাপাশি নিত্য আনাগোনা বইচোরেদেরও। কথায় আছে, চুরি বিদ্যা মহাবিদ্যা যদি না পড়ো ধরা। তাই আগে পার পেয়ে গেলেও এবছর পুলিশি নজরে প্রায় জব্দ বইচোরেরা।
ভিড়ের সুযোগ নিয়ে বই এর স্টল থেকে অনেক মানুষ চোখের নিমেষে বই সরিয়ে নেন কিন্তু এবার তাঁরা মহা বিপাকে। কারণ, বই মেলার মাঠের সর্বত্র রয়েছে কড়া নজরদারি। কমিশনারেটের ভাষায় ‘ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে নজরদারি চলছে’। সাদা পোশাকে পুলিশকর্মীরা মাঠের পাশাপাশি স্টলের ভেতরে ঢুকেও নজরদারি চালাচ্ছেন। এছাড়া রয়েছে ২০০টি নজরদার ক্যামেরা, ৪টি নজরমিনার। কন্ট্রোল রুমে বসে সিসি টিভিতে চোখ রেখে পুলিশ আধিকারিকেরা জেনে নিচ্ছেন ‘খুঁটিনাটি’ তথ্য।
এ বছর কলকাতা বইমেলার উদ্বোধন হয়েছে গত ৩১ জানুয়ারি। এবারের বইমেলায় গতকাল মানে, সোমবার পর্যন্ত বইচুরির কোনও অভিযোগ আসেনি বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের কাছে। কেবল একজন বই চুরি করে পালাচ্ছে বলে খবর পেলে পুলিশ তাকে সঙ্গে সঙ্গে ধরে ফেলে।
গত বছর বইচুরির অনেক ঘটনা ঘটে, সেই অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে এবারের তৎপরতা বেশি। বইমেলায় বই চুরির বেশ কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছিল পুলিশ। ধরা হয়েছিল এক ইঞ্জিনিয়ারকে , সরকারি দফতরে উচ্চপদে চাকরি করেন তিনি। ভিড়ের মধ্যে বই দেখার অছিলায় বিভিন্ন স্টল থেকে একটা–দুটো নয়, ১৯টি বই সরিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। যার মোট দাম ২৯০০ টাকা। সেই ব্যক্তি ধরা পড়বার পর কি কি বই কোন কোন স্টল থেকে সরিয়েছিলেন সে কথাও সঠিক ভাবে বলতে পারেননি তিনি। নিজের পকেট থেকে টাকা বের করে বইয়ের দাম মিটিয়ে দেওয়ার পর পুলিশের কাছ থেকে ছাড়া পান ওই ইঞ্জিনিয়ার।
অন্যদিকে, বইমেলায় এক ছাত্র ১০০০ টাকার বই হাতিয়েছিলেন খবর পেয়ে তাঁর আত্মীয় এসে বইয়ের দাম দিয়ে যান। এ বছর এখনও পর্যন্ত এ ধরনের ঘটনা নজরে আসেনি। বইমেলায় অন্য বছরের মতো এবারও হাজির পকেটমাররা। গত রবিবার দুটো মোবাইল চুরির ঘটনা শোনা গেছে। এবং একটি ব্যক্তির মানিব্যাগ হারিয়ে যাবার কথা জানা যায়, পরে অবশ্য পুলিশ সেটিকে উদ্ধার করেন।
কলকাতার মানুষের এই শীতকালীন উৎসব এ আকৃষ্ট করবার মতো বই গুলোর লিস্ট কম নয়। যে বই এর কথা না বললেই নয়, সেটা হল জীবনানন্দ দাশের এখনো অবধি অগ্রন্থিত ২০ টি কবিতা নিয়ে “শীতসবিতা”। এই বইয়ের প্রকাশক “অভিযান পাবলিশার্স”। এছাড়া নবারুণ ভট্টাচার্য এর “ডায়েরি ৬৯”, অদিতি বসুরায়ের সদ্য মুক্তি প্রাপ্ত কবিতার বই “সাড়ে তিনটের উড়োজাহাজ”। ৩৫ বছর আগে বিজ্ঞাপিত বই “বসুন্ধরা জানে না” এই বইমেয়ায় পাওয়া যাছে। এ বইতেই কবি অলোক প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন, “তুমি জেগে থাকো বলেই আমাকে জেগে থাকতে হয়”।
সহজপাঠের স্টলে দেবব্রত মুখোপাধ্যায় এর নতুন বই “সেইসব দিনরাত্রি যুগান্তর” পাওয়া যাচ্ছে। “হোমসনামা” নামে একটি বই লিখেছেন কৌশিক মজুমদার। এছাড়াও তাঁর “জেমস বন্ড জমজমাট” নিয়ে উন্মাদনা তুঙ্গে। এছাড়া রয়েছে অয়ন রাহার “আশ্চর্য সাত”।
অন্যদিকে, বইমেলায় ১০০০ টাকার বই কিনে কুপন ভরে ঢাকুরিয়ায় প্রদীপ্ত বন্দোপাধ্যায় পেলেন ১ লক্ষ টাকার বই। স্বভাবতই তারপর কুপন ভরতির হুজুগ বেড়েছে বই কমেনি। সোমবার দুপুরে লটারিতে প্রদীপ্ত বাবুর নাম তোলেন সাহিত্যিক প্রচেত গুপ্ত। সব মিলিয়ে, শীত শেষের উৎসবের আমেজ এখন মধ্যাকাশে। আগামী ১১ তারিখ পর্যন্ত চলবে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা।