তাঁর বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ উঠছিল অনেক আগে থেকেই৷ এমনকি স্নেহের কাননকে বহুবার সতর্ক করেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীও৷ কিন্তু তারপরও বদল ঘটেনি তাঁর গতিবিধিতে৷ ফলে ‘প্রিয় বান্ধবী’র সঙ্গে সম্পর্ক যত কাছের হয়েছে, ততই দূরে সরে গিয়েছে তাঁর দল। অবশেষে ‘প্রেম’-এ অন্ধ হয়ে মন্ত্রীত্বই ত্যাগ করে বসলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়।
প্রায় বছর দেড়েক আগে আলাপ হয় শোভন-বৈশাখীর৷ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক মনোজিত মণ্ডলের স্ত্রী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমে ছিলেন ওয়েবকুটায়। ২০১৪ সালে তিনি ওয়েবকুটার সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করে ওয়েবকুপায় যোগ দেন। ওয়েবকুপায় অবস্থানের জেরে তৃণমূলের পদাধিকারী মহলে তাঁর পরিচিতি বাড়তে থাকে। যোগাযোগ গড়ে ওঠে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। বেশ কিছুদিন আগে শোভনকে ডিলিট দিয়ে সম্মানিত করে আমেরিকার ডেলওয়ারের কেইআইএসআইই ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। সেই অনুষ্ঠানেই দেখা যায় শোভনের সঙ্গে একই ছবিতে রয়েছেন তিনি।
এরপরই গুঞ্জন ছড়ায় বিভিন্ন মহলে। জানা যায়, এক আইনজীবীর মাধ্যমেই কাছাকাছি আসেন দু’জনে৷ এরপর থেকেই টাকা পয়সার হিসেব রাখার কাজে শোভনকে সাহায্য করতে শুরু করেন বৈশাখী৷ ধীরে ধীরে দু’জনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতাও তৈরি হয়। মাঝে চিকিৎসার কারণে লন্ডনে যান শোভন স্ত্রী রত্না৷ তখনই শোভনের বাড়িতে আসেন বৈশাখী৷ পরস্পরের প্রতি অদম্য টান ওই ক’দিনেই আরও কাছাকাছি এনে দেয় দুজনকে৷ যার ফলস্বরূপ লন্ডন থেকে রত্না ফিরলেই বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করে বসেন শোভন৷
এরপরেই ব্যক্তি জীবনের টানাপোড়েনের ছাপ পড়তে থাকে শোভনের রাজনৈতিক জীবনে। পুরসভায় অনিয়মিত। মন্ত্রীর দায়িত্বও ঠিকঠাক পালন করছিলেন না। দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছিল। দলনেত্রীর সঙ্গেও। তবু প্রিয় কাননকে বারবার ফিরে আসার সুযোগ দিয়েছেন মমতা। কাজ হয়নি। ফলে প্রথমে তাঁর জেড প্লাস ক্যাটেগরি নিরাপত্তা ছেঁটে বার্তা দেওয়া হয়৷ দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা সভাপতির পদ থেকেও ছেঁটে ফেলা হয় তাঁকে৷ কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায়, অবশেষে পরিবেশ দফতরের দায়িত্ব থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয় শোভনকে।
তবে এতকিছুর পরেও হুঁশ ফেরেনি ‘প্রেমিক’ শোভনের। বরং আরও বেশি করে ডোন্ট কেয়ার মনোভাব দেখিয়েছিলেন তিনি। ইদানীং তাঁকে ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রায়শই দেখা যাচ্ছিল রেস্তোরাঁ-হোটেল থেকে শুরু করে শপিং মল, আদালত সর্বত্রই। বলতে গেলে, সম্পর্ক নিয়ে আর কোনও রাখঢাকই করছিলেন না এই বেপরোয়া জুটি। তাঁরা সর্বসমক্ষেই স্বীকার করে নিয়েছিলেন দু’জনের সম্পর্কের গভীরতার কথা। তাই এবার কালীপুজো ও ভাইফোঁটায় নেত্রীর বাড়িতে শোভন যখন অনুপস্থিত রইলেন, তখনই পরিস্কার বোঝা গিয়েছিল ফাটলটা কতটা চওড়া হয়েছে।
তাঁর কাজকর্ম ও আচরণে যে বহুকাল ধরেই রেগে ফায়ার হয়ে আছেন ‘দিদি’, তা ভাল মতোই জানতেন শোভন। পরিবেশমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে বৈশাখীকে পরিবেশ দফতরে পদ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগও ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে৷ বারংবার দলনেত্রীর কাছে ভর্ৎসনাও শুনতে হয়েছে তাঁকে। ফলে শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিত্ব ছেড়ে ‘প্রিয় বান্ধবী’ বৈশাখীকেই বেছে নিলেন তিনি। তাঁর মেয়র পদ খোয়ানোও এখন সময়ের অপেক্ষা।