হাতে-গোনা গুটিকতক বশংবদ কর্মী নিয়ে ‘আহারে বাংলা’-র অনুষ্ঠানে বিক্ষোভ দেখাতে গেছিলেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। গ্রেপ্তারও হলেন। আসলে গ্রেপ্তার হয়ে সংবাদমাধ্যমে ‘নাম’ তোলাটাই ছিল তাঁর মূল উদ্দেশ্য। আর সেই কাজে সুজন সফল। গ্রেপ্তার হয়ে মিডিয়ার ক্যামেরা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিতে পেরেছেন তিনি।
আসলে মিডিয়ার ক্যামেরা থাকলেই তাঁর লাফ-ঝাঁপ বেড়ে যায়। সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা আছে মানে তাঁর অন্য মূর্তি। এমন ‘ক্যামেরা নেশা’-র জন্য সিপিএমের অন্দরেই তাঁকে ফুটেজ চক্রবর্তী হিসাবে ডাকা হয়। তাতে অবশ্য কোনও কিছু যায়-আসে-না সুজনবাবুর। মিডিয়া ডেকে ক্যামেরার সামনে তিনি বাণী দেবেনই। বাড়িতে দোল খেলা হোক কিংবা লোকাল ট্রেনে ভ্রমণ – সুজনের যে কোনও কার্যকলাপে কাকতালীয়ভাবে হাজির হয়ে যায় মিডিয়াও। সিপিএমের অধিকাংশ অনুষ্ঠানে তাঁর ডাক অবধারিত। আয়োজকদের কথায়, সুজনকে অনুষ্ঠানে হাজির করানোর সুবিধা হচ্ছে, মিডিয়া এমনিই এসে যাবে।
এহেন সুজন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পৌঁছে যান নিউটাইন মেলা প্রাঙ্গনে ‘আহারে বাংলা’র অনুষ্ঠানে। দাবি, যখন রাজ্যের মানুষ খেতে পাচ্ছে না, তখন এমন অনুষ্ঠান বন্ধ করতে হবে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, অনুষ্ঠানে আসার পর থেকে চুপচাপই ছিলেন সুজন, যতক্ষণ না ফেসবুক লাইভ করার অনুচরেরা এসে উপস্থিত না হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, বিক্ষোভকারীদের থেকে মিডিয়ার বুম আর ক্যমেরা ছিল বেশী। অভিযোগ, প্রথমে শান্তই ছিলেন। ক্যামেরা দেখে প্রথমেই নিজের চুল ঠিক করে নেন সুজন। তারপর উত্তেজিত হন। আর সেটা এতটাই, যে সামনে পুলিশ দেখে তাঁদের সঙ্গেই ধবস্তাধবস্তি শুরু করেন। এমনকি মিডিয়া যাতে তাঁর বাইট পেতে পারে সেজন্য পুলিশ কর্মীর কলার চেপেই তিনি গাড়ির ওপর ওঠার চেষ্টা করেন। এরপরই বিক্ষোভরত সুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ঘটনার পরেই সুজন চক্রবর্তীর সমর্থনে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। লিখেছেন, ‘সুজনকে অনুসরণ করুন হাজারো সুজন’। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের প্রশ্ন, এতই যখন দরদ, সুজনের সমর্থনে সূর্যকান্ত নিজে গেলেন না কেন?
সিপিএমের অন্দরেও কথা উঠেছে সুজনের আচরণ নিয়ে। সিপিএম কর্মীদের একাংশের কথায়, ঠিক মতো ফুটেজ সাজানো উচিৎ ছিল সুজনের। বিশৃঙ্খলা তৈরি করতেই যে ‘আহারে বাঙলা’-র অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন ‘ফুটেজ চক্রবর্তী’ সেটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।