এক নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী থাকল বাংলা। এবার মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অঙ্গদানে নতুন নজির গড়ল রাজ্যে। শনিবার সরকারি ক্ষেত্রে প্রথম হার্ট প্রতিস্থাপন হয়েছিল রাজ্য তথা পূর্ব ভারতে। রবিবার এই প্রথম বাংলার কোনও জেলা থেকে অঙ্গ নিয়ে আসা হল কলকাতায়। এবং আনা হল দুর্গাপুর থেকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতাল— দীর্ঘ ১৭১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে। এত দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে অঙ্গ প্রতিস্থাপন গোটা দেশে প্রথম!
শনিবার দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে বাঁকুড়ার মেজিয়ার স্নায়ুর জটিল রোগে আক্রান্ত অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী মধুস্মিতা বায়েনের (১৩) ব্রেনডেথ ঘোষণা করা হয়। মেয়ের ব্রেনডেথ-এর পর তার অঙ্গদান করার ইচ্ছেপ্রকাশ করেন বাবা-মা। দুর্গাপুরের বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মধুস্মিতার অভিভাবকদের ইচ্ছা জানার পরেই প্রস্তুতি শুরু করে। খবর দেওয়া হয় পিজি হাসপাতালে। রবিবার বিকেলে কলকাতা থেকে ১০ জনের একটি দল বেসরকারি হাসপাতালে পৌঁছয়। শুরু হয় অঙ্গ নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অপারেশন (রিট্রিভাল)।
মধুস্মিতার বাবা দিলীপ বায়েন এবং মা অর্চনা বায়েন আদতে আসামের বাসিন্দা। তাঁদের দুই মেয়ে। মধুস্মিতাই বড়। দিলীপ বাবু বলেন, মেয়ের ছোট থেকে মাথা যন্ত্রণা করত। বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু কোথাও চিকিৎসায় সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসি। কিন্তু সেখানেও তার সুস্থ হওয়ার লক্ষণ দেখা যায়নি। অবশেষে ব্রেন ডেথ ঘোষণা করা হয়। তখনই মেয়ের অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমার মেয়ের অঙ্গ কারও উপকারে লাগলেই আমরা শান্তি পাব।
মৃতার মা অর্চনা গায়েন বলেন, মেয়েটা ছোট থেকেই খুব কষ্ট পেত। ভালোভাবে হাঁটাচলা করতে পারত না। যখনই খুব কষ্ট পেত, আমায় জড়িয়ে ধরত। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে ঘুমিয়ে পড়ত। আমায় ছেড়ে থাকতে পারত না। এখন ও দূরে চলে গেলেও, অন্যের মধ্যে বেঁচে থাকবে।
দুর্গাপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতালের অন্যতম প্রশাসনিক কর্তা ডাঃ পার্থ পাল বলেন, মধুস্মিতা মৃগী রোগে (অ্যাডভান্সড স্টেজ অব এপিলেপ্সি) আক্রান্ত ছিল। ব্রেন ডেথ ঘোষণা হওয়ার পরেই বিষয়টি ওর বাবা-মাকে আমরা জানাই। তাঁরা অঙ্গদানে রাজি হতেই প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। রাতে পিজি’র টিমের সদস্য এবং সেখানকার হেপাটোলজি’র অধ্যাপক ডাঃ অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, ওর দেহ থেকে কিডনি, লিভার এবং কর্নিয়া নেওয়ার হয়েছে। বাবা-মায়ের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই।
দুর্গাপুর থেকে পিজি হাসপাতাল পর্যন্ত ১৭১ কিলোমিটার রাস্তায় গ্রিন করিডর করে ওই নাবালিকার অঙ্গ নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এত কম বয়সে ব্রেন ডেথের পর অঙ্গদানের নজিরও এরাজ্যে তেমন নেই বলে চিকিৎসকদের দাবি। মধুস্মিতার কিডনি, লিভার এবং কর্নিয়া অন্যজনের শরীরে স্থাপন করা হবে। লিভার পাবেন ব্যারাকপুরের বাসিন্দা লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত ৪৫ বছরের সঞ্জীব বালা। দুই কিডনি পাবেন দমদমের অভিষেক মিশ্র (২০) এবং নদীয়ার মিঠুন দালাল (২৩)। তবে এত অল্প বয়সের হার্টের গ্রহীতা এখনও পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।