আসামে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি)-র কোপে নিজভূমে পরবাসী হয়েছিলেন প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষ। তারপর সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে পায়ের তলার মাটি কিছুটা পোক্ত হয়েছিল আসামবাসীর। কিন্তু শীর্ষ আদালতের নির্দেশে এনআরসিতে নতুন করে নাম তোলার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, আবেদনকারীর সংখ্যা খুবই কম। এখনও পর্যন্ত ৪০ লক্ষের মধ্যে মাত্র সাড়ে ৪ লক্ষ মানুষ নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করেছেন। চূড়ান্ত খসড়া তালিকা প্রকাশের আড়াই মাস পর এমনটাই হয়েছে বলে রবিবার জানা গিয়েছে।
ওই আবেদনকারীরা প্রত্যেকেই নিজেদেরকে ভারতীয় নাগরিক বলে দাবি করেছেন। তাঁদের দাবির সমর্থনে নথিও জমা দিয়েছেন তাঁরা। অন্যদিকে, অনুপ্রবেশকারীদের নাম এনআরসিতে রয়েছে, এই মর্মে অভিযোগ দায়ের হওয়া আবেদনপত্রের সংখ্যা ২০০টি। আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত নাম তোলা ও বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলবে বলে জানা গেছে।
নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য কেন এত কম সংখ্যক আবেদন জমা পড়ল, তা নিয়ে দিল্লিতে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ, অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনেওয়াল, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব রাজীব গৌবা, আইবির ডিরেক্টর রাজীব জৈন-সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
গত ৩০ জুলাই এনআরসি নিয়ে চূড়ান্ত খসড়া তালিকা প্রকাশিত হয়। তাতে ৩ কোটি ২৯ লক্ষ আবেদনকারীর মধ্যে ২ কোটি ৯০ লক্ষ মানুষের নাম ছিল। জাতীয় নাগরিক পঞ্জি থেকে প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষের নাম বাদ যায়। যা নিয়ে দেশজুড়ে তুমুল হইচই শুরু হয়। এরপর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন করে আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। আদালত জানায়, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের দেওয়া অন্তত ১০টি নথির মধ্যে যে কোনও একটি দিয়েই আবেদন করা যাবে।
কিন্তু তারপরেও নাম অন্তর্ভুক্তির আবেদন এত কম জমা পড়েছে কেন, তা নিয়ে চিন্তায় বিরোধী দলগুলিও। এর পিছনেও কেন্দ্রের হাত আছে বলেই মনে করছে তারা। এনআরসি নিয়ে যে প্রহসন চলছে গোটা আসাম জুড়ে, তাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে এই বাকি রয়ে যাওয়া প্রায় ৩৬ লক্ষ মানুষ।