আড়াই দশক ক্ষমতায় থেকেও পূরণ করা হয়নি মানুষের প্রতিশ্রুতি। তার ওপর জনগণের থেকে দলের ‘বিচ্ছিন্নতা’ পৌঁছেছিল চূড়ান্ত পর্যায়ে। এমন নানা কারণেই ত্রিপুরায় ভরাডুবি হয়েছে তাদের। রাজ্য সম্মেলনের আলোচনার নির্যাস নিয়ে তৈরি ত্রিপুরা সিপিএমের পার্টি চিঠিতে ধরা পড়ল বামেদের তরফে এমনই আত্মসমালোচনার সুর।
ওই পার্টি চিঠি থেকে জানা গেছে, রাজ্যে ক্ষমতায় থাকার ২৫ বছরে দলের নেতৃত্বের একাংশ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। এর পাশাপাশি, নেতা-কর্মীদের একাংশের আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন জীবনযাত্রাও মানুষের মনে নানা প্রশ্ন তুলেছিল। এক দিকে দলের একাংশের জনবিচ্ছিন্নতা এবং অন্য দিকে বিজেপির নানা চমকপ্রদ প্রতিশ্রুতি, এ সবের জেরেই রাজ্যের মানুষের মধ্যে পরিবর্তনের মানসিকতা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সময়মতো তার আঁচ দলের নেতারা পাননি!
উল্লেখ্য, গত ২৫ থেকে ২৭ নভেম্বর রাজধানী আগরতলায় বসেছিল ত্রিপুরা সিপিএমের ২২তম রাজ্য সন্মেলনের আসর। সম্প্রতি ওই সম্মেলনের আলোচিত বিষয়সমূহ ও গৃহীত সিদ্ধান্ত পার্টি চিঠি (৩/২০১৮) আকারে দলের কর্মীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। জানা গেছে, মোট ৩০ পাতার ওই পার্টি চিঠিতে রয়েছে বিবিধ আত্মসমালোচনা।
ত্রিপুরা সিপিএমের দাবি, আড়াই দশক সরকার চালানোর পরেও সব অংশের মানুষের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ সম্ভব হয়নি বলে বিজেপির ‘চমকপ্রদ প্রতিশ্রুতি’তে রাজ্যের মানুষ ‘মোহগ্রস্ত’ হয়েছিলেন। সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব ত্রুটি স্বীকার করে নিয়ে জানিয়েছেন, জনগণের থেকে দলের বিচ্ছিন্নতা যে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, বিধানসভা ভোটের পরে ও গণনার পূর্বেও তা টের পায়নি রাজ্য কমিটি। রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকারই যে পুনরায় ক্ষমতায় আসবে, তা নিয়ে দলের কোনও স্তরেই কোনও সংশয় ছিল না।
সিপিএমের দলিলেই বলা হয়েছে, পার্টি নেতা ও কর্মীদের একাংশের আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন জীবনযাত্রার কোনও কোনও ক্ষেত্রে দলকে জনগণের থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল। সরকারি সাহায্য বিলিবন্টনে জনগণকে যুক্ত করা ও ‘শ্রেণি ঐক্য’ গঠন করার জন্য দলের আবেদন সব জায়গায় যথাযথ ভাবে কার্যকর হয়নি। ‘রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতা’ দলের উপরের দিকের নেতৃত্বের একাংশকে গ্রাস করেছিল।
তাছাড়া, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন এলাকায় তৎকালীন শাসক দলের দায়িত্বশীল কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে যে স্বজনপোষণ, মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, দলীয় স্তরে তার বিরুদ্ধে ঠিকমতো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। এ সবের জেরেই দলের প্রভূত ক্ষতি হয়েছে বলে স্বীকার করেছে ত্রিপুরা সিপিএম।