রাফাল নিয়ে আবারও ব্যাকফুটে কেন্দ্রীয় সরকার৷ রাফাল যুদ্ধবিমান চুক্তিপ্রক্রিয়ার খুঁটিনাটি কেন্দ্রকে জানানোর নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের নির্দেশ, আগামী ১০ দিনের মধ্যে সিলবন্ধ খামে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কীভাবে রাফালের চুক্তি প্রক্রিয়া এগিয়েছে, রাফাল কেনার খরচ ও অন্যান্য যাবতীয় তথ্য আদালতের কাছে জমা দিতে হবে৷ আগামী ১৪ নভেম্বর এই মামলার শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে৷
প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছেন৷ সুপ্রিম কোর্টের এই রায় অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে বিজেপি সরকারকে৷ কারণ এতদিন কেন্দ্র রাফাল নিয়ে সেই অর্থে কোনও তথ্যই প্রকাশ্যে আনছিল না৷ এই নিয়ে বিরোধীদের তোপের মুখেও পড়তে হয়েছে তাদের।
সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের বিরোধীতা করে অ্যার্টনি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল জানান, রাফাল যুদ্ধবিমানের কিনতে কত খরচ হয়েছে সেটা গোপনীয় তথ্য৷ এইভাবে শেয়ার করা সম্ভব নয়৷ উত্তরে বেঞ্চ জানান, এই কথা তারা পিটিশনে জানিয়ে জমা দিক৷ প্রধান বিচারপতির সঙ্গে এই বেঞ্চে আরও রয়েছেন বিচারপতি সঞ্জয় কিষেণ কল ও বিচারপতি কে এম জোসেফ। এর আগে ১০ অক্টোবর রাফালের সিদ্ধান্ত কীভাবে নেওয়া হয়েছিল সেই তথ্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জানতে চেয়েছিল শীর্ষ আদালত।
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যশবন্ত সিনহা, অরুণ শৌরি ও আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ সুপ্রিম কোর্টে রাফায়েল নিয়ে নতুন পিটিশন দায়ের করে এই দুর্নীতির তদন্তের ভার সিবিআইয়ের উপর দেওয়ার দাবি জানান৷ পিটিশনে তারা দাবি করেন, ২০০৭ সালে প্রতিরক্ষামন্ত্রক থেকে ১২৬টি রাফায়েল কিনতে চেয়ে টেন্ডার ডাকা হয়েছিল৷
সেখানে বলা হয়েছিল, এর মধ্যে ১০৮টি যুদ্ধবিমান বিদেশি প্রযুক্তির সাহায্যে ভারতে হ্যাল তৈরি করবে৷ বাকি ১৮টি ফ্লাই অ্যাওয়ে কন্ডিশনে বিদেশ থেকে নিয়ে আসা হবে৷ কিন্তু আগের চুক্তি থেকে সরে এসে ভারত ও ফ্রান্স সম্পূর্ণ নতুন একটি চুক্তি করে৷ যেখানে আগের চুক্তি বাতিল করে ৩৬টি যুদ্ধবিমান কেনার কথা বলা হয়৷ আর এবার হ্যালের বদলে এই যুদ্ধবিমান তৈরির বরাত পায় অনিল আম্বানির সংস্থা৷
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের জমানায় ফ্রান্সের সঙ্গে ৬০ হাজার কোটি টাকার রাফাল যুদ্ধ বিমান কেনার চুক্তি করে। কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের দাবি, ৩৬টি রাফাল বিমান কেনার এই চুক্তিতে বিপুল দুর্নীতি করেছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশে এই চুক্তির মাধ্যমে তাঁর ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি অনিল আম্বানী ও তাঁর সংস্থা রিলায়েন্স ডিফেন্সকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগও তোলেন বিরোধীরা।
ফরাসি সংস্থা ড্যাসল্ট থেকে ৩৬ টি রাফাল কেনা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে দুটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল। এর মধ্যে একটি মামলায় দাবি করা হয়, বিমান কিনতে মোট ৫৯ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। সেই আবেদনের শুনানির সময় সুপ্রিম কোর্ট সরকারের কাছে জানতে চেয়েছে, কীভাবে ওই বিমান কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। আগামী ১৪ নভেম্বর রাফাল মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।