কথায় আছে ‘মাছের রাজা ইলিশ’। আজও পাতে ভাপা ইলিশ পড়লে এক লহমায় মুছে যায় ঘটি-বাঙালের চিরকালীন দ্বন্দ। বাঙালি মেতে ওঠে ইলিশ আস্বাদনে। কোলাঘাট, ডায়মন্ডহারবার, দিঘা, রায়দিঘির পর এবার । ইলিশের সঙ্গে সমার্থক হতে চলেছে ফরাক্কা। ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা ফরাক্কা ব্যারেজে ইলিশ সংরক্ষণে উদ্যোগী হয়েছে। সূত্র থেকে পাওয়া খবর, সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউকে (সিআইএফআরআই) এই প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সদ্য গৃহীত এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্যই হল, ফরাক্কায় গঙ্গার মূল চ্যানেলে ইলিশ যেখানে ডিম পাড়ে, সেই সব জায়গাকে সংরক্ষণ করা। সেই লক্ষ্যে প্রথমেই নিয়ন্ত্রণ করা হবে গঙ্গার উজানে সমস্ত মৎস্য শিকারীদের। উদ্দেশ্য, যাতে খোকা ইলিশ না ধরা হয়। এর ফলে ফরাক্কায় এক কেজির বেশি ওজনের ও সুস্বাদু ইলিশ ভাল সংখ্যায় মিলবে বলে আশা করা হচ্ছে। আসলে উজানের ইলিশই স্বাদে সেরা। যা এখন বিলুপ্তপ্রায়।
রাজ্যে কোলাঘাটের ইলিশকে এখনও উৎকৃষ্টতম বলে গণ্য করা হয়। বহু মৎস্য বিক্রেতা পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরির মতো এলাকায় ধরা পড়া ইলিশকেও কোলাঘাটের বলে চালান। অথচ কোলাঘাটে ইলিশ ধরা পড়ে খুবই কম। দূষণ ও অন্যান্য কারণে কোলাঘাটের ইলিশ কমে গিয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের মত।
ইতিমধ্যেই সিআইএফআরআই বেশ কয়েকটি সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে, ফরাক্কার পর থেকে গঙ্গার মূল ধারায় ইলিশের প্রজনন এখন প্রায় বন্ধ। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, সমুদ্র থেকে ভাগীরথীতে ঢুকে ফরাক্কা টপকে গঙ্গার উজানে রুপোলি শস্য আর ঢুকতে পারছে না।
অথচ ফরাক্কা ব্যারেজ চালু হওয়ার আগে পর্যন্ত এলাহাবাদের কাছে এক মরসুমে গঙ্গায় ৪৮ টন পর্যন্ত ইলিশ ধরা পড়েছে। ২০০৮ সালে সেটাই দাঁড়ায় ০.৪ টনে। এর প্রধান কারণ হিসেবে সিআইএফআরআইয়ের গবেষকেরা ফরাক্কা ব্যারেজকেই তুলে ধরেছেন। সেই সঙ্গে ব্যাপক পলি, দূষণ ও এবং নির্বিচারে খোকা ইলিশ শিকারকেও ফরাক্কায় ইলিশের পরিমাণ কমার পিছনে দায়ি করা হয়েছে।
সিআইএফআরআইয়ের অধিকর্তা বসন্তকুমার দাসের কথায়, ‘ফরাক্কায় ইলিশ যে সব জায়গায় ডিম পাড়ে, সেই এলাকাগুলিকে সংরক্ষণ করে ইলিশ লালন-পালন করে গঙ্গায় ইলিশের সংখ্যা বাড়ানো হবে। এক বছর ধরে এই প্রকল্প রূপায়ণ করা হবে। দেওয়ালির পরেই কাজ শুরু হবে।’
সমুদ্র থেকে সরাসরি ধরা ইলিশ বাঙালির খুব একটা পছন্দ নয়। যে কারণে দিঘার ইলিশ সেই কৌলীন্য অর্জন করতে পারেনি। সমুদ্রের নোনা জল থেকে ডিম পাড়তে নদীর মিষ্টি জলে ঢুকলে তবেই ইলিশের স্বাদ খোলে বলে সমঝদাররা মনে করেন। যে কারণে স্বাদেগন্ধে অতুলনীয় পদ্মার ইলিশ। তাই গঙ্গায় এবার ইলিশ সংরক্ষণের জন্য এত তোড়জোর। ফরাক্কাই হতে চলেছে রুপোলি শস্যের নতুন ঠিকানা।